Cross-Column

Thursday, November 16, 2017

চার্লি চ্যাপলিন

সিনেমা জগতের একটি সাড়া জাগানো নাম চার্লি চ্যাপলিন!

সিনেমার কথা এলে সবার আগে যার কথা মনে পড়ে তার নাম চ্যাপলিন-"চার্লি চ্যাপলিন",তিনি ছিলেন একাধারে নায়ক ও পরিচালক। এতো বড়ো শিল্পীর অভিনয় দেখা জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। চ্যাপলিন জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে।জীবিত অবস্থাতেই পেয়েছেন কিংবদন্তী নায়কের মতো খ্যাতি।নির্বাক যুগ থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত একটানা অভিনয় করে গেছেন এই আশ্চর্য অভিনেতা। ২৫ বছর বয়স থেকে যে বিপুল যশগৌরবের অধিকারী হয়েছিলেন,পৃথিবীতে এত কম বয়সে এত সম্মান বোধ হয় কখনো জোটে নি। ছোট্ট খাটো সেই লোকটি ,আগোছালো সেই মানুষটি -ভাগ্য আর মানুষের কাছে বার বার যিনি অপমানিত হয়েছেন,ছবির পর্দায় যখন ভেসে ওঠে তার চেহারা তখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। 
ছেলেবেলায় চার্লি ছিলেন খুবই গরিব। রাস্তায় গান গেয়ে আর নেচে পয়সা রোজগার করতে হতো তাদের। কিন্তু চলচ্চিত্রের গোড়ার দিকে তিনি চলে আসেন আমেরিকায়। এই আমেরিকা হচ্ছে চলচ্চিত্রের পীঠস্থান। আগে যেটা ছিল নিউইয়র্কে পরে উদ্যোক্তারা আস্তে আস্তে চলে আসেন হলিউডে।
চিত্র নির্মাতা কর্নেল সেলিগ।১৯০৮ সালে হলিউড এ এসে তাঁবু ফেললেন। ১৯০৯ সালে এলেন বিলি আন্ডারসন।১৯১০ সালে এলেন গ্রিফিথ। যাই হোক চার্লি প্রথম এ যে ফ্লিম এ অভিনয় করেন তার নাম মেকিং  এ লিভিং।ছবিটি ছিল এক রিলের। প্রদর্শনের মেয়াদ ১০ মিনিট। চার্লি কে দেওয়া হয়েছিল এক জোচ্চোরের পার্ট। নিন্দা,প্রশংসা সব জুটেছিল তার। তারপর নানা ইতিহাস ,নানা চমক ,নানান ঘটনা। 
যে চমক উপন্যাসের থেকে আকর্ষণীয়। চার্লি নিজে পরিচালক হলেন ,অভিনেতা হলেন,ও অভিনেতা তৈরী ও করলেন। এক এক করে চার্লি তুললেন দি ফ্লোর ওয়ার্কার ,দি ভ্যাগাবন্ড ,দি ফায়ারম্যান,দি কিড , দি কাউন্ট ,তুললেন  দি  পনশপ ,বিহাইন্ড দি স্ক্রিন ,দি ইমিগ্রেশন ,তুললেন দি কিওর,দি এডভেঞ্চার।
চার্লির প্রথম মহৎ ছবি বলে যেটি পরিচিত ,সেটির নাম 'এ ডগস লাইফ ',এরমধ্যে মান সম্মান অর্থ প্রতিপত্তি সবই এসেছে চার্লির। তারপর কত ছবিই না তুললেন তিনি -গোল্ড রাশ ,সিটিলাইট,মর্ডান টাইমস ,মসিয়ে ভার্দু। হিটলারকে বিদ্রুপ করে তার ছবি -ডি গ্রেট ডিক্টেটর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই তৈরি হয়েছিল। আশ্চর্য    নকল করেছিলেন তিনি হিটলার কে এই ছবিতে আর আশ্চর্য তার ধারণার মতো এই ভাবেই হিটলারের পতন ঘটলো।লাইম লাইট চার্লির শেষ দিকের তোলা ছবি। এটিতে তিনি অন্য  চেহারায় নেমেছেন।অভিনয় এ চার্লি আমাদের হাসিয়েছে যেমন কাঁদিয়েছে ও তেমনি। তার অভিনয় দেখতে হাসতে হাসতে ভাবতে হয় আর ভাবতে ভাবতে হাসতে হয়। চার্লি কে দেখে অনেকেই পুরো মাপের হাসি এর ছবি তুলতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু এমনটা সফল হতে পারেনি। অবশ্য লয়েড আর বাস্টার কীটন লরেল হার্ডি জুটি অনেকটা সাফল্য লাভ করতে পেরেছিলেন।আর একজন উল্লেখযোগ্য কৌতুক অভিনেতার নাম না বললেই নয়। ইনি হলেন ম্যাক সেনেট।
৮০ বছর বয়েস  এ চার্লি ছিলেন সমান কর্মক্ষম। জন্মেছিলেন চলচ্চিত্রের শিল্পের জন্মকালে ই। ছায়াছবি এর সাথে তার যোগ ছিল নাড়ির।তাই চলচ্চিত্রের কথা এলেই চার্লি চ্যাপলিন এর কথা সবার আগে মনে আসে। তিনি শুধু অভিনেতা ,পরিচালক ছিলেন না ,লেখক হিসেবে তার খ্যাতি আছে ,নকশার ও স্রষ্ঠা তিনি,অপূর্ব সব নাটক লিখেছেন। সুরোস্রষ্ঠা হিসেবে অসামান্য তিনি। 
শিল্পী হিসেবে চার্লি চ্যাপলিন নোয়েল কাওয়ার্ড কি আইভোর নভেল এর চেয়ে অনেক বড়ো। চার্লি এর সমসাময়িক যে কয়জন প্রতিভাবান শিল্পী কে আমরা চলচ্চিত্রের সাহায্য নিতে দেখেছি তাদের  সকলের চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বড় তিনি। যে ভবঘুরে চরিত্রটির তিনি স্রষ্ঠা,তার মৃত্যু হবে না কোনোদিন। বছরের পর বছর কেটে যাবে ,যুগ এর পর যুগ কিন্তু অক্ষয় অমর হয়ে থাকবে সেই বিরাট বুট জোড়া ,সেই গোল টুপি আর সেই বাঁকানো ছড়ি। চার্লি চ্যাপলিন অমর হয়ে আছেন এই ৩ টি  প্রতীক চিহ্নের মধ্যে।   

Sunday, September 10, 2017

Fairy Tale

রূপকথা কি ,রূপকথার জনক ও রূপকথার একটি গল্প 
রূপকথা বা উপকথা সারা পৃথিবীর সম্পদ। মানুষ যখন ছিল বুনো,অসভ্য,তখন ও সারা দিনের শেষে গুহায় বসে মশালের আলোয় দলপতি শুনিয়েছে গল্প। তার কৌতূহলী শ্রোতাদের চোখের জিজ্ঞাসা কখনো ও ফুরোয় না। তাই আরো ও কত যুগ বাদে সন্ধ্যেবেলা মা ঠাকুমা দিদিমার কাছে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনেছে ছেলে মেয়েরা।সাধারণত দেখা যায় এই সব রূপকথার কোনো ও নির্দিষ্ট লেখক নেই। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে এই সব গল্প কথা।আর দেখা যায় আমাদের সুপরিচিত এক একটি রূপকথার সাথে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রূপকথার আশ্চর্য মিল। 
রূপকথা মুখে মুখে তৈরি হলেও কখনো  কখনো একজন বিশেষ রচয়িতা তাকে সারা দেশের সম্পদ করে তুলতে পারেন। এই রকমই হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন আর ডেনমার্ক এক হয়ে গেছে।ডেনমার্কের ওডেন্স নগরে ১৮০৫ সালে জন্মেছিলেন হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন।উপন্যাস,নাটক অনেক লিখেছিলেন তিনি ,কিন্তু তাঁকে অমর করে রাখলো তার রূপকথাগুলি। রাজা রানী ,পশুপাখি ,গাছপালা ,পুতুল -এমনকি সামান্য সূচ নিয়েও তার গল্প। তাঁর বিখ্যাত গল্প ''তুষাররানী'' পড়ে ডিউক আর ওল্ডেনবার্গ তাকে নিজের হাতের হীরের আংটি খুলে দিয়েছিলেন। জার্মানী এর রাজা তাকে উপাধি দিয়েছিলেন যার ইংরেজি হলো 'অর্ডার অব ডি রেড ঈগল', পৃথিবীর নানা ভাষায় এন্ডারসন এর গল্প গুলি অনুবাদ হয়েছে।রূপকথা লেখার জন্য তাকে ''রূপকথার জাদুকর''নাম এ অবিহিত করা হয়। এন্ডারসনের রূপকথা, যার সংখ্যা ৩৩৮১ এর কম নয়, ১২৫ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত রূপকথাসমূহ হল "দি এমপেরর্স নিউ ক্লদস", "দ্য লিটল মারমেইড", "দ্য নাইটিংগেল", "দ্য স্নো কুইন", "দি অাগলি ডাকলিং", "থাম্বেলিনা",তারই একটি গল্প আজ শোনাবো।

টিনের সেপাই
একজন মিস্ত্রি একটি টিনের পাত কেটে তৈরি করলো ২৫ টি টিনের সেপাই।তাদের গায়ে লাল নীল পোশাক হলো। কাঁধে বন্দুক। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেপাইরা। কিন্তু একটু মুশকিল হলো। সব শেষে টিন কম পড়ে গেলো,তাই মিস্তিরির শেষ পুতুলটিকে করতে হলো খোঁড়া। বাকি ২৪ জনের পাশে এক পায়ে সে রইলো দাঁড়িয়ে। সবগুলো পুতুল একটা বাক্সে ভরে মিস্ত্রি দিলো বাজারে পাঠিয়ে বিক্রির জণ্য।
সেই বাক্স শুদ্ধ কিনে নিলেন একজন লোক একটি ছোট্ট ছেলের জন্মদিন এ উপহার দেবেন বলে। 
ছেলেটি তো ভারী খুশি। তার ছিল এক মস্ত টেবিল। সেখানে সে সেপাই গুলোকে সাজিয়ে রাখলো। আরো অনেক খেলনা তার। একটা পিচবোর্ড এর সাজানো গোছানো বাড়ি,বাড়ির সামনে গাছ,পুকুর ,হাঁস।আর বাড়ির ফটকের সামনে রেশমি পোশাক পরা একটি মেয়ে এক পা তুলে নাচছে।হটাৎ মনে হয় তার ও এক পা বুঝি খোঁড়া। খোঁড়া সেপাই তাকে দেখে ভাবলো বেশ তো !মেয়েটিও খোঁড়া ,আমিও খোঁড়া। ওকেই আমি বিয়ে করবো। খোঁড়ার বৌ ও খোঁড়াই হবে। কিন্তু মেয়েটি বড়ো লোক। কি করে ওর সাথে আলাপ করি ?
অনেক রাতে যখন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন পুতুলদের জাগার সময়। ওরা তখন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে ,নাচগান করে। আর ঠিক ভোর হবার আগেই চলে যায় যে যার জায়গায়।
একপাওয়ালা সেপাই ভাবছে মেয়ে টি যখন নাচবে তখনি ওর সাথে আলাপ করবে। এই ভেবে যেই সে এগিয়েছে অমনি পেতলের বামুন পুতুলটা তাকে তেড়ে এলো। 
খবরদার!ওর সাথে ভাব করবে না। 
খোঁড়া সেপাই চুপ করে গেলো। 
বড়োলোকের মেয়ে এর সাথে তার আর আলাপ করা হলো না। অন্য পুতুলরা ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু সেপাই জেগে জেগে পাহারা দিলো সমস্ত রাত। 
সকালবেলা খেলতে খেলতে একটি ছেলে সেপাই টিকে বসিয়ে দিলো জানালার ধারে।একটু বাদে এক ঝলক হাওয়া এসে ওকে এক ধাক্কায় ফেলে দিলো একেবারে রাস্তায়। বাড়ির সবাই তাকে কত খুঁজলো,কিন্তু পেলো না। 
নিজে সেপাই হয়ে কি করে ই  বা চিৎকার করে ডাকে ?তাই খোঁড়া পায়ে কাধে বন্দুক নিয়ে সোজা হয়েই দাঁড়িয়ে রইলো সে। ফুটপাথের পাথরের ফাকে এই ভাবে সে আটকে রইলো। 
তারপর নামলো তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি থামতেই পথের দুধারে জল দাঁড়িয়ে গেলো। পথ দিয়ে যেতে যেতে দুটি ছেলে তাকে দেখতে পেলো। কি আশ্চর্য !একটা টিনের সেপাই !
তারা একটা কাগজের নৌকো তৈরি করে তাতে সেপাই কে বসিয়ে তাকে জলে ভাসিয়ে দিলো। জলের টানে ভেসে চললো নৌকো। একটু পরে সে এসে ঢুকলো নালার ওপর এক খিলানের নিচে। সেখানে দারুন অন্ধকার। কিন্তু সেপাই বন্দুক তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একটা ইঁদুর এসে তার পথ আটকাতে চাইলো।সেপাই এর কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে ইঁদুরটা কটাস করে কামড়ে দিলো তাকে। 
জলের টানে নৌকো আবার এগিয়ে চললো। ড্রেনের কাছে ঘুরে ঘুরে জল চলেছে। এবার নৌকা গেলো ডুবে। নৌকার কাগজ খুলে কোথায় তলিয়ে গেলো। খোঁড়া সেপাই সটান গিয়ে পড়লো নদীর জলে। সেখানে আর এক কান্ড !একটা প্রকান্ড মাছ তাকে গপ করে গিলে ফেললো। মাছের পেটে ভয়ানক অন্ধকার। কিন্তু টিনের সেপাই সেখানেও বন্দুক উঁচিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে রইলো। 
পরদিন ছেলেরা মাছটি ধরে নিয়ে এলো বাজারে। সেই মাছ কিনে নিয়ে গেলো একটি ছোট ছেলের বাবা। বাড়ির ঝি যেই মাছ টি কেটেছে অমনি তার পেটের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো একটা খোঁড়া টিনের সেপাই পুতুল। 
ছেলেটি দৌড়ে এলো -'ও মা আমার সেই খোঁড়া টিনের সেপাইটা!-সেই  যে জানালা দিয়ে পড়ে গিয়ে ছিল। 
খোঁড়া সেপাই আবার ফিরে গেলো টেবিলের উপর ২৪ জন সৈনিক এর পাশে।
একদিন শীতকালে ঘরে আগুন জ্বলছিল। ছোট ছেলেটি হটাৎ কি খেয়ালে সেপাই কে ফেলে দিলো আগুনে। নষ্ট হয়ে গেলো তার নীল লাল পোশাক। তবুও সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হটাৎ একটা দমকা হাওয়াই সেই রেশমি পোশাক পরা কাগজের মেয়েটি এসে পড়লো আগুনে -ঠিক খোঁড়া সেপাই তার পাশে।কাগজ পুড়ে ছাই হলো আর টিন গেলো গলে। 
বাড়ির ঝি পরদিন এসে সেই কাগজের ছাই আর টিনের টুকরো ফেলে দিলো আবর্জনার মধ্যে।

Tuesday, August 15, 2017

Mummy of Kolkata

কলকাতার জাদুঘরে রাখা মমিটি কার ?

কোনো লেখার যেমন কৃমি মাংস খুঁটে সমালোচকেরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তেমনি পৃথিবীর নানান মমিকে নিয়ে এই শতকের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মাতামাতি শুরু করে দিয়েছিলো। উদ্দেশ্য মমি মানুষগুলি কি রোগে আক্রান্ত হয়ে বা কেমন করে মারা গিয়েছিলো,ওদের খাদ্য কি ছিল -এই সব জানা। 
আর এই মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ জানতেই কলকাতার জাদুঘরের মমিটির এক্স-রে করা হয় ১৯৮০ সালের ৯ অক্টোবর তারিখে।ভারতে মমির এক্স-রে সেই প্রথম। তারপর একে একে জয়পুর ,বরোদা,বেঙ্গালুরু,লাখনৌ ,হায়দ্রাবাদ শহরের মিউজিয়ামগুলোয় সংরক্ষিত মমিদের ও রঞ্জনরশ্মির সামনে দাঁড়াতে হয়। আর মমির এই  রেডিওলজিক্যাল টেস্ট এর পুরোধা ছিলেন ডঃ সুভাষ বসু।
নির্দিষ্ট দিনে মমিকে তার কাচপাত্র থেকে একটুও না সরিয়ে পোর্টেবল এক্স -রে মেশিন এর নিচে রাখা হলো। দিন ২০ বাদে মমির এক্স -রে রিপোর্ট বেরুলো।ডঃ বসুর রিপোর্ট বলছে -'এই নরকঙ্কালটি এক পূর্ণবয়স্ক সুঠাম 
পুরুষমানুষের। নৃতাত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে কঙ্কালটিতে নেগ্রোইড বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। মমির মানুষটির বয়স ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে। নিচের চোয়ালের মাড়ি অংশ কিছুটা বসে গিয়েছে।তবে দাঁত গুলি অক্ষত আছে। মাথার খুলি অবিকৃত কিন্তু বুক ,পিঠ,পাঁজর ও কন্ঠায় বেশ ক্ষতের চিহ্ন। 
ফরেনসিক দিক থেকে দেখলে মনে হয় ওকে হত্যা করা হয়েছে পিটিয়ে। ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয় নি। মেরুদণ্ডের হাড়ে স্পন্ডিলাইটিস এর লক্ষণ ধরা পড়েছে। হাঁটুতে ছিল বাত। আর এই রোগটি তাকে পঙ্গু করে দিচ্ছিলো। রোগটি খুব সচরাচর দেখা যায় না। ভারতের মাত্র ৬ টি মমির মধ্যে মাত্র ১ টিতে অর্থাৎ কলকাতার জাদুঘরের মমির শরীরে ছিল সেই রোগ যার পোশাকি নাম ''আলকাপটনুরিয়া।''এরফলে মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধিতে ক্যালসিয়াম এর মাত্রা বেড়ে যায়। আর তাছাড়া শরীরের গ্যাটে  গ্যাটে অস্টিওআর্থারিটিস্ট এর আগাম লক্ষণ গুলো ধরা পড়ে,
কলকাতার মমির এক্স-রে ভারতে সর্বপ্রথম ঘটনা হলেও সারাবিশ্বে এ ধরণের ব্যাপার ঘটেছিলো ১৮৯৬ সালে। থ্র্যাস্টন হল্যান্ড সে বছর লিভারপুল এ একটি মমি করা পাখীর রেডিওগ্রাফ করেন। ২৬১ টি প্লেট হয়েছিল পাখীটির। এর পরের বছর স্যার ফিল্ডার্স পেট্ট্রি প্রথম মানুষের মমির এক্স -রে করেন।
( শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী এর ''মমি রহস্য'' থেকে সংগৃহীত)

Thursday, August 10, 2017

Lac De Gafsa

লেক ডি গাফসা: মরুভূমির বুকে হঠাৎ জন্ম নেয়া জলাশয়


আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা। সেই মরুভূমির পঁয়তাল্লিশ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে আফ্রিকার উত্তরের একটি দেশ তিউনিসিয়া। সাহারা মরুভূমির শুষ্ক আবহাওয়ার প্রকোপ রয়েছে দেশটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে। তিউনিসিয়ার একটি খুব পরিচিত শহর গাফসা। উত্তর আফ্রিকার রাসায়নিক রপ্তানিকারক হিসেবে দেশটির বেশ খ্যাতি রয়েছে। এই শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির ধূসর প্রান্তরে ঘটে গেছে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। কেউ বলে অলৌকিক, কেউ বলে অতিপ্রাকৃতিক, কারও মতে ভূগোলের রকমফের। যে যা-ই বলুক না কেন, এর উৎপত্তি কিন্তু আজও অজানা।
মরুভূমির মাঝেই গড়ে উঠেছে কিছু বিচ্ছিন্ন গ্রাম। গ্রীষ্মের দিনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে গরম অনুভূত হয় সেসব এলাকায়। গরমে আর বিশুদ্ধ পানির হাহাকারে খুব কষ্টে এখানকার মানুষের দিন কাটে। তাপের ভয়াবহতায় এক ফোঁটা পানিও যেন এনে দেয় অনেক প্রশান্তি।
গ্রামে তেমন চাষবাস নেই বললেই চলে। ঘরে ঘরে হয় মেষ বা ভেড়ার চাষ। ২০১৪ সালের জুলাই মাসের দিককার ঘটনা, একদিন দুপুরবেলা কয়েকজন মেষপালক বের হয় কিছু মেষ শাবক নিয়ে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু দলের একজন হঠাৎ চিৎকার করে ওঠাতে সকলের ভাবোদয় ঘটল। কী ব্যাপার দেখতে গিয়ে বাকি ক’জনেরও চক্ষু চড়কগাছ। এ কী দেখছে! নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তারা। ঠিক আগের দিনও একই সময় তারা এই স্থানে অনেকটা সময় পার করে গেছে। এমন কিছু তো চোখে পড়েনি! অনেক বছর ধরে তারা এই অঞ্চলে বসবাস করছে। এমন কিছুতো কখনো ছিল না এখানে। তারা সকলেই অবাক হয়ে নিজেদের মাঝে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। কারণ ধূসর মরুভূমির এক নির্দিষ্ট প্রান্তর জুড়ে রাতারাতি গজিয়ে গেছে পানিতে পরিপূ্র্ণ একটি লেক! যে লেকের অস্তিত্ব তারা আগের দিন পর্যন্ত জানতো না। যে জায়গায় তারা লেক দেখছে সেখানে ছিল উঁচু উঁচু পাহাড়ের বেষ্টনী। এমন অবাক কাণ্ড দেখে কার না চোখ কপালে ওঠে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে চারিদিকে খবর পৌঁছে গেল। পানির নাম শুনেই যেন সকলেই তড়িঘড়ি করে ছুটে দেখতে আসে সেই লেকটি। আর আসবেই না বা কেন? এমন অলৌকিক ঘটনা নিজের চোখে না দেখে তো আর বিশ্বাস করা যায় না। সকলের চোখেই বিস্ময়ের অভিব্যক্তি। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সকলে উপস্থিত। সকলের খুব পরিচিত এই জায়গা। রাতারাতি গজিয়ে ওঠা এই লেককে অনেকে ভৌতিক কর্মকাণ্ড ভেবে দূরে সরে যায়। আবার কারো মতে এ তো সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। এমন ধূসর মরুভূমিতে গ্রামের লোকের কষ্টের কথা ভেবেই না এই লেকের সৃষ্টি। অনেকেই তাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে মনের আনন্দে ঝাপিয়ে পড়তে থাকে থৈ থৈ পানির মধ্যে। মনের সব সন্দেহ দূরে ঠেলে দিয়ে যেন অপার আনন্দে ভেসে যেতে থাকে চারিদিক। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
লেকের চারপাশ ঘিরে রয়েছে অসংখ্য পাথরের পাহাড়। অনেকেই তাই লেকের গভীরতা আন্দাজ করে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিচ্ছে স্কুবা ডাইভ। গ্রামবাসীরা যেন হঠাৎ ঈদের চাঁদ হাতে পাওয়ার আনন্দে মেতে উঠে। হাজারও মুখে তখন আনন্দের প্রতিধ্বনি। পরবর্তীতে এটি ‘লেক ডি গাফসা’ অথবা ‘গাফসা বিচ’ নামে পরিচিতি পায়।
খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে দ্রুত বেগে। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে লোক আসে এবং স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নেয়। তেমনি এক কর্মরত তিউনিসিয়ান সাংবাদিক লাখদার সৌদ ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে জানান, স্থানীয়দের অনেকেই একে অলৌকিক বলে থাকলেও কেউ কেউ একে অভিশাপ রূপেই দেখছে। প্রথম কিছুদিন পানি পরিষ্কার থাকলেও ধীরে ধীরে এতে শ্যাওলা জন্মে পানি ময়লা হয়ে যাচ্ছে, যা আপাতদৃষ্টিতে অপরিবর্তনীয়। এর ফলে কিছুটা ভয়েরও সৃষ্টি হয়েছে।
মেহদী বিলাল নামে স্থানীয় আরেকজনের সাক্ষাৎকারে জানা যায় যে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি বাড়ি ফিরে আসছিলেন। অনেকটা সময় বিরতিহীন হাঁটার ফলে মরুভূমির বুকে বিশাল লেক দেখে তার মনে হয়েছিল, তিনি বুঝি মরীচিকা দেখছেন। প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি তিনি, কেননা বিয়েতে যাওয়ার দিনও তিনি একই রাস্তা দিয়ে গেছেন। তখন এমন কিছু তার চোখে পড়েনি। তার ধারণা, এটি বিজ্ঞানের বাইরে অলৌকিক কিছু।
খবর শুনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে তদন্তে আসে। ঘটনাস্থলের চারপাশ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও তেমন কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না তারা। তবে তারা সন্দেহ পোষণ করে যে, এই পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয়তা থাকতে পারে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই স্থানীয়দের সেই পানিতে গোসল না করার জন্য বার বার সতর্ক করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় আঠারো মিটার গভীর এবং এক হেক্টর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এই লেকের অবস্থান। স্থানীয় ভূতত্ত্ববিদদের মতে, ভূকম্পনের ফলে পাহাড়ের পাথর সরে গিয়ে এমন পানির প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। আবার অনেকের মতে, গভীর খাদে বৃষ্টির পানি জমেও এই হ্রদের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কারো মতবাদের পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ নেই। সবই অনুমান নির্ভর যুক্তি।
১৮৮৬ সালে তিউনিসিয়ার দক্ষিণাংশে ফসফেট (ফসফরাসজনিত অম্লীয় লবণ বিশেষ) আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে গাফসা দেশটির খনিজ ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তিউনিসিয়া বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ফসফেট রপ্তানিকারী দেশ। স্থানীয় এক পত্রিকা এই তথ্যের সূত্র ধরে উল্লেখ করে যে, স্থানীয় এই অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ফসফেটের খনি। বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে লেকের পানি। তাই এই পানি মোটেই নিরাপদ নয়।
প্রথম কিছুদিন পানি বেশ পরিষ্কার থাকলেও খুব দ্রুত তাতে শ্যাওলা জন্মে পানির রং ধূসর সবুজ বর্ণের করে ফেলে। তাই এই পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে আবার প্রশ্ন জাগে। লেক উদঘাটিত হওয়ার দু’সপ্তাহ পরে গাফসার ‘অফিসিয়াল ফর পাবলিক সেফটি’ জনগণকে লেকের পানিতে গোসল না করার জন্য সতর্ক করে দেয়। তাদের মতে, এই লেকে গোসল করা বেশ বিপদজনক। কিন্তু খুব কম সংখ্যক লোকই এই সতর্কতার কথা কানে তোলে। অসংখ্য মানুষ আজও এই লেকে আসে এবং গোসল করে। দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ ভিড় করে প্রকৃতির এই অপার বিস্ময় দেখার জন্য, যার উৎসের কিনারা আজও সকলের অজানা। এখনও পর্যন্ত এই লেকের পানি প্রসঙ্গে তেমন কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। এমনই এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার অবতারণা করতে গিয়েই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ কবিতায় উচ্চারণ করেছিলেন,
মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে॥
তুমি আছ, বিশ্বনাথ, অসীম রহস্যমাঝে
নীরবে একাকী আপন মহিমানিলয়ে॥

Wednesday, August 9, 2017

The Desert

নানাদেশের মরুভূমি 


দেশবিদেশের বহু জায়গায় আমরা বেড়াতে যাই। কিন্তু ক'জন শখ করে মুরুভুমিতে বেড়াতে যাই ?-তা বোধহয় গুনে বলা যাবে। বইয়ে লেখা মরুভূমির বৃত্তান্ত পড়ে আমরা রোমাঞ্চিত হই,মরুভূমির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি ,সেইসাথে অজানা বিপদের ভয়ে আতঙ্কিতও হই। তাই মরুভূমির কাছাকাছি গেলেও অধিকাংশ সময়ে তার ভিতরে কি আছে তা দেখার চেষ্টা আমরা করি না। অথচ এর ভিতরে লুকিয়ে আছে কত বিস্ময়। সেইসব বিষয় নিয়েই আজকের এই পোস্ট ''নানাদেশের মরুভূমি।''
মরুভূমি হলো বালির সমুদ্র। এই সমুদ্রে কোনো ঢেউ নেই। চারিদিকে শুধু বালি,বালি আর বালি।দিগন্ত বিস্তৃত এই বালির সমুদ্র দেখে মনে হয় যেন এর কোনো সীমানা নেই। যদিও তা ঠিক নয়। কোনোও মরুভূমি আকারহীন নয়।মরুভূমি যতই বিশাল হোক প্রত্যেক মরুভূমির একটা সীমারেখা আছে। যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো 'সাহারা' মরুভূমিও উত্তর ,পূর্ব ও পশ্চিমে সমুদ্র এবং দক্ষিণে তৃণভূমি দিয়ে সীমানা নির্দিষ্ট করা আছে। জলহীন এই সমুদ্রে ছিটেফোঁটাও বৃষ্টি হয় না। দিনেরবেলা সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপে শুধু ঝলসানো বালির দেখা পাওয়া যায়। এখানে দিনে যেমন প্রচন্ড গরম ,রাতে তেমনই ঠান্ডা। যখন শুরু হয় ''আঁধি''অর্থাৎ বালির ঝড় ,তখন নিস্তব্ধ মরুভূমির রূপটাই পাল্টে যায়।
পৃথিবীর যতগুলো মরুভূমি আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো হলো "সাহারা'' মরুভূমি। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে এর অবস্থান।সাড়ে ৩০০০ মাইল লম্বা এই মরুভূমির আয়তন প্রায় ৩৫00000 বর্গমাইল। অর্থাৎ ৫০ টি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সমান। বিস্তীর্ণ বালুকারাশির মধ্যে মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাথুরে পাহাড়। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির উচ্চতা ১১০০০ ফুট। এর একেবারে ওপরের অংশ তুষারে ঢাকা। 
আফ্রিকার দক্ষিণ অংশএ আরোও একটি মরুভূমি আছে। এর নাম ''কালাহারি'' মরুভূমি। সাহারার তুলনায় খুবই ছোট। মাত্র আড়াই লক্ষ বর্গমাইল এর আয়তন।এই মরুভূমিকে ঘিরে আছে এক বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। 
দক্ষিণ আফ্রিকার 'কালাহারি' মরুভূমির পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে আছে 'নামিব' মরুভূমি। এই মরুভূমির চরিত্র সাহারা মরুভূমির মতো নয়। এই মরুভুমিটি প্রায় সারাবছরই ধুলো মেশানো কুয়াশায় ঢেকে থাকে। এই ধরণের আর একটি মরুভূমি দক্ষিণ আমেরিকায় আছে। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই মরুভূমিটির নাম ''আটাকামা।''বিশেষজ্ঞদের মতে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে শুকনো মরুভূমি। এখানে সারাবছর বৃষ্টির পরিমান আধ ইঞ্চি এর ও  কম। এখানে যেসব গাছপালা বা প্রাণী  দেখতে পাওয়া যায় তারা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জল এই কুয়াশা থেকে সংগ্রহ করে নেয়।
দক্ষিণ আমেরিকার আর একটি মরুভূমির নাম 'পাটাগোনিয়া।' প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গমাইল আয়তনের এই মরুভুমিটির অবস্থান আজেন্টিনায়।
রকি পর্বতমালার পূর্বদিকে একটি মরুভূমি আছে। এই মরুভূমিতে শুকনো বালি ,তৃণভূমি ,পাহাড়পর্বত  ও গিরিখাত মিলেমিশে একসংগে আছে। প্রায় ৫০০০০০ বর্গমাইল বিস্তৃত এই মরুভুমিটি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এর অন্তর্গত।
 পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি আছে অস্ট্রেলিয়ায়। এর আয়তন প্রায় ১৩০০০০০ বর্গমাইল। অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশ এই মরুভূমি কবলিত অঞ্চল। এই মরুভূমি শুধু শুকনো বালিতে ভরা নয় ,মাঝে মাঝে আছে বিস্তীর্ণ তীর্ণভূমি। এইসব তৃণক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ ভেড়া ও গবাদি  পশু বিচরণ করে।
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মরুভুমিটি আছে ইরানে। মাত্র দেড় লক্ষ বর্গমাইল এর আয়তন। কিন্তু মজার কথা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু  বালিয়াড়িটি এখানেই আছে। শুধু কি তাই এখানকার বালিয়াড়ির সংখ্যাও অনেক। 
তুর্কিস্থানের পূর্বদিকে আছে দুটি মরুভূমি -'তাকনা মাকান ও গোবি সিংকিয়াং'।মঙ্গোলিয়ার প্রায় ৪০০০০০ বর্গমাইল এলাকা এই মরুভূমি গ্রাস করেছে। এই মরুভূমি দুটিতে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়না। গোবি মরুভূমি মালভূমি আকারের দেখতে। এখানকার বায়ুতে যে সামান্য পরিমানে জলীয়বাষ্প থাকে তার ছোঁয়ায় এই মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাস জন্মাতে দেখা যায়। 
সাহারা মরুভূমির খুব কাছেই আছে আর একটা মরুভূমি। যদিও এই মরুভূমিটির অবস্থান আফ্রিকায় নয়। মরুভূমি দুটিকে পৃথক করেছে সুয়েজ -প্রণালী। এই সংকীর্ণ প্রণালীটি যদি না থাকতো তাহলে সাহারা ও আরবের মরুভূমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে সাহারা মরুভূমির মানচিত্রটাই পাল্টে যেত। এই দুটি মরুভূমি মিলে পৃথিবীর প্রায় ১১ শতাংশ জমি দখল করে আছে। 
সবশেষে আসি 'থর' মরুভূমির কথায়। প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গমাইল বিস্তৃত এই মরুভূমির কিছু অংশ আমাদের দেশের রাজস্থানে রয়েছে। বাকি অংশ সিন্ধুপ্রদেশ ও বেলুচিস্তান এর ভিতর দিয়ে ইরাকের দিকে প্রসারিত। 
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

Tuesday, August 1, 2017

Hieun Tsang

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর জীবন ও ভারত ভ্রমণ (সংক্ষেপিত)
৬০৩ খ্রীষ্টাব্দে চীনের অন্তর্গত হোনান প্রদেশে চিনলিউ নগরে এই মনিষী পরিব্রাজক জন্মগ্রহন করেন।হিউয়েন সাঙ ছিলেন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী শেন হুই এর চতুর্থ পুত্র। কুড়ি বছর বয়েসএ আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধধৰ্ম গ্রহন করে ও গৃহত্যাগ করে তিনি পরিব্রাজকের জীবনযাপন করতে থাকেন।
 হিউয়েন সাঙ এর ভারত বিবরণ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ যদিও ঐতিহাসিকের উদ্দেশ্য নিয়ে তা রচিত হয় নি। তবু ধর্মোপাসক এই পরিব্রাজকের অন্তরে একজন ঐতিহাসিক বা একজন ভৌগোলিক বাস করতেন বলে তাঁর বিবরণ নেহাত 'কড়চা'জাতীয় ধর্মানুভব মাত্র হয়ে ওঠেনি বরং তৎকালীন বৌদ্ধ ভারতের একটা বিশ্বাসযোগ্য দলিল হয়ে উঠেছে। 

ফা হিয়েন এর মতো ভারতবর্ষে এসে  বৌদ্ধপুস্তকাদি সংগ্রহ ও বৌদ্ধ ধর্মের ঠিকঠাক ব্যাখ্যার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য সেকালের রীতি উপেক্ষা করে মাত্র ২ জন সঙ্গী নিয়ে চীন সম্রাটের বিনা অনুমতিতেই ভারতের দিকে রওনা হন এবং ৯ মাস ভ্রমণের পর বামিয়ান পৌঁছান। অবশেষে কপিশা ও না -কি -লো-হো-হয়ে তিনি ভারতের প্রাচীন রাজ্য গান্ধারে প্রবেশ করেন।শালাতুল তক্ষশীলা হয়ে তিনি কাশ্মীরে এসে দুবছর কাটান (৬৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দ)।পরে জলন্ধর,মথুরা,বালেশ্বর আসেন।কান্যকুব্জের সিংহাসনে তখন অধিষ্ঠিত রাজা হর্ষবর্ধন। তিনি ছিলেন বৌদ্ধমতের পৃষ্ঠপোষক।এখানে মাস কয়েক থেকে তিনি অযোধ্যা,প্রয়াগ,কৌশাম্বী,শ্রাবন্তী হয়ে কপিলাবাস্তুতে এসে বৌদ্ধ জন্মভূমি দর্শন করেন। সেখান থেকে এসে দেখেন মহাপরিনির্বাণ স্থান কুশীনগর। পরে বারাণসী ,সারনাথ থেকে গঙ্গার পথ ধরে গাজীপুরে আসেন।বৈশালী ,পাটনা ,হয়ে গয়ায় এসে দর্শন করেন পবিত্র বোধিবৃক্ষ। রাজগৃহ থেকে নালন্দায় এসে ২২ মাস ধরে নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরে চম্পা ,কজঙ্গল,পৌন্ডবর্ধন কামরূপ সমতট হয়ে পশ্চিমবঙ্গের তাম্রলিপ্ততে আসেন।মুর্শিদাবাদ এর কর্ণসুবর্ণ ছুঁয়ে তিনি আসেন উড়িষ্যা প্রদেশে। সেখানের গঞ্জাম হয়ে কলিঙ্গ কাঞ্চীপুর,কোঙ্কনপুর(মহারাষ্ট্র ),অজন্তা,ভরুকচ্ছ ,বলভী,সৌরাষ্ট্র  মুলতান প্রভৃতি ভ্রমণ করে হর্ষবর্ধনের আমন্ত্রণক্রমে পুনরায় কনৌজে আসেন। হর্ষবর্ধনের যত্নে কিছুকাল কাটিয়ে তাঁর প্রদত্ত প্রভূত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ ৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যভাগে হিউয়েন সাঙ স্বদেশের উদ্দেশ্যে গমন করেন। তাঁর এই প্রায় পঞ্চদশবর্ষব্যাপী পরিভ্রমণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় তিনি ছিলেন নালন্দায়। 
যাবার সময় তিনি বহু বৌদ্ধ পুঁথি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর নিয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধের দেহাবশেষ কণিকা,একটি হিরণ্যময় বৌদ্ধমূর্তি ,একটি চন্দনকাষ্ঠ-নির্মিত বুদ্ধমূর্তি ,একটি বুদ্ধের তথাগত মূর্তি ,সূত্র -ভাষণরত  রৌপ্যময় বুদ্ধমূর্তি ,নগ্রহার ত্যাগ সময়কালীন বুদ্ধমূর্তি এবং বৈশালীতে উপদেশক বুদ্ধমূর্তি।এইগুলি এবং প্রায় পোনে সাতশো পুঁথির বিশাল সম্ভার নিয়ে যেতে তাঁর ২০ টি ঘোড়ার অবশ্যক হয়েছিল। ভারত ভ্রমণকালে তিনি সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত করেন। দেশে ফিরে সংস্কৃত পুঁথিগুলির চীনা অনুবাদে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। এর মধ্যে ভ্রমণ বিবরণী সি-ইউ-কি রচনা করে তিনি ৬৪৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাটের কাছে পাঠিয়ে দেন। ৬৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়।

Friday, July 28, 2017

Visnusharma and Panchatantra

বিষ্ণুশর্মা ও পঞ্চতন্ত্র  


ভারতীয় সাহিত্যে বিষ্ণুশর্মা ও পঞ্চতন্ত্রের নাম সর্বজনবিদিত।দক্ষিণ ভারতে মহিলারোপ্য নামে একটি নগর ছিল। সেখানে অমরশক্তি নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর তিন ছেলে বসুশক্তি,উগ্রশক্তি আর অনেকশক্তি। তিনটিই মহামূর্খ ; লেখাপড়া তাদের মাথায় একদম ঢোকে না। রাজা বড় চিন্তিত হয়ে পড়লেন ,মন্ত্রীকে ডেকে বললেন ,''এর একটা বিহিত তো না করলে নয় !''
মন্ত্রী তখনি রাজ্যের সমস্ত পন্ডিতদের ডেকে পাঠালেন। পন্ডিতরা সব শুনে বললেন,''আগে ১২ বছর ধরে ব্যাকরণ মুখস্থ করতে হবে ;তারপর মনু ,চাণক্য,বাৎস্যায়ন,ধর্মশাস্ত্র,অর্থশাস্ত্ৰ ,রাজনীতি প্রভৃতি শেষ করতে আরো বেশ কয়েকবছর লাগবে।''
কথাটা রাজার মনঃপুত হলো না। পন্ডিতদের মধ্যে একজন ছিলেন বিষ্ণু শর্মা। রাজা তাঁকে বললেন,-''আমার ছেলে ৩ টিকে অল্পদিনে সর্বশাস্ত্রে সুপন্ডিত করে দিন। আমি আপনাকে ১০০ টি গ্রাম প্রণামী দেব।''
বিষ্ণুশর্মার বয়স হয়েছে ৮০ বছর। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে ,গায়ের চামড়া হয়ে গেছে শিথিল। কিন্তু মনটি তাঁর তেমনি সতেজ। তিনি হেসে বললেন ,''আমার আশি বছর বয়েস,শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় ক্রমে ক্রমে শক্তি হারাচ্ছে। এখন আর অর্থে আমার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া আমি বিদ্যা বিক্রি করি না,-১০০ টি  গ্রাম দিলেও না। তবে আপনার ছেলে কটিকে আমার হাতে ছেড়ে দিন। আমি কথা দিচ্ছি,ছয় মাসের মধ্যে রাজপুত্রদের সর্বশাস্ত্রে পন্ডিত করে তুলবো। যদি না পারি,তবে নিজের নাম ত্যাগ করবো।''
বিষ্ণুশর্মা রাজপুত্রদের শেখাবার জন্য কতকগুলি গল্প রচনা করলেন আর সেই সব ছোট ছোট গল্পের ভিতর দিয়ে সমস্ত শাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্রের সার কথা ছয়মাসে রাজপুত্রদের পড়িয়ে দিলেন। এই গল্পগুলি হচ্ছে পঞ্চতন্ত্র। এই পঞ্চতন্ত্র বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সম্পদ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর যেকোনো একটি গল্প পড়লেই বিষ্ণুশর্মার অসাধারণ প্রতিভার কথা বোঝা যায়। 
পঞ্চতন্ত্রের  একটি গল্প : ধর্মবুদ্ধি-পাপবুদ্ধি-কথা 
দুই বন্ধু। গলায় গলায় ভাব। একজন খুব ধার্মিক ,আর একজন সর্বদাই দুষ্ট বুদ্ধি। ধার্মিককে লোকে বলতো ধর্মবুদ্ধি,আর দুষ্টের নাম দিয়েছিলো পাপবুদ্ধি। 
দুই বন্ধু বিদেশে গেলো ব্যবসা করতে। কিছুদিনের মধ্যে দুজনে মিলে অনেক ধনসম্পদ রোজগার করলো।তারপর সেসব ধন নিয়ে ফিরলো দেশে। 
একটি বন পার হয়েই তাদের গ্রাম। বনের মধ্যে এক গাছতলায় বসে পাপবুদ্ধি বললো ,''এতো টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা ঠিক হবে না ,বাড়িতে ডাকাত পড়বে,আত্মীয়রাও হিংসা করবে। কিছু টাকা সঙ্গে রাখি আর বাকিটা এই গাছতলায় পুঁতে রেখে যাই। যেমন যেমন দরকার হবে,এসে তুলে নেবো। ''
তাই করা হলো। 
দিন যায়। 
একদিন পাপবুদ্ধি এসে বললো "আমার টাকার দরকার। চল ,গাছতলা থেকে কিছু তুলে নিয়ে আসি।''
ধর্মবুদ্ধি বললো,''আমারও দরকার,চলো।''
দুই বন্ধু বনে এলো। গাছতলা খুঁড়লো ,কিন্তু টাকা তো নেই!অত টাকা কোথায় গেল?
পাপবুদ্ধি বললো ,''আমরা দুজন ছাড়া এই টাকার কথা তো কেউ জানে না !আমি যখন নিই নি ,তখন তুমিই নিয়েছ।''দুই বন্ধুতে ঝগড়া বেধে গেলো। শেষে দুজন গেলো বিচার-সভায়।বিচারকেরা বললেন ,''কোনো সাক্ষী আছে ?''পাপবুদ্ধি বললো,''বনদেবতাকে সাক্ষী মানতে পারি। তিনি তো সবই জানেন।''বেশ ,তা হলে বনদেবতারি সাক্ষ্য নেওয়া হোক। 
পাপবুদ্ধি বাড়ি এসে তার বাবাকে সব কথা বললো। আরোও বললো ''টাকাগুলি  সেই চুরি করেছে। ধর্মবুদ্ধিকে সে এক পয়সাও দেবে না। এখন তুমি এক কাজ করো-।''তার বাবাও তেমনি। বললেন কি কাজ ?
-''সেই শমিগাছটাই একটা কোটর আছে। সেই কোটরের মধ্যে তুমি লুকিয়ে থাকবে। বিচারকদের সঙ্গে আমরা গাছতলায় যাবো। গাছকে জিজ্ঞাসা করবো কে চোর? তুমি তখন বলবে -ধর্মবুদ্ধি চোর।''
পরদিন সকালে বিচারকেরা সদলবলে এলেন বনে। সঙ্গে ধর্মবুদ্ধি আর পাপবুদ্ধি। সবাই সেই শমীগাছের সামনে এসে দাড়ালেন।প্রশ্ন করা হলো ,''হে বনের অধিষ্ঠাত্রী-দেবতা ,আপনি বলুন ,কে এই টাকা চুরি করেছে।''
নিস্তব্ধ বন কাঁপিয়ে হটাৎ গাছের ভিতর থেকে সাড়া এলো -''চুরি করেছে ধর্মবুদ্ধি। ''
অকাট্য প্রমান। বিচারকেরা বললেন ,ধর্মবুদ্ধি এর সাজা হবে। কি সাজা দেওয়া যায় তাই নিয়ে তাঁরা আলোচনা শুরু করলেন। 
এই অবসরে ধর্মবুদ্ধি কতকগুলো কাঠকুটো কুড়িয়ে এনে সেই শমীগাছের গুঁড়িতে জড়ো করলো। তারপর দিলো তাতে আগুন ধরিয়ে। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। আর যায় কোথা!পরোক্ষনেই আর্তনাদ করতে করতে গাছের কোটর থেকে পাপবুদ্ধিয়ের বাবা বেড়িয়ে এলো। শরীরের অর্ধেকটা তার তখন ঝলসে গেছে,চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। পাপবুদ্ধিয়ের বাবা খুলে বললো সব কথা। ধর্মবুদ্ধিকে তারিফ করে বিচারকেরা পাপবুদ্ধির উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। 
এই গল্প থেকে বোঝা যায় যে ,কোনো ব্যাপারেই শেষ পর্যন্ত দুস্টু বুদ্ধি সফল হয় না। ধর্ম চিরকাল জয়ী হয়।(সংগৃহীত)   

Monday, July 24, 2017

OLYMPIC GAMES

প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক সূত্রপাত ও পতন:
প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক খেলার সূচনা হয়েছিল যীশুখ্রিস্ট জন্মাবারও ৭৭৬ বছর আগে। সভ্যতার ঊষালোকই বলা যেতে পারে সেই যুগকে। গ্রীসের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে ছিল প্রাচীন অলিম্পিয়া নগরী।সেখানে ছিল দেবরাজ জিউস এর মন্দির। প্রতি ৪ বছর পর পর সেই দেবরাজের পুজো উপলক্ষে এখানে হতো বিরাট এক উৎসব। দেশ বিদেশ থেকে জ্ঞানী,গুণী,মনীষীদের সমাবেশ ঘটতো। আসত সৌম্যকান্তি,বলিষ্ঠদেহ খেলোয়াড় এর দল। সমস্ত অলিম্পিয়া নগরী পুষ্পপল্লবে সজ্জিত হয়ে এক নয়নাভিরাম রূপ নিতো। সুদূর গ্রাম থেকে,অন্যান্য শহর থেকে দলে দলে নরনারী এসে মন্দিরের সামনে জড়ো হতো। শহর জুড়ে উৎসবের বন্যা বয়ে যেত যেন !আর এই উৎসবের অঙ্গ হিসাবে হতো এক বিরাট ক্রীড়া প্রতিযোগিতা -যার নাম ছিল অলিম্পিক গেমস বা অলিম্পিক খেলা। 
অলিম্পিয়া নগরীর এই মহোৎসবকে  সে যুগের লোকেরা এতো পবিত্র মনে করতো যে উৎসবের কয়েকটি দিন কোনোও রণাঙ্গণে  কোনো সৈনিক অস্ত্রধারণ করতো না। সে সময়এ গ্রীস ছোট ছোট নগর রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এদের কারো সাথে কারো যুদ্ধ চলতে থাকবার সময়ে যদি অলিম্পিক উৎসব শুরু হতো তা হলে যতদিন  না উৎসব শেষ হয় এবং সৈন্যরা নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে পারে ততদিন দু পক্ষই  যুদ্ধ বন্ধ রাখত।অর্থাৎ ,অল্প সময়ের জন্য হলেও ,সমস্ত  যুদ্ধবিগ্রহ এর উপর শান্তির পবিত্র বারি বর্ষিত হতো দেবতার পুষ্পবৃষ্টির মতো।
অলিম্পিয়ার ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অধিকার সকলেরই ছিল। যে কোনো স্বাধীন গ্রীক ১০ মাসের ''ট্রেনিং'' নিয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন -অন্য কোনোও বাধা-নিষেধ ছিল না। তবে প্রত্যেক রাজ্যই চেষ্টা করতো তাদের নিজের দেশের লোক যাতে শ্রেষ্ঠ আসন পায়। এ জন্য ৭ বছর বয়েস হলেই গ্রীক বালকদের শরীরচর্চার দিকে ভীষণভাবে নজর দেওয়া হতো। সিসিলি থেকে আরম্ভ করে এশিয়া মাইনর অবধি যেখানে যত খেলোয়াড় ছিল সবাই এসে সমবেত হতেন অলিম্পিয়াতে -পেনথালন,প্যানক্রেসিয়া,কুস্তি ,ডিসকাস,জ্যাভেলিন,দৌড় এবং রথ-দৌড় এ  অংশগ্রহণ করতে। বিজয়ী বীরকে পরিয়ে দেওয়া হতো অলিভ পাতায় গাথাঁ উজ্জ্বল সবুজ রঙের অপূর্ব সুন্দর বনমুকুট।স্বদেশে ফিরে এলে দেশের রাজা দিতেন বহুমূল্য উপহার।যোগ্য সম্মানে ভূষিত করতেন দেশের বীর সন্তানকে। 
 প্যানক্রেসিয়া প্রতিযোগিতায় যিনি সাফল্য অর্জন করতেন তাঁর সম্মানের বুঝি তুলনা ছিল না। কুস্তি ,মুষ্টিযুদ্ধ,পদাঘাত এবং শ্বাসরোধ এর মাধ্যমে এই খেলায় জয়লাভ করতে হতো। খেলাটি অবশ্য ছিল নিদারুন।বিজয়ী এর হাতে বিজিতকে  প্রাণ দিতে হতো। মৃত্যু এর মধ্যে দিয়ে খেলাটির পরিসমাপ্তি ঘোষিত হতো।
 পেনথালন প্রতিযোগিতায় যিনি চ্যাম্পিয়ান তাঁকে জয়ী হতে হতো উচ্চ লমফ,দৌড়,ডিসকাস ও জ্যাভেলিন নিক্ষেপে এবং "স্ট্যান্ড-আপ'' কুস্তিতে। 
আজকাল মুষ্টিযোদ্ধাদের ৩ টি বিভাগে ভাগ করা হয়। লাইটওয়েইট,মিডলওয়েইট,এবং হেভিওয়েট। কিন্তু প্রাচীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় এমন কোনো শ্ৰেণীবিভাগ ছিল না। ফলে ওজনে যিনি সবচেয়ে ভারী হতেন মুষ্টিযুদ্ধ এর বিজয়মুকুট সাধারণত তাঁরই মাথায় শোভা পেত। 
অলিম্পিক উৎসবে কিন্তু শুধু খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতায় হত না। কবি,গায়ক ,শিল্পী -সকলের মধ্যেই প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ছিল। তাঁরাও দলে দলে এসে যোগ দিতেন এবং বিজয়ী হলে পাতার মুকুট মাথায় নিয়ে সগর্বে দেশে ফিরতেন।


৩৯৪ খৃষ্টাব্দে প্রাচীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার উপর যবনিকাপাত ঘটান রোমের সম্রাট প্রথম থিওডেসিয়াস।কোনো খেলাধুলাকেই তিনি ভালো চোখে দেখতেন না। শরীরচর্চাকে মনে করতেন নিছক পাগলামি। তাঁর মনের মধ্যে একটা দৃঢ় বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো যে সভ্য খ্রীষ্টান জগতে আদিম বর্বর যুগের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার কোনো স্থান ই থাকতে পারে না। শুধু অলিম্পিক প্রতিযোগীতা বন্ধ করে তিনি খুশি হন নি ,অলিম্পিক স্টেডিয়াম এবং অলিম্পিক মন্দির ধ্বংস করে ফেলার ও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।তাঁরই নির্দেশে প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম আশ্চর্য -হাতির দাঁত,সোনা এবং এবনীতে তৈরি -অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূর্ত প্রতীক গ্রীক দেবতা জিউসের বিরাট মূর্তি কনস্ট্যান্টিনোপল এ স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রাচীন ভাস্কর্যের অপূর্ব নিদর্শন এই জগৎবিখ্যাত মূর্তিটি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। 
৪২৬ খৃস্টাব্দে দ্বিতীয় থিওডসিয়াস আরো এককাঠি অগ্রসর হন। তাঁর নির্দেশে গ্রীক দেবদেবীদের সমস্ত মন্দির ধ্বংস করে ফেলা হয়, ধ্বংস করে ফেলা হয় অলিম্পিয়ায় অবস্থিত জিউসের বিরাট মন্দির। এবং তারপর ধ্বংসের যেটুকু বা বাকি ছিল,বন্যা ও ভূমিকম্পে তার ষোলোকলা পূর্ণ হয়। 
এই ভাবে শেষ হয় প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক। 

Saturday, July 22, 2017

shaheed Minar

শহীদ মিনার
কলকাতা এসেছে অথচ শহীদ মিনার দেখেনি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু ১৫৭ ফুট (৪৮ মিটার)উচ্চতার এই মিনারটি দেখলে কি বোঝা যায়,১৮২৮ সাল থেকে কত ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে এই মিশরীয় স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত স্তম্ভটি আকাশের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে। এই মিনারে যেমন মিশে আছে ব্রিটিশ ভারতের কাহিনী ,তেমনি মিশে স্বাধীনোত্তর ভারতের ইতিহাস। ব্রিটিশরা ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কামান্ডার মেজর জেনারেল স্যার ডেভিড অক্টোরলোনির স্মৃতিতে এই সৌধটি নির্মাণ করেন। 
১৮০৪ সালে দিল্লীতে মারাঠাদের বিরুদ্ধে তাঁর সফল আত্মরক্ষা এবং ইঙ্গ নেপাল যুদ্ধে গোর্খাদের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানীর বাহিনীর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এই সৌধটি নির্মিত হয়েছিল,নাম হয় অক্টারলোনি মনুমেন্ট। সৌধটির নকশা প্রস্তুত করেন জে.পি.পার্কার।সরকারী কোষাগারের অর্থসাহায্যে  এই সৌধটি নির্মিত হয়। সৌধটি নির্মাণ কালে ব্যয় হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা।
১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার এই স্মৃতি সৌধ টিকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।সেইসময় এই সৌধের নতুন নামকরণ করা হয় শহীদ মিনার। খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে শহীদ মিনারের উপর দিকের সাথে সিরিয়ার স্থাপত্যের মিল রয়েছে। আর চূড়াটিতো তুরস্কের ডোমের মতো। শহীদ মিনারের মাথায় ২ টি ব্যালকোনিও আছে। ২১৮ টি সিঁড়ি বেয়ে  সেই ব্যালকোনিগুলোয় ওঠাও যায়। তবে আজকাল আর চাইলেও ঢোকা যায় না, তার আগে কলকাতা পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। এই সৌধের শীর্ষ ভাগে সর্বশেষ উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ও তার পরিবার। 
শহীদ মিনারকে সাধারণত 'মনুমেন্ট' নাম এ উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এটি মধ্য কলকাতার এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে ময়দানের উত্তর পূর্ব কোন এ অবস্থিত।বার্ন এন্ড কোম্পানী এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। 
১৯৯৭ সালে একজন পর্যটক এই সৌধের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।তারপর থেকে শহীদ মিনারের উপরে উঠতে  হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। লালবাজার পুলিশ সদর দফতরে ঠিকানা ও ফটো আইডির অনুলিপি জমা দিতে হয়। বহিরাগত পর্যটকদের হোটেলের নথি জমা রাখতে হয় এবং বিদেশিদের পাসপোর্টের অনুলিপি জমা রাখতে হয়। 
লন্ডন আই এর মতো শহীদ মিনারের উপর থেকে কলকাতার দৃশ্য দেখা যায়। ২০১১ সালে শহীদ মিনারের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। এই সংস্কারটি ২ ভাগে শেষ হয়। প্রথম ভাগের সংস্কার শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১২ সালের ১৫ জুন। সংস্কারে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। মিনারের ভিতরে ও বাইরে আলোকিত ও রং করাও হয়েছে।সংস্কারের দ্বিতীয় পর্যায়ে মিনারের পাদদেশে একটি অস্থায়ী মঞ্চের ব্যবস্থা হবে। সংস্কার শেষ হয়ে গেলে পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এই মিনারের উপরে ওঠার সুযোগ পাবে,মিনার পর্যন্ত যাওয়ার পথটি ফুল গাছ দিয়ে সাজানো হবে। 

Thursday, July 20, 2017

DINAMIGHT

ডিনামাইট আবিষ্কার কিভাবে হলো ?
যে সুইডিস রসায়নবিদ ,প্রযুক্তিবিদ ও শিল্পপতি ডিনামাইট ও তার চেয়ে ও শক্তিশালী বিস্ফোরক পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন তার নাম নোবেল অর্থাৎ আলফ্রেড বানার্ড নোবেল। যার নামে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
আলফ্রেড এর বাবা ইমানুয়েল পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার,উদ্ভাবক ও শিল্পপতি।শৈশবে আলফ্রেড তার বাবার কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার মূল নীতি গুলি আয়ত্ত করেছিলেন। 
১৮৩৭ সালে ইমানুয়েল নোবেল ব্যবসায় আর্থিক লোকসানের জন্য চলে যান রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গএ। সেখানে গিয়ে তিনি খনিতে ব্যবহৃত হয় এমন কিছু বিস্ফোরক পদার্থ তৈরির কারখানা স্থাপন করেন।স্থাপন করেন যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা তৈরির একটি কারখানাও।

দেখতে দেখতে ৮ টি বছর কেটে যায়। ১৮৫০ সালে আলফ্রেড নোবেল রাশিয়া ছেড়ে প্যারিসে চলে যান রসায়নবিদ্যা অধ্যায়ন করতে। পড়া শেষ করে তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে জন এরিকসনের তত্ত্বাবধানে  চার বছর ধরে লোহার তৈরি কামানবাহী যুদ্ধজাহাজ বানানোর কলাকৌশল আয়ত্ত করেন। তারপর সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে এসে পিতার কারখানায় যোগ দেন। ওই কারখানায় তখন ক্রিমিয়ার  যুদ্ধ এর ব্যবহারের উপযোগী নানারকম অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হতো। ১৮৫৬ সালে  যুদ্ধ শেষ হলে পর কারখানাটি শান্তির সময়ে ব্যবহারের  উপযোগী স্টিম চালিত জলযানের বিবিধ যন্ত্রপাতি নির্মাণে অসমর্থ হয়ে পড়ে। ১৮৫৯ সালে কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যায়। 
আলফ্রেড ও তাঁর পিতামাতা সুইডেন এ ফিরে আসেন। আলফ্রেডের দুই ভাই রবার্ট ও লুডভিগ থেকে যান রাশিয়াতে। উদ্দেশ্য -সেখানে তাঁদের পিতার ফেলে আসা ব্যাবসার অংশবিশেষ উদ্ধার করা। এদিকে আলফ্রেড তাঁর বাবার তালুকে গড়ে তোলেন বিস্ফোরক দ্ৰব্য প্রস্তুতির একটি ছোট পরীক্ষাগার। ওই সময় একমাত্র বিস্ফোরক দ্ৰব্য ছিল বারুদের মতো দেখতে একরকম কালো রঙের পাউডার। খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যে ওই কালো রঙের বিস্ফোরক পদার্থটিই ব্যবহার হতো। তারপর আবিষ্কৃত হলো নতুন ধরণের এক তরল বিস্ফোরক। নাম তাঁর ''নাইট্রো গ্লিসারিন''।এটি আগে ব্যবহৃত বিস্ফোরক দ্রব্যের চেয়ে বহুগুন শক্তিশালী হলে কি হবে ,উদ্বায়ী পদার্থ বলে একে নাড়াচাড়া করার অসুবিধা ছিল অনেক। খুব সাবধানে  নাড়াচাড়া করতে না পারলে  এটির বিস্ফোরণ ঘটে যেত।
যাইহোক,১৮৬২ সালে আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল এই নাইট্রোগ্লিসারিন উৎপাদনের একটি কারখানা খুলে ফেললেন। সেই সঙ্গে গবেষণাও চালাতে লাগলেন -কিভাবে এই তরল বিস্ফোরক পদার্থটিকে নাড়াচড়া করা যায় ,তাই নিয়ে। ১৮৬৩ সালে নোবেল এমন একটি যান্ত্রিক ও ব্যাবহারিক উপায় উদ্ভাবন করে ফেললেন,যার সাহায্যে একটুখানি স্ফুলিঙ্গ উৎপাদন করে একটি ধাতব পাত্রে রাখা অনেকটা নাইট্রোগ্লিসারিনকে নিরাপদে বিস্ফোরিত করা যায়। এই সময় থেকে আলফ্রেডের ভাগ্যোদয়ের সূচনা হয়। এর মাত্র দু বছর পরে ১৮৬৫ সালে নোবেল ''ব্লাস্টিংক্যাপ'' নামে এক উন্নতমানের বিস্ফোরণ ঘটানোর যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেললেন। যন্ত্রটির ধাতব টুপিতে মার্কারি ফুলমিনেট নামক একটি রাসায়নিক যৌগ ভরা থাকতো। শুষ্ক অবস্থায় এই যৌগ টিতে তাপ,আঘাত অথবা ঘর্ষন লাগলেই বিস্ফোরণ ঘটে যায়। - এই ব্লাস্টিংক্যাপ আবিস্কারই আধুনিক উচ্চশক্তি সম্পন্ন বিস্ফোরক দ্ৰব্যকে বিস্ফোরিত করার সূচনা ঘটায়।
নাইট্রোগ্লিসারিন যৌগটি এতই শক্তিশালী বিস্ফোরক পদার্থ যে ,একে নাড়াচাড়া করা বা এক জায়গা থেকে অন্যত্র চালান দেওয়া খুবই বিপদজনক ব্যাপার।১৮৬৪ সালে নোবেলের নাইট্রোগ্লিসারিন কারখানায় এক প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে কারখানাটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। আর সেই দুর্ঘটনায় নোবেলের ছোটভাই এমিল ও আরো কিছু কর্মী প্রাণ হারান। এতেও হতাশ না হয়ে আলফ্রেড আরো কয়েকটি  নাইট্রোগ্লিসারিন কারখানা গড়ে তুললেন। নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে লাগলেন ''ব্লাস্টিং ক্যাপ''।এতে দুর্ঘটনা কমলেও সম্পূর্ণ নির্মূল হলো না। 
এরপর আলফ্রেড আবিষ্কার করলেন ডিনামাইট।এটি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ১৮৬৭ সালে তিনি এটি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারটি ঘটে এইভাবে : একদিন পরীক্ষাগারে নোবেলের এক সহকর্মী নাইট্রোগ্লিসারিন ভরা কয়েকটি পাত্র বিদেশে পাঠাবার জন্য প্যাক করছিলেন। হঠাৎ তাঁর হাত ফস্কে একটি পাত্র মাটিতে পড়ে যায়। মেঝেতে ছড়ানো ছিল এক বিশেষ ধরণের মাটি ,যা প্যাকিং এর কাজে লাগতো। নাইট্রোগ্লিসারিন ভরা এই পাত্রটি পড়লো গিয়ে সেই মাটির ওপর। তাই না দেখে পরীক্ষাগারের কর্মীরা তো ভয়ে অস্থির। এই বুঝি বা বিস্ফোরণ ঘটে। আলফ্রেড নোবেলও একটু দূরে দাঁড়িয়ে এ সব ঘটনা দেখছিলেন।কিন্তু কি আশ্চর্য ব্যাপার বিস্ফোরণ আদৌ ঘটলো না। আলফ্রেড তখন এই মাটি সমেত নাইট্রোগ্লিসারিন সাবধানে তুলে এনে পরীক্ষা করে দেখলেন যে ,নাইট্রোগ্লিসারিন এর বিস্ফোরণ ক্ষমতা এতটুকুও  কমেনি,কিন্তু মাটির সাথে মিশে জমাট বেধে কঠিন হয়ে গিয়ে নাড়াচাড়া করার পক্ষে জিনিসটা বেশ নিরাপদ হয়েছে।
আকস্মিক ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি আলফ্রেড নোবেল এর ইচ্ছাকে অপ্রত্যাশিতভাবে পূর্ণ করে দিলো। তিনি আরো পরীক্ষা করে দেখলেন যে কাইজেলগার নামক সিলিকাযুক্ত একরকম সচ্ছিদ্র মাটি নাইট্রোগ্লিসারিনকে অবশোষণ করে। তার ফলে  নাইট্রোগ্লিসারিন ও কাইজেলগার মিশ্রণকে নিরাপদে নাড়াচাড়া করা যায়। নতুন এই মিশ্র পদার্থকে নোবেল নাম দিলেন ''ডিনামাইট''। 
১৮৬৭ সালে নোবেল ব্রিটেনএ এবং পরের বছর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই পদার্থটি আবিষ্কারের পেটেন্ট নিলেন। ডিনামাইট আবিষ্কারের পর সারা বিশ্বে নোবেলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো এবং পাথর ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ কাটতে ,খাল কাটতে ,কয়লার খনিতে কয়লার চাঙড় ফাটাতে ও রেলপথ নির্মাণের কাজে ডিনামাইট ব্যবহার হতে লাগলো।

Saturday, July 15, 2017

VEDAS

পৃথিবীর আদি সাহিত্য-বেদ ও তার বিভাগ 
আজ অবধি যত বই লেখা হয়েছে তার মধ্যে বিশ্বজনীন সাহিত্য বা বিশ্ব সাহিত্যের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সকলের আগে যে বইখানি এই সাহিত্যের মধ্যে ধরা হয় সেটি হলো বেদ। এটিকে সবার আদি সাহিত্যও বলা যেতে পারে। অবশ্য বেদ যখন রচিত হয় তখনও লিখিত সাহিত্যের সৃষ্টি হয় নি। বেদ ও মুখে মুখে রচিত হয়েছিল এবং শুনে শুনে ঋষিরা  তা মুখস্ত করে নিয়ে শিষ্য পরম্পরায় প্রচার করে গিয়েছিলেন।সেজন্য এর আরেক নাম ''শ্রুতি''।
বেদ এর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল সে সম্পর্কে পুরান এ একটি গল্প আছে। একদিন আদি পুরুষ ব্রম্ভা যোগাসনে বসে আত্মচিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন,এমন সময় তাঁর হৃদয় এ অস্ফুট নাদধ্বনি হলো। পরে তা থেকে প্রণব এবং সেই প্রণব থেকে বেরিয়ে এলো স্বর ও ব্যাঞ্জন বর্ণরাশি। ব্রম্ভা সেই বর্ণগুলো একত্রিত করে কতকগুলো শব্দ উচ্চারণ করলেন। তাই হলো বেদ। অর্থাৎ বেদ কোনো মানুষের রচনা নয় -স্বয়ং ব্রম্ভার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাই বেদকে  বলা হয় অপৌরুষেয়।
পুরানে অনেক ঘটনাকেই এই ভাবে কোনো -না -কোনো দেবতার সাথে জড়িয়ে অলৌকিক ভাবে দেখানো হয়েছে,হয়তো লোকের শ্রদ্ধা বাড়াবার জন্যই। তবে ঐতিহাসিকদের মতে আর্য ঋষিরা যখন প্রথম ভারতে এসে সিন্ধু নদের ধারে বসতি স্থাপন করলেন তখন ওখানকার সৌন্দয দেখে তাঁরা মুগ্ধ হন এবং প্রকৃতির এক একটি রূপকে দেবতা বলে ধরে নিয়ে যাগযজ্ঞের সাহায্যে তাঁদের আরাধনা করতে শুরু করেন। এই সময় তাঁরা সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক শক্তি উপলব্ধি করতে থাকেন আর সাথে সাথে তাঁদের সামনে খুলে যায় সত্যের নানান রূপ। যাঁদের সামনে সৃষ্টিকর্তার সেই অসাধারণ শক্তি আর সত্যের প্রকৃত রূপ উদ্ঘাটিত হয়েছিল তাঁদের বলা হতো ঋষি এবং যে সাহিত্যের ভিতর দিয়ে তাঁরা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছিলেন তারই নাম বেদ। 
বেদ কথাটি এসেছে 'বিদ' ধাতু থেকে।'বিদ' ধাতুর মানে জানা অর্থাৎ যে সাহিত্যে জ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে তাই হলো বেদ।
প্রাচীন পন্ডিতেরা অবশ্য 'বেদ' শব্দটির অর্থ নিয়ে অনেক মাথা ঘামিয়েছেন এবং নানান ভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন যা দিয়ে ধর্ম জানা যায় বা লাভ করা যায় তাই হলো বেদ। কেউ বলেছেন, যা থেকে কিসে আমাদের ইষ্টলাভ হবে,কি করলে আমরা অনিষ্ট এড়িয়ে যেতে পারবো -এই সব এর উপায় আমরা জানতে পারি তাই হলো বেদ। কেউ বলেছেন প্রত্যক্ষ ভাবে বা অনুমান করেও যা জানা যায় না -বেদের সাহায্যে তা আমরা জানতে পারি। তাই এর এইরূপ নামকরণ। এরকম আরো নানা রকম অর্থ করেছেন নানা জনে। এদের মধ্যে সায়নাচার্যের টীকা বা ভাষ্য হচ্ছে সব চেয়ে নামকরা। 
যাই হোক এসব থেকে এতটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে পরম সত্য কি সে সম্পর্কে ঋষিদের চিন্তার ফলে যে সাহিত্য রচিত হয়েছিল তাই হলো বেদ।
বেদের কোনো কোনো অংশ ছন্দোবদ্ধ স্তব বা স্তোত্র দিয়ে রচিত হয়েছিল ,আবার কোনো কোনো অংশ রচিত হয়েছিল গান দিয়ে। তাছাড়া গদ্যে রচিত মন্ত্র দিয়েও এর কিছু কিছু  অংশ রচিত হয়। মহর্ষি ব্যাস যজ্ঞের ব্যবহার করবার জন্য এই বিভিন্ন ধরণের মন্ত্র সংকলন করে ৪ টি পৃথক ভাবে বেদকে ভাগ করেন। বেদের যে সব অংশ বা মন্ত্র স্তোত্র বা  ছন্দোবদ্ধ ভাবে রচিত হয়েছিল সেগুলি একত্র করে তৈরি হলো ঋকবেদ। যজ্ঞের সময় যজ্ঞের হোতা ও তাঁর সঙ্গীরা এই ঋকবেদ মন্ত্র বা স্তোত্র আবৃত্তি করে দেবতাদের স্তব করতেন এবং তাদের যজ্ঞে আহ্বান করতেন। বেদের যে অংশ গান দিয়ে রচিত হয়েছিল সেগুলি একত্র করে তৈরি হলো সামবেদ।ঋষিরা -বিশেষ করে ধর্মের উদ্গাতা এবং তাঁর সঙ্গীরা যজ্ঞের সময় এই মন্ত্রগুলি গান করতেন। অমনি ধারা গদ্যময় মন্ত্রগুলি একত্র করে তৈরি হলো যজুবেদ।যজ্ঞে আহুতি দেবার সময় অধ্বযু ও তাঁর সহকর্মীরা এই  যজুমন্ত্র ব্যবহার করতেন। এছাড়া আর যে সব মন্ত্র সেগুলি সংকলন করে তৈরি হলো ,সেগুলি হলো অথর্ব বেদ। তা হলে বেদ হলো ৪ প্রকার।মহর্ষি ব্যাস বেদকে এইভাবে ভাগ করেছিলেন বলে তাঁকে বলা হয় বেদব্যাস। 
বেদব্যাসের ৪ শিষ্য।পৈল,বৈশম্পায়ন ,জৈমিনি আর সুমন্ত্র।গুরু এই চার শিষ্যের প্রথম জনকে ঋকবেদ ,দ্বিতীয় জনকে যজুবেদ,তৃতীয় জনকে সামবেদ এবং চতুর্থ জনকে অথববেদ এর শিক্ষা দিলেন।বৈশম্পায়ন এর এক শিষ্য ছিলেন যাজ্ঞবল্ক্য। তিনি গুরুর কাছে   যজুবেদ শিক্ষা করে নিজের উপর অত্যধিক আত্মবিশ্বাসের ফলে সে বিদ্যা ত্যাগ করেন। বলাবাহুল্য গুরুও তাকে পরিত্যাগ করেন। পরে যাজ্ঞবল্ক্য নিজের ভুল বুঝতে পেরেই সূযের উপাসনা করে তাকে তুষ্ট করে আবার সেই বেদবিদ্যা আয়ত্ত করেছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাকি যাজ্ঞবল্ক্য এর পরিত্যাক্ত যজুবেদকে কৃষ্ণ যজুবেদ এবং নতুন করে শেখা যজুবেদকে শুক্ল যজুবেদ বলা হয়ে থাকে। 
আমরা ৪ টি বেদ এর কথা বলেছি বা পড়েছি। কিন্তু শাস্ত্রে অনেক জায়গায় বেদকে ত্রয়ী বলা হয়েছে অর্থাৎ বেদ তিনটি-ঋক,সাম আর যজুঃ।এ থেকে কারও কারও ভুল ধারণা আছে যে অথববেদ সত্যিকার বেদ নয়। অথর্ববেদে যে সব মন্ত্র আছে তা যজ্ঞে ব্যবহার করা হতো না বলেই ওকে ত্রয়ীর সাথে যোগ করা হয় নি।
প্রতিটি বেদে আবার ২ টো করে বিভাগ আছে -"মন্ত্র'' আর ''ব্রাহ্মন''।মন্ত্রকে আবার ''সংহিতা'' ও বলা হয়,কারণ মন্ত্রগুলো সমহিত বা একত্র করে সাজানো হয়েছিল। এই সমহিত কথাটি থেকেই সংহিতা কথাটি এসেছে।ব্রাহ্মন বলতে কিন্তু ব্রাহ্মন,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র এই ৪ বর্ণের যে ব্রাহ্মন তা মনে কর না। এ ব্রাহ্মন আলাদা। আসলে বেদের যে অংশে তার অপ্রকাশিত অর্থ ভালো করে বোঝানো হয়েছে,সংহিতার প্রয়োগ দেখানো হয়েছে-তারই নাম দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মন।ব্রহ্ম (ন) শব্দের মানেও বেদ,এবং তার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার দরুনই একে বলা হয় ব্রাহ্মন।কি আছে ব্রাহ্মণে ?কি করা উচিৎ,কি করা অনুচিত এই সব বিধিনিষেধ ,যাগযজ্ঞ কি ভাবে করতে হবে,ব্রহ্মবিদ্যা বলতে কি বোঝায়-এই রকম অনেক কথা। 
সে যুগে মানুষ ৫০ বছর বয়স হয়ে গেলেই সংসার ছেড়ে দিয়ে বনে গিয়ে বাস করতো।তাকে বলা হতো বানপ্রস্থ। বেদের কোনো কোনো অংশ এমনভাবে রচিত হয়েছে যে সেগুলি বিশেষ করে এই বনে অর্থাৎ অরণ্যে বসে চর্চা করবার উপযোগী। তাই এই অংশগুলোকে বলা হয় আরণ্যক। বনে গিয়ে তো আর লোকে যাগযজ্ঞের দিকে বেশি নজর দিতে পারে না -তখন মন চাই আরো উচ্চতর এবং দুরূহ তত্ত্বের কথা জানতে,আপন মনে ধ্যান বা উপাসনা করতে।আরণ্যক তাই অনেকটা সেভাবে রচিত। 
এ ছাড়া আরো একভাবে বেদকে ভাগ করা যেতে পারে -মোটামুটি ২ ভাগে। কর্মকান্ড আর জ্ঞানকাণ্ড। অবশ্য এ দুই নাম এ আলাদা কোনো বই নেই। সমস্ত বেদেই এই দুই অংশ অর্থাৎ কর্ম আর জ্ঞান এর আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। কর্মকান্ডে যাগযজ্ঞের বিধি এবং নানা রকম লৌকিক ক্রিয়াকলাপের কথাই বিশেষ করে আলোচনা করা হয়েছে।আর জ্ঞানকাণ্ডে আছে আরোও উচ্চাঙ্গের আধ্যাত্বিক সব আলোচনা। 
বেদের আর একটি বিষয়কে বলা হয় সূত্র। এক কথায় একে বলা যেতে পারে জ্ঞানলাভের বিধি। এই সূত্র কে আবার ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে-শিক্ষা ,ছন্দ,ব্যাকরণ,নিরুক্ত,জ্যোতিষ আর কল্প। শিক্ষা হলো স্তোত্র গুলি বিশুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করার রীতি ,ছন্দ হলো স্তোত্র রচনার ভঙ্গী,ব্যাকরণ হলো শুদ্ধ ভাবে প্রকাশ পদ্ধতি ,নিরুক্ত হলো শব্দের অর্থব্যাখ্যা,জ্যোতিষ হলো ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আলোচনা আর কল্প হলো যাগযজ্ঞের বিধান।
বেদের খানিকটা মোটামুটি পরিচয় শুধু এখানে দেওয়া হলো ,কিন্তু ভেতরের সব কথা বুঝিয়ে বলা এখানে সম্ভব নয়। শুধু এটুকু বলা যেতে পারে যে যেসব গূঢ় তথ্য অপূর্ব ভাষায় ও ভঙ্গীতে প্রকাশ করা হয়েছে তার কথা ভাবলে এই এতদিন পরেও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। অথচ সেই কোন অতীত যুগে আর্য ঋষিরা এই সত্য উপলব্ধি করে গেছেন!এই কারণে আজও তাঁদের বলা হয় সত্যদ্রষ্টা।

Tuesday, July 11, 2017

leonardo da vinchi

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি মানুষটি কেমন ছিলেন?
মোনালিসা ছবিটার কথা সবার হয়তো মনে আছে ,যিনি এই বিশ্ববিখ্যাত  ছবিটি একেঁছিলেন তার নাম ছিল লিওনার্দো দা ভিঞ্চি।এই দা ভিঞ্চির মতো মেধাবী পুরুষ ও কীর্তিমান শিল্পী পৃথিবীতে আর জন্মায় নি। এই মানুষটি কেমন ছিলেন সে সম্পর্কে আজ কিছু বলবো। 
১৪৫২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই এপ্রিল ইতালির বিখ্যাত ফ্লোরেন্স শহরের থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে ভিঞ্চি নামে একটি ছোট শহরে লিওনার্দো এর জন্ম হয়। 
চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই ইতালিতে নতুন যুগ এর হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। এই যুগটাকে বলা হয় রেনেসাঁস বা নবজাগরণের যুগ। লিওনার্দোর উপর এই যুগ এর প্রভাব বিশেষ ভাবে পড়েছিল ,তাই তাকে বুঝতে গেলে এই যুগটি সম্পর্কে একটু জানা দরকার। 
ঐতিহাসিকরা জানেন যে ,খ্রিস্টপূর্ব যুগে গ্রিসের সভ্যতা থেকে ইউরোপীয় সভ্যতা এর সৃষ্টি। যিশুখ্রিস্ট এর জন্মের ৮০০ বছর আগে থেকেই গ্রিস পশ্চিমের সভ্যতার ইতিহাসে একটা বিশেষ স্থান দখল করে। সামান্য কয়েকটি শহর নিয়ে গড়া এই গ্রিস সাম্রাজ্য বেশ কিছু প্রতিভাধর মনীষীদের আবির্ভাবের ফলে শিল্প ,সাহিত্য ,দর্শন ,স্থাপত্যে,ভাস্কর্যে ,রাজনীতি ইত্যাদিতে এমনি এক উন্নত চেহারা নিয়েছিল যেমন আর ইউরোপের কোথাও কখনো হয়নি। 
খ্রিস্টপূর্ব ১৪৬ অব্দে রোমের হাতে গ্রিসের পরাজয় ঘটে। কিন্তু তা সত্বেও গ্রিসের সংস্কৃতিকে রোম অগ্রাহ্য করতে পারেনি। গ্রিসের পরাজয়ের পরেও রোমের বহু ছাত্র দলে দলে যেত গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের একাডেমীতে পড়াশুনা করতে। 
এদিকে রোম সাম্রাজ্য ক্রমশ বাড়তে বাড়তে পুবে মেসোপটেমিয়া থেকে শুরু করে উত্তর আফ্রিকা,দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপ ,এমনকি ইংল্যান্ডের বেশ কিছু অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল। 
রোমানরা হিন্দুদের মতো অনেক দেবদেবী এর পুজো করতো। এদিকে ততদিন এ খ্রিস্টধর্ম এর প্রভাব বিস্তার হতে শুরু করেছে। চতুর্থ শতাব্দীতে রোম সম্রাট কনস্টান্টিন বুঝতে পারলেন যে পালাবদলের সময় এসেছে,খ্রিস্টধর্ম কে আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। তাই তিনি রোম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ইতালি থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন পুবে বাইজান্টিয়াম প্রদেশে ,নাম হলো কনস্টান্টিনোপল,এই  কনস্টান্টিনোপল হলো রোম সাম্রাজ্যের ঘাঁটি। 
অষ্টম শতাব্দী থেকে রোম সাম্রাজ্যের ভাঙন ধরতে শুরু করে। অবশেষে মধ্য এশিয়ার তুর্কিদের দাপটে কনস্টান্টিনোপল শহর ছাড়া বাইজান্টিয়াম এর সবকিছু তুর্কিদের অধিকারে চলে যায়। এরপর ক্রমশ ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে মধ্য এশিয়ার সমরখন্দ -বোখরা   থেকে পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত।
য়ুরোপ তখন ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্ম পাশাপাশি রয়েছে এবং দুয়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
রোমের পতন এর পর এই খ্রিস্টধর্ম পশ্চিমের জনসাধারণকে একসূত্রে বাঁধতে পেরেছিলো। এই যুগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ধর্মযাজকদের বিলাসিতা। তাদের স্থান ছিল সম্রাটের উপরে। তাদের বিধান কে সবসময় চূড়ান্ত বলে মেনে নেওয়া হতো। ফলে স্বাধীন ভাবনা চিন্তার সুযোগ কমে যায়। এই যুগ কে য়ুরোপে "মধ্যযুগ" বলা হয়। ইতালীয়রা এই যুগকে বলতো ''অন্ধকার যুগ''।
চতুর্দশ শতাব্দী থেকে ইতালিও মনীষীরা আবার নতুন করে গ্ৰীক আদর্শের কথা ভাবতে শুরু করেন। ধর্মের গোঁড়ামী র জন্য মানুষ যে প্রকৃত স্বাধীনতা হারাতে বসেছে সেটা তারা বুঝতে পারেন। 
এই যে মানুষের মনে নানান প্রশ্ন ,নানান জিজ্ঞাসার উদয় ও নিজের বিচার বিশ্লেষণ দিয়ে অজানাকে জানার যে প্রয়াস,সেটাই হলো নবজাগরণের প্রধান লক্ষণ। 
আর এই বিশেষ যুগের বিশেষ পরিবেশে লিওনার্দো এর জন্ম। 
তাঁর বয়স যখন ১৪ তখন তার বাবা তাকে পাঠান ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত শিল্পী ভেরোচ্চিতের ষ্টুডিও তে কাজ শিখবার জন্য। অল্প দিনেই তিনি তার গুরুকে ছাড়িয়ে যান। 
কিন্তু লিওনার্দো এর কাজের সংখ্যা যথেষ্ট ছিল না -গোটা দশেক ছবি তিনি এঁকেছিলেন।তিনি শুধু চিত্রশিল্পীই ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক ,বিজ্ঞানী,শারীরবিদ্যাবিদ ও আবিস্কারক। 
এই প্রতিটি বিষয় নিয়ে তিনি সারাজীবন ছবি একেঁছেন ও লিখে গেছেন।তাঁর লেখার ভাষা ছিল যেমন সুন্দর,তেমনি সহজ। তাঁর মতো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা খুব কম লোকের থাকে। 
 লিওনার্দো বেশিদূর লেখাপড়া করেছিলেন তা নয়,তিনি লেখা ও পড়ার পাশাপাশি অঙ্ক নিয়েও চর্চা করেছেন। এই সমস্ত বিষয় তিনি একটি খাতাতে লিপিবদ্ধ করতেন,এই খাতায় ছিল তার নিত্যসঙ্গী।
তার লেখার মধ্যে বিশেষত্ব ছিল,তিনি লিখতেন বাঁ হাতে আর লেখা চলতো ডানদিক থেকে বাঁদিকে অর্থাৎ সেটা পড়তে হলে তাকে আয়নার সামনে ধরতে হতো।আঁকা তিনি বাঁ হাতে আঁকতেন।
সাময়িকদের থেকে চিন্তা শক্তিতে তিনি অনেক এগিয়েছিলেন,পঞ্চদশ শতাব্দীতে তার মাথায় যুদ্ধ ট্যাঙ্ক বা হেলিকপ্টারের চিন্তা আসে,তার নোটবুকগুলিতে এর আভাস মেলে। যদিও যুদ্ধ জিনিসটা তিনি পছন্দ করতেন না। 
মানুষের অঙ্গপ্রতঙ্গ এর গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের জন্য তিনি নিজে হাতে ছুড়ি দিয়ে শবব্যবচ্ছেদ করেন ও তাঁর ছবি আঁকেন। 
পাখী ওড়ার ছবি এঁকে তিনি ওড়ার বিজ্ঞানসম্মত কারণ আবিষ্কারের চেষ্টা করেছিলেন। বাদ্যযন্ত্র এর নকশা এঁকেছেন প্রচুর।
১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের ২ রা মে এই মহান চিত্রশিল্পী মারা যান। 
মৃত্যু এর কয়েক বছর আগে তিনি নিজেই একটি নিজের ছবি আঁকেন।

Monday, July 10, 2017

Captain scott

দক্ষিণ মেরু অভিযান-ক্যাপ্টেন স্কট এর অভিযান
জ্ঞানের সীমাকে বাড়াবার জন্য,অজানাকে জানার জন্য মানুষ যে কি করতে পারে তা ক্যাপ্টেন স্কট এর কাহিনী থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়।
  ১৮৬৮ সালের ৫ ই জুন। ইংল্যান্ড এর ডিভনশায়ার এর এক গ্রামে ক্যাপ্টেন স্কট জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকে সমুদ্রের প্রতি তার একটা টান ছিল। সেইজন্য ছেলেবেলা থেকেই তিনি জাহাজের কাজ শিখতে থাকেন এবং কিশোরকালেই জাহাজের কাজে লেগে সমুদ্রযাত্রাও করেন। 
এই সময় বিশ্বের নানা দেশ থেকে  দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের নানারকম চেষ্টা চলছিল। কোন জাতির লোক আগে গিয়ে সেখানে পৌঁছাতে পারে সেই নিয়ে একটা গোপন স্বপ্ন সব জাতিরই অন্তরে জমা ছিল। 
স্কট যখন কামান্ডার হন। সেসময় ইংল্যান্ডে দক্ষিণ মেরু অভিযান এর জন্য একটা দল গড়া হচ্ছিলো। রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি  এই অভিযানের আয়োজন করেছিলেন। একদিন স্কট লন্ডনের পথে বেড়াচ্ছেন ,এমন সময় ওই সোসাইটি এর প্রেসিডেন্ট স্যার ক্লেমেন্টস মার্কহ্যাম এর সাথে তাঁর দেখা।স্যার মার্কহ্যামের সাথে পরামর্শ করে স্কট এই অভিযানের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। 
১৯০১ সালের আগস্ট মাসে "ডিসকভারি"নামক জাহাজে করে স্কট তাঁর দলবল নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে দক্ষিণ মেরু এর দিকে যাত্রা করেন।তাঁর সাথে একজন খুব বড়ো নাবিক ছিল,তার নাম আর্নস্ট স্যাকলটন।দক্ষিণ মেরুকে জগতের সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবার জন্য বিধাতাপুরুষ তাঁর চারিদিকে দুর্লঙ্ঘ্য বরফের প্রাচীর গড়ে রেখেছেন এবং তার ওপারে জাহাজ নিয়ে আর মানুষ যেতে পারে না ,মাঝে মাঝে এই বরফের প্রাচীরে ফাঁক দেখা যায়,বরফ যখন গলতে থাকে। 
ক্যাপ্টেন স্কট তাঁর দলসুদ্ধ সেই বরফের প্রাচীরের মাঝে এসে উপস্থিত হলেন ,কিন্তু বরফের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কোনো পথ না দেখে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন এবং ১৯০২ সালের  ফেব্রুয়ারী মাসে কিং এডওয়ার্ড দ্বীপে নোঙর ফেলে রইলেন। তখন দুরন্ত শীত,সমুদ্রের জল জমে বরফ হয়ে গেছে।তাঁরা ঠিক করলেন যে আর কিছুদিন পরে শ্লেজে করে যাত্রা করা যাবে। 
মাসকয়েক কাটিয়ে ১৯০২ সালে শ্লেজ যাত্রার সমস্ত  আয়োজন হয়ে গেলো। ঠিক হলো যে স্কট,স্যাকলটন ও উইলসনস মাত্র এই ৩ জন যাত্রা করবেন এবং সঙ্গে ১৯ টা কুকুর নেওয়া হবে। 
যাত্রা শুরু হলো সেই নির্দিষ্ট দেশের দিকে। কিছুদূর যেতে না যেতে নানা প্রকারের বাধা আসতে লাগলো। ক্রমশ তারা এগোতে লাগলেন। যেখান দিয়ে যান সেখানে এক এক জায়গায় তাঁবু ফেলে খাবার রেখে যান এবং প্রতিটি তাঁবু এর উপর একটা করে পতাকা গুঁজে রাখেন কারণ ফেরার সময় যখন খাবার দরকার হবে তখন এই সমস্ত তাঁবু থেকেই তা পাওয়া যাবে এবং ফেরবার পথের নিশানা হবে।
সমস্ত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস তাঁরা বরফের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হলেন।যতই এগোতে লাগলেন বরফের ঝড় তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। এই অবস্থায় আর বেশিদূর এগোনো যাবে না দেখে স্কট ফিরলেন। ফিরবার পথে বিপদ আরো ঘনিয়ে এলো। স্যাকলটন এর হলো অসুখ।তাছাড়া খাবারের ডিপোগুলো এতো দূরে দূরে পোঁতা হয়েছিল যে এক ডিপো থেকে আর এক ডিপোতে পৌঁছাতে সবাই ক্ষুধায় কাতর ও অজ্ঞান হয়ে পড়তে  লাগলো। বিশেষ করে কুকুরগুলো, তারাই শ্লেজ টেনে নিয়ে চলেছে। সেজন্য কুকুরের খাবার জোগাড়ের জন্য তারা একটা কুকুর মেরেই তার মাংস অপর কুকুরগুলোকে খাওয়াতে লাগলেন। এই রকম করে তাঁরা কোনোক্রমে জীবন নিয়ে সে যাত্রায় কিং এডওয়ার্ড দ্বীপে ফিরে এলেন।
কয়েক মাস সেই দ্বীপে কাটিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলেন। এবার সঙ্গে মাত্র দুজন সঙ্গী ইভান্স আর লাসলি।এবার তারা চাকাওয়ালা স্লেজে যাত্রা করলেন।,সঙ্গে কুকুর নিলেন না। কিন্তু অনেক দূর যাওয়ার পর খাদ্যের সংস্থান ফুরিয়ে আসতে লাগলো। এবারেও তাঁরা ফিরতে বাধ্য হলেন। 
১৯০৩ সালের শেষাশেষি আবার তাঁরা তাঁদের জাহাজে ফিরে এলেন এবং ঠিক করলেন এবারকার মতো ইংল্যান্ড এ ফিরে যেতে হবে। কিন্তু নতুন বিপদ ঘটলো। সামনের সমস্ত পথ বরফে বন্ধ হয়ে গেছে।বারো মাইল পর্যন্ত ঘন বরফ পথ আটকে দাঁড়িয়েছিল। তাঁরা নানারকম যন্ত্র দিয়ে সেই বরফ কেটে পথ তৈরি করতে লাগলেন,কিন্তু কিছুদিন চেষ্টা করে বুঝলেন এ অসাধ্যসাধন।বরাতক্রমে সেবার খুব শিগগিরি বরফ গলতে আরম্ভ করলো এবং কিছুদিন যেতে না যেতেই স্কট দেখলেন বরফ গলে তাঁদের যাওয়ার পথ তৈরি হয়ে গেছে।তাঁরা এ যাত্রায় যতদূর গিয়েছিলেন তার থেকে আরো ৪৬৩ মাইল দূরে ছিল দক্ষিণমেরু।কিন্তু এর আগে কেউই আর দক্ষিণমেরু এর এতো কাছে আসতে পারেন নি। 
স্যার আর্নেস্ট স্যাকলটন ১৯০৮ সালে নিজের দল নিয়ে আবার দক্ষিণ মেরু রওয়ানা হলেন,কিন্তু তাঁকেও ফিরে আসতে হলো। তবে এবার আরোও ৯৭ মাইল যেতে পারলেই স্যাকলটন এর ভাগ্যেই দক্ষিণমেরু আবিষ্কারের প্রথম গৌরব লেখা থাকতো। 
ক্যাপ্টেন স্কট যখন শুনলেন যে স্যার  স্যাকলটন ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন তখন তিনি আর ঘরে বসে থাকতে পারলেন না। ঠিক করলেন যে এবার তিনি যে যাত্রা করবেন ,তাতে হয় দক্ষিণমেরু পৌঁছোবেন,নয় ইংল্যান্ড এ আর ফিরবেন না। এবার স্কট দক্ষিণমেরুতে পৌঁছোলেন বটে ,কিন্তু ইংল্যান্ডে আর তাঁর ফেরা হলো না। 
১৯১০ সালের জুন মাসের  প্রথম দিকে দলবল নিয়ে স্কট "টেরানোভা'' জাহাজে দক্ষিণমেরুর পথে আবার যাত্রা করলেন। ১৯১১ সালের প্রথম দিকে তিনি আবার সেই দুর্লঙ্ঘ্য বরফের প্রাচীরের কাছে উপস্থিত হলেন। 
এখান থেকে দক্ষিণমেরু ৩৫০ মাইল দূরে। এই ৩৫০ মাইল যাওয়া ও ফিরে আসার আয়োজন করতে সেপ্টেম্বর মাস এসে গেল। ১৯১২ সালের নববর্ষের প্রথম দিনে ৮ জন সঙ্গী নিয়ে তিনি দক্ষিণ মেরু এর ১৭০ মাইলের মধ্যে এসে পড়লেন। সেখানে কয়েকদিন বিশ্রাম করে যাত্রার পথে মাত্র ৪ জন  সঙ্গীকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। সঙ্গে যে যে রসদ নেওয়া হলো তা ডিপোতে ডিপোতে জমা রেখে তাঁরা ক্রমশ দক্ষিনমেরু এর দিকে এগিয়ে চলতে লাগলেন এবং পথে কোনো বিশেষ বিপদের মধ্যে না পড়ে তাঁরা ১৮ জানুয়ারী ১৯১২ সাল,তাদের জীবনের ঈপ্সিত দেশ দক্ষিণ মেরুতে এসে উপস্থিত হলেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এর বিষয় যে ক্যাপ্টেন স্কট সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখেন যে ,যেখানে তাঁরা তাঁদের  দেশের পতাকা প্রথম পুঁতবেন বলে ভেবেছিলেন ,সেখানে নরওয়ে দেশের পতাকা উড়ছে। তাঁদের কয়েক সপ্তাহ আগে নরওয়ের বিখ্যাত আবিস্কারক আমুন্ডসেন দাক্ষিণমেরুর প্রথম আবিস্কর্তার গৌরব অর্জন করে চলে গেছেন।সেই জনমানবহীন অনন্ত তুষারের দেশে   নরওয়ের পতাকা,আর কাষ্ঠফলকে আমুন্ডসেন এর নাম তার বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। 
এবার ফেরবার পালা। যাওয়ার সময় তখন কোনো বিপদ হয় নি ,কিন্তু ফেরবার মুখে পথে পথে ভয়াবহ বিপদ এসে বাধা দিতে লাগলো। হাওয়া আর বয় না তার জায়গাতে বয় জমাট বরফের কণা।দিনের পর দিন আকাশ পৃথিবী কিছুই দেখা যায় না,শুধু বরফের বৃষ্টি। সেই ভয়াবহ অবস্থা এর  মধ্যে দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ  অবস্থায় ৫ জন লোক চলেছে।পথের দিশা অনন্ত তুষারপাতের মধ্যে হারিয়ে গেছে। অনাহারে সর্বশরীর অবসন্ন। এই অবস্থায় একদিন ইভানস পড়ে গেলেন ,আর উঠলেন না। সাদা বরফ তাঁর মৃতদেহের উপর কবর রচনা করলো। তুষারপাত প্রতিদিন বেড়ে চলতে লাগলো। অবশেষে তাঁরা একটি ডিপোতে এসে উপস্থিত হলেন। এরপর একরাতে ক্যাপ্টেন ওটস বাইরে গেলেন ,কিন্তু আর ফিরলেন না। 
সেই  ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে অবশিষ্ট দুজন সঙ্গী কে নিয়ে স্কট অগ্রসর হতে লাগলেন। অবশেষে ক্লান্ত দেহে তাদের সঙ্গে যে তাঁবুটি ছিল তাই খাটিয়ে তার ভিতরে ঢুকলেন তাঁরা।তাঁরা ভালোভাবে জানতেন এই তাঁবু ই তাদের কবর। পাশের সঙ্গীর তখন মৃত্যুশ্বাস উপস্থিত। মৃত্যু এর হিমস্পর্শ স্কটের সর্ব অঙ্গ শিথিল করে দিচ্ছিলো। সেই মৃত্যু এর আগে তিনি তার ডাইরীর শেষ পাতা লেখেন -"গত একমাসে আমরা যে কষ্ট পেয়েছি আমি ভাবতে পারি না ,কোনো মানুষ কোনো দিন সেরকম কষ্ট সহ্য করেছে কিনা। তবুও আজ ভাগ্যের বিরুদ্ধে আমার কোনো নালিশ নেই,যা পেয়েছি তা মাথা পেতে গ্রহন করেছি। যদি আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম ,তাহলে সমস্ত ইংল্যান্ড শুনতে পেত যে ,ইংল্যান্ড এর গৌরব এর জন্য তার কয়েকজন সন্তান কি কষ্টই না সহ্য করেছে-আমাদের এই মৃতদেহ আর এই লেখা হয়তো জগতে একদিন সে কাহিনী এর সাক্ষ্য দেবে-।
ক্যাপ্টেন স্কটকে যারা খুঁজতে গিয়েছিলেন,তাঁরা তাঁর মৃতদেহের সাথে তার ডাইরীও পান।

Saturday, July 8, 2017

TROY

                     হোমারের লেখা ইলিয়াড ও ওডিসি এর গল্প (সংক্ষেপিত)

আমাদের সংঙ্কৃত সাহিত্যে যেমন রামায়ণ আর মহাভারত,তেমনি গ্রিক ভাষায় ও অনুরূপ দুখানি মহাকাব্য হচ্ছে "ইলিয়াড" আর "ওডিসি"।ইউরোপের সবচেয়ে পুরোনো সভ্য দেশগুলি র একটি হচ্ছে গ্রিস। সেখানে থিবস নাম এ এক নগর ছিল। এই নগরের তোরণে একজন অন্ধ চারন কবি গান গেয়ে ভিক্ষা করতেন। রাজরাজাদের কাহিনী নিয়ে তিনি গান বাঁধতেন। কাহিনীগুলি এমনই চিত্তাকর্ষক যে হাজার হাজার বছর পরেও লোকে তা ভোলে নি। ভোলে নি সেই অন্ধ চারন কবির নামটিও।ইনি হচ্ছেন  ইলিয়াড ও ওডিসি এর রচয়িতা মহাকবি হোমার।
এই ইলিয়াড আর ওডিসি আমাদের রামায়ণ-মহাভারতের মতোই দুখানি মহাকাব্য আর আমাদের দেশের রামায়ণ-মহাভারতের মতোই বই দুখানি ওদেশে আদর পেয়ে আসছে। শুধু আদরই পায় নি,যুগে যুগে কত কবি ,কত সাহিত্যিক কে প্রেরণা যুগিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে লোকে সেই বিস্ময়কর কাহিনী শুনতে শুনতে কৌতূহলে,বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়েছে।হর্ষে   বিষাদে ভরে গেছে তাদের মন। পৃথিবীর কত ভাষায় যে বই দুটি অনূদিত হয়েছে তার ঠিক নেই। রামায়ণ-মহাভারতের মতোই বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাস এ এই দুটি বই এর সমকক্ষ বই খুব কমই আছে।
                                                        "ইলিয়াড" এর কাহিনী
গ্রিস দের দেবতা স্বর্গে র রাজা জিউস।একদিন এক ভোজসভায় সমস্ত দেবদেবী কে তিনি নিমন্ত্রণ করলেন। কিন্তু বাদ পড়লেন একজন। তিনি হচ্ছেন অশান্তি এর দেবী। অশান্তি দেবী ক্ষুন্ন হলেন। আড়াল থেকে দেবতাদের সভায় তিনি একটি সোনার আপেল ফেলে দিলেন,আর আপেলের গায়ে লিখে দিলেন," সবার চেয়ে যে সুন্দরী এ আপেল টি তার জন্য"।
এখন দেবী দের মধ্যে তিনজন ছিলেন পরমা সুন্দরী -হীরা,এথিনা আর আফরোডাইট।তিন জনেই দাবি করলেন আপেলটি।শেষে যখন নিজেদের মধ্যে মীমাংসা হলো না তখন তারা নেমে এলেন পৃথিবীতে। ট্রয় এর রাজপুত্র প্যারিস -পরম সুন্দর পুরুষ বলে তাঁর অসম্ভব খ্যাতি।পাহাড়ের উপর বসে তিনি পিতার মেষ পাহারা দিচ্ছিলেন।তিনি দেবী এসে বিচারের ভার দিলেন তাঁরই ওপরে।
কিন্তু সেই সঙ্গে তিনজনই নানারকম লোভ দেখাতেও ছাড়লেন না। হীরা দেবরাজ জিউসের পত্নী ,তিনি লোভ দেখালেন ক্ষমতার। এথেনা লোভ দেখালেন জ্ঞান ও বিদ্যার। আর আফ্রোডাইট?তিনি দেখালেন ভালোবাসার। বল্লেন "ক্ষমতা আর বিদ্যা দিয়ে কি হবে প্যারিস,আমাকে যদি তুমি সবসেরা মেনে নিয়ে আপেল টি দাও তা হলে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেব।
প্যারিস আর চিন্তা না করে আফ্রোডাইট কে দিয়ে দিলেন আপেলটা। ফলে একজন যেমন খুশি হলেন আর দুজন গেলেন ভীষণ চটে। তারা ঠিক করলেন প্যারিসকে এর শাস্তি দিতে হবে।
গ্রিস দেশের স্পাটা রাজ্য,তারই রাজা মেনেলাস। তার পত্নী হেলেন ছিলেন তখন পৃথিবীর সব-সেরা সুন্দরী।আফ্রোডাইট এর চক্রান্তে প্যারিস স্পাটা রাজ্যের অতিথি হলেন। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে এলেন নিজের দেশ ট্রয় এ।
গ্রিকরা এ অপমান সহ্য করতে রাজি হলো না। মেনেলাস এর দাদা এগামেমনন ছিলেন গ্রিসের সম্রাট। তিনি গ্রিসের সমস্ত রাজাদের একত্রিত করলেন। সদলবলে ট্রয় আক্রমণ করলো গ্রিকরা। অবরোধ করে রাখলো প্রাচীর ঘেরা শহর।
শুরু হলো যুদ্ধ। বিখ্যাত ট্রয়ের যুদ্ধ। এই নিয়ে লেখা হোমারের ইলিয়ার্ড কাব্য।ট্রয়ের আর একনাম ইলিয়াম।তাই থেকে বইয়ের ওই নাম। অধিবাসীদের বলা হতো ট্রোজান। ১০ বছর ধরে যুদ্ধ চললো। হাজার হাজার গ্রিক বীর ও ট্রোজান বীর নিহত হলেন। তাঁদের মধ্যে ট্রোজানদের বীর সেনাপতি হেক্টর এবং গ্রিকদের শ্রেষ্ঠ বীর আকিলিস ও ছিলেন।কিন্তু জয় পরাজয়ের নিস্পত্তি হলো না। তারপর হঠাৎ একদিন গ্রিকরা লড়াই ছেড়ে দিয়ে দেশে ফেরার জন্য জাহাজে গিয়ে উঠলো।নগরের বাইরে যুদ্ধের মাঠে পরে রইলো একটা প্রকান্ড কাঠের ঘোড়া।
ট্রোজানরা ভাবলো গ্রিকরা বুঝি ঘোড়াটা ফেলে পালিয়েছে। বিজয়ের চিহ্ন হিসাবে মহাসমারোহে তারা সেটা টেনে নিয়ে এলো শহরের মধ্যে।
আসলে সেটাই ছিল গ্রিকদের একটা কৌশল। ওই বিরাট কাঠের ঘোড়াটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে তার পেটটা ছিল ফাপাঁ আর তার মধ্যে লুকিয়ে ছিল বাছাই-করা যত গ্রিক সৈন্য।রাত দুপুরে যখন সমস্ত ট্রোজানরা উৎসব কোলাহলে মত্ত ,তখন ওই গ্রিক সৈন্য রা ঘোড়ার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নগরের ফটক খুলে দিলো ,অন্য গ্রিক  সৈন্য রা সত্যি সত্যি জাহাজ চড়ে পালায় নি ,তারা কাছে পিঠে লুকিয়ে ছিল। ফটক খুলতে তারা দলে দলে নগরের মধ্যে ঢুকে পড়লো।
তারপর? তারপর আর কি ,শুরু হলো হত্যাকান্ড ,লুটপাট। আগুন জ্বালিয়ে সমস্ত শহর পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিলো তারা।
এইভাবে শেষ হলো ১০ বছরের ট্রয় যুদ্ধ। হেলেনকে উদ্ধার করে গ্রিকরা ফিরে এলো নিজেদের দেশে।
                                                                       "ওডিসির গল্প"
হোমারের অপর মহাকাব্য হচ্ছে ওডিসি -ট্রয় যুদ্ধের অন্যতম গ্রিক নায়ক ওডিসি বা ওডিসিউস কে নিয়ে লেখা। ঠিক ইলিয়ার্ড এর পরবর্তী ঘটনা নিয়ে রচিত এই মহাকাব্য।
ট্রয় যুদ্ধের পর ফেরার পথে একখানা জাহাজ ঝড়ের মুখে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। সেই জাহাজে ছিলেন ইথাকার রাজা ওডিসি বা ওডিসিউস। পথভ্রান্ত হয়ে তিনি সাগরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। জাহাজ কাল এ দ্বীপে গিয়ে লাগে ,কাল ও দ্বীপে। এক এক রকম দ্বীপে এক এক রকম বিপদ দেখা দেয়। বুদ্ধি সাহস কিংবা শক্তি দিয়ে ওডিসিউস সে বিপদ কাটিয়ে ওঠেন। এই ভাবে কেটে যায় কয়েক বছর।
এক দ্বীপে বড় বড় পদ্ম ফোটে ,সেই পদ্মের মধু খেলে মানুষ মাতালের মতো শুধু পড়ে পড়ে  ঘুমায়।জাহাজের লোকজন দ্বীপে নেমে সেই পদ্ম মধু খেয়ে অসাড় হয়ে পড়ে রইলো। বহুকষ্টে ওডিসিউস তাদেরকে আবার জাহাজে নিয়ে তুললেন।
এক দ্বীপে থাকে সাইক্লোপস নামে একচক্ষু -ওয়ালা এক দানব। মানুষ পেলেই সে ধরে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখে ,তারপর এক একটিকে ধরে আগুনে ঝলসিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে। ওডিসিউস  এর দলকেও সে বন্দি করলো। তার চোখ থাকতে তার নজরকে ফাকি দেয়া যাবে না বুঝে ওডিসিউস এক মতলব আঁটলেন। দানব যখন ঘুমোচ্ছিলো তখন একটা জ্বলন্ত ছুঁচোলো লাঠি তার চোখে ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে অন্ধ করে দিলেন। দানব কিন্তু তাতেও দমল না,সে গুহার মুখে বসে পাহারা দিতে লাগলো। কিন্তু দানবের ছিল অনেকগুলো  ছাগল, তাদের চরবার জন্য গুহার বাইরে ছেড়ে দেওয়া দরকার। পাছে কেউ ছাগলের পিঠে চেপে পালায় এজন্য দানব পিঠে হাত বুলিয়ে পরীক্ষা করে তাদের ছাড়তে লাগলো। আর ওদিকে ছাগলদের পেটের তলায় ঝুলতে ঝুলতে  ওডিসিউস   দলবল নিয়ে  বেরিয়ে এলেন গুহা থেকে। দানব টের পেলো না যে ছাগল গুলোর পেটের নিচে মানুষ ঝুলছে।
জাহাজে উঠে  ওডিসিউস দানবকে টিটকিরি দিতেই দানব তার আত্মীয় দের নিয়ে ছুটে এলো ,আর তীর থেকে জাহাজ লক্ষ করে বড় বড় পাথর ছুঁড়তে লাগলো। কোনোক্রমে প্রাণ নিয়ে তারা জাহাজ ছেড়ে দিলেন।
মাঝসমুদ্রে রাতের অন্ধকারে মায়াবিনী মৎসকন্যেরা গান গায়। পাগল করা সেই গান শুনলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। মুগ্ধ হয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় জলে পাগলের মতো।ওডিসিউস সঙ্গীদের কান আগে থাকতেই মোম দিয়ে  বন্ধ করে দেন যাতে কেউ না সে গান শুনতে পায়। কিন্তু নিজে তিনি গান শোনার লোভ দমন করতে পারেন না। কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য নিজেকে বেধেঁ রাখেন মাস্তুলের সাথে। তবু গান শুনে আত্মহারা হয়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। কিন্তু সঙ্গীরা কেউ বাঁধন খুলে দিতে নারাজ -কারণ সেই রকম নির্দেশ দেওয়া ছিল তাদের কে।  আর কানে মোমের ছিপি  আটকানো থাকায় তারা তো কেউ গান শুনতে পাচ্ছিলো না।
আর এক দ্বীপে থাকে এক জাদুকরী ,তার নাম সার্সি।মানুষ পেলেই সে ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে জাদুর কাঠি ছুঁইয়ে তাদের শুয়োর বানিয়ে রাখে। ওডিসিয়াস এর সাথীদের সে শুয়োর বানিয়ে খোঁয়াড়ে পুরে রাখলো। তারপর ওডিসিয়াস স্বয়ং গিয়ে বুদ্ধির জোরে তাকে জব্দ তো করলেনই ,শেষপর্যন্ত জাদুকরী তার এমন ভক্ত হয়ে পড়লো যে তার সঙ্গীদের  এবং আরো যে সব লোককে সে জানোয়ার বানিয়ে রেখেছিলো তাদের সবাই কে সে তো মুক্তি দিলোই,উপরন্তু  ওডিসিয়াস কে কিছুতেই ছাড়তে রাজি হলো না।ওডিসিয়াস বেশ কিছুকাল তার অতিথি হয়ে কাটিয়ে ফের সমুদ্রে ভাসলেন।সার্সি চোখের জলে তাকে বিদায় জানালো ,সেইসাথে পথে তাদের যাতে কোনো বিপদ না হয় তাই প্রতিকূল বাতাসগুলোকে সে জাদুবলে একটা থলিতে আটকে সঙ্গে দিয়ে দিলো -যাতে সেগুলো কোনো উপদ্রব করতে না পারে। কিন্তু   ওডিসিয়াস এর সঙ্গীদের কারো কারো হলো দূরবুদ্ধি ,কি আছে থলির ভিতরে তা জানার জন্য থলি খুলতেই হু হু করে সমস্ত বাতাস বার  হয়ে এলো আর জাহাজ ফের ঝড়ের মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে চললো বিপথে।
যাই হোক ,এই ভাবে আরো নানান বিপদ আপদ কাটিয়ে ,সঙ্গীদের অনেককে পথে হারিয়ে অবশেষে একদিন ওডিসিয়াস ইথাকায় এসে পৌঁছলেন।
এদিকে প্রায় ২০ বছর ওডিসিয়াস দেশ ছাড়া। এই সুযোগে নানা জায়গা থেকে একদল যুবক (তাদের মধ্যে অনেক রাজপুত্র ও আছে ) এসে জুটেছে রাজবাড়িতে। তারা বলছে রাজা ওডিসিয়াস মারা গেছেন।এখন বিধবা রানী পেনেলোপী তাদের কাউকে বিয়ে করুন ,সেই হবে নতুন রাজা।
রানী পেনেলোপী এর কিন্তু আর বিয়ের ইচ্ছা নেই। তাঁর পুত্র টেলিমেকাস ও বড়ো হয়ে উঠেছে। রানী একখানি কাপড় বুনতে শুরু করলেন। বললেন," এটা হবে আমার বিয়ের পোশাক''।বোনাটা শেষ হলে তিনি স্বয়ম্বর সভা ডাকবেন।
এদিকে দিনের বেলা রানী যেটুকু বোনেন ,রাতে আবার চুপি চুপি তা খুলে ফেলেন। কাপড় বোনা তাঁর আর শেষ হয় না। কিন্তু যুবক দের দলটা আর থাকতে তা পেরে হইচই শুরু করলো।
ওডিসিউস ভিখারির  ছদ্মবেশে রাজধানীতে প্রবেশ করলেন। সমস্ত ব্যাপার শুনলেন ও দেখলেন। তারপর শুরু হলো তাঁর তান্ডব লড়াই ওই বিবাহে ইচ্ছুক যুবক দের সাথে। তাদের মেরে ধরে তাড়িয়ে দিয়ে আবার ইথাকার সিংহাসন এ এসে  বসলেন।তারপর স্ত্রী পুত্র নিয়ে সুখে রাজত্ব করতে লাগলেন।

Thursday, July 6, 2017

sir Isaac Newton

মহা বিজ্ঞানী নিউটন মানুষটি কেমন ছিলেন?
স্যার আইজ্যাক নিউটন।বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম।শুধু কি মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব ? নিউটন এর আবিষ্কৃত অঙ্কের নানা সূত্র,আলোক বিজ্ঞানের নানা রহস্য,আরো কত এটা-ওটা-সেটা খুঁটিনাটি আবিষ্কার তাকে সর্বযুগে  সর্বদেশের বিজ্ঞানীদের প্রথম সারির আসনে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে দেবে এমন সাধ্য কারোও নেই। নিউটন পৃথিবীতে এসেছিলেন আজ থেকে ৩০০ বছর আগে ,কিন্তু এই ৩০০ বছর পরেও তাঁর আসন সেখানে অটল হয় আছে। 

এ হেন নিউটন লোকটি কেমন ছিলেন জানার আগ্রহ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বড়ো পণ্ডিত যখন,তখন মনে হবে লোকটি ছিলেন সাদাসিদে ,ঢিলেঢালা স্বভাবের মানুষ ,সাজপোশাকে ,চালচলনে আড়ম্বরের ধার ধারতেন না নিশ্চয়। ঠিক তাই। শুধু সাদাসিদে ,অনাড়ম্বর বললে ভুল হবে -নিউটন ছিলেন একেবারে আত্মভোলা মানুষ। তুখোড় বুদ্ধি ,অঙ্কে অসাধারণ মাথা ,যে কোনো কঠিন অঙ্কের সমাধান মুহূর্তের মধ্যে করে দিতে পারতেন,কিন্তু সাংসারিক ব্যাপারে একেবারেই বেমানান। রাত দিন আপন মনে কি চিন্তা করে চলেছেন,সামনে কি ঘটছে না ঘটছে খেয়ালই নেই!
সেই ছেলেবেলা থেকেই এই। 
নিউটন এর বয়স যখন বছর ১৪ তখন তাঁর মা একবার তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে ক্ষেতখামার দেখাশোনার কাজে লাগিয়ে দেন,সংসার চালাবার জন্য এই ব্যবস্থার বিশেষ দরকার হয়ে পড়েছিল তখন। প্রতি শনিবারে গ্রান্টহাম শহরে হাট বসত। নিউটন এর উপর ভার ছিল এই হাটএ প্রতি শনিবার গিয়ে কেনাবেচা করতে হবে। অবশ্য সঙ্গে একজন কাজের লোক ও যাবে। নিউটন এর ছিল বই পড়ার প্রবল নেশা।হাটে গিয়ে কেনা-বেচা করার জন্য ভগবান তাঁকে পৃথিবীতে পাঠান নি। নিউটন করতেন কি হাটে না গিয়ে,পথে একটা পাহাড় পড়ত,-স্পিটল গেট পাহাড় -তারই তলায় একটা নিরিবিলি ঝোপের আড়ালে গিয়ে বই খুলে বসতেন। হাটের কেনাবেচা যা করার তা কাজের লোকটি করতো। ফিরবার সময় এ সে নিউটন কে ডেকে নিয়ে যেত। 
সে আমলে যানবাহন বলতে ঘোড়াকে ব্যবহার করা হতো বেশি।নিউটন  ও লম্বা পথ যেতে হলে ঘোড়া নিয়ে যেতেন। একবার নিউটন ঘোড়া নিয়ে সেই স্পিটলগেট পাহাড় পার হচ্ছিলেন।এবড়োখেবড়ো পাহাড়ী পথে ঘোড়ার পিঠে যেতে কষ্ট হচ্ছিলো,তাই নিউটন ঘোড়া থেকে নেমে ঘোড়ার লাগাম ধরে চলতে লাগলেন। ঘোড়াটা পিছন পিছন আসতে লাগলো। নিউটন লাগাম হাতে আগে আগে চললেন। একটা অঙ্ক নিয়ে ভাবতে ভাবতে চলেছেন তিনি,অন্য কোনো দিকে হুঁশ ছিল না। 
ক্রমে পাহাড় পার হয়ে সমতল রাস্তায় চলে এলেন নিউটন। তখন ভাবলেন এবার ঘোড়ায় চড়া যেতে পারে। কিন্তু চড়তে গিয়ে দেখেন ,কোথায় ঘোড়া !ঘোড়া কখন লাগাম খুলে বেরিয়ে পালিয়ে গেছে,তিনি শুধু লাগাম ধরেই এতখানি পথ চলে এসেছেন। 
এই অন্যমনস্কতা তাঁর পরিণত বয়েস এও কমে নি। আর একবার এর একটা ঘটনার কথা বলি। 
নিউটন তাঁর এক বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করেছেন ,তারপর সে কথা একদম ভুলে গেছেন। এদিকে নির্দিষ্ট সময় সেই বন্ধু এসে দেখেন-কোথায় নিউটন তাঁর কোনো পাত্তা নেই!বসে বসে শেষে ধর্য্যের বাধঁ ভেঙ্গে গেল তাঁর।কখন খাবার সময় হয়ে গেছে,খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। অগত্যা পা টিপে টিপে খাওয়ার ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। টেবিল এর উপর খাবার ঢাকা দেয়া রয়েছে। একা নিউটন এর মতো খাবার। বন্ধু আর অপেক্ষা না করে সেই খাবার খেয়ে নিলেন। তারপর তাঁর মাথায় এলো একটা দুস্টুবুদ্ধি-নিউটন কে জব্দ করতে হবে। তিনি ফেলে দেওয়া হাড়-কাঁটা গুলো খাবারের প্লেট এ সাজিয়ে ঢেকে রেখে দিলেন। 
খানিকপরেই নিউটন এসে হাজির। বন্ধুকে দেখে বললেন আরে তুমি যে !এমন অসময়এ! কি ব্যাপার?তাঁকে যে নিমন্তন্ন করা হয়েছিল তা তিনি একদম ভুলে গেছেন।
খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর নিউটন বললেন দাঁড়াও আমার খাওয়া হয় নি ,চট করে খেয়ে নি। তুমি বরঞ্চ ওই ঘরে এসে বস। 
বন্ধু মনে মনে হেসে নিয়ে নিউটন এর খাবার ঘরে ঢুকলেন।নিউটন আরাম করে বসে খেতে গিয়ে দেখেন কোথায় খাবার হাড় কখানা শুধু পড়ে আছে !তিনি লজ্জা পেয়ে বললেন দেখেছ আমার কি ভুলো মন। আগে এ খেয়ে গেছি কিন্তু সে কথা একদম মনে নেই। 
এ হেন লোকের জীবনযাত্রা এর পথে পদে পদে বাধা পড়বে তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে। আর ঠিক একারণেই বাধা পড়েছিল তার বিয়ের ব্যাপারেও।
নিউটন এর বয়েস তখন বছর তেইশ। বিয়ে করেন নি। কিন্তু তাঁর এক দূরসন্পর্কের আত্মীয়াকে বিয়ে করার ইচ্ছা হয়েছে। ওদেশে তো ছেলেমেয়েরা বিয়ের ব্যাপারে নিজেরাই পাত্রপাত্রী বেছে নেয়,এ ক্ষেত্রে তাই। কিন্তু বলি বলি করে প্রস্তাব টা আর করতে পারছেন না নিউটন।শেষে একদিন ঠিক করলেন মেয়ে টি এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব করবেনই করবেন। 
দুজনে একত্র বেড়াতে বেরোলেন। নিউটন তখন একটা জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন। মেয়ে টি কথাপ্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে বসলো ,গবেষণার কাজ কতটা এগিয়েছে ? ব্যাস আর নিউটন কে পায় কে ?তিনি তখনি শুরু করলেন বক্তৃতা।তাঁর জটিল গবেষণার কথা মেয়েটা কে বোঝাতে শুরু করলেন। স্বল্পভাষী নিউটন এর মুখ দিয়ে যেন কথা র খই ফুটছে। হবে না কেন ,তিনি যে তখন তাঁর নিজের মনের মতো বিষয় পেয়ে গেছেন। 
এদিকে মেয়েটি এর অবস্থা বোঝো। বিজ্ঞানের সে কোনো ধার ই ধার এ না। বিশেষ করে নিউটন এর জটিল অঙ্কের ব্যাপার বোঝা তার পক্ষে তো অসম্ভব। নেহাৎ ভদ্রতার খাতিরে সে কথাটা পেড়েছিল।কিন্তু তাতে যে এমন কান্ড ঘটবে সে কল্পনাও করতে পারে নি। 
মেয়েটি প্রতি মুহূর্তে ভাবছে ,নিউটন এইবার নিশ্চয় থামবে। থেমে এইবার তার কাছে বিয়ের প্রস্তাবটা করবে। কিন্তু নিউটন তখন নিজের ভাবরাজ্য এ ঘুরছেন।তিনি যে আজ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন সে কথা ততক্ষনে বেমালুম ভুলে গেছেন।
সেদিন আর প্রস্তাব টা তোলা হলো না নিউটন এর। তারপর দিন ও নয়। তারপর বলি বলি করে আর কোনো দিনই ফুরসৎ হলো না তার সে প্রস্তাব তুলবার।শেষে নিউটন আজীবন বিয়ে না করে কাটিয়ে দিলেন।
নিউটন নাকি হাসতেন খুব কম,অট্টহাসি তো নয়ই কিন্তু একবার তিনি সেই অট্টহাসি ই হেসেছিলেন। গল্পটা এই রকম : নিউটন তাঁর এক বন্ধুকে  একটা বই পড়তে দিলেন। বললেন ,পড়ে দেখো এমন চমৎকার বই তুমি আগে পড়ো নি। বন্ধু বই নিয়ে চলে গেলেন ,কিন্তু দিন দু বাদেই সেটা ফেরত নিয়ে এলেন। বাঃ এর মধ্যে পড়া হয়ে গেলো,তা কেমন লাগলো বইখানা ? -হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন নিউটন।
বন্ধু ঠোট আর নাক কুঁচকে জানালেন বই টি এর মধ্যে কোনো রস ই তিনি খুঁজে পান নি আসলে বই টি তার ভালো লাগে নি। 
ঘর কাঁপিয়ে  অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো নিউটন। বলো কি হে ইউক্লিড এর জ্যামিতি তোমার ভালো লাগে নি। এমন অবাক করা কথা তিনি জীবন এ শোনেন নি। 
জীবন এ নিউটন বোধ হয় ওই একদিন ই প্রাণ খুলে হেসেছিলেন।

Wednesday, July 5, 2017

MUMMY

কলকাতার মমি রহস্য
৬ আগস্ট,১৮৩৪ বুধবার।
সন্ধ্যেবেলা কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি এর পুরোনো বাড়িতে কাউন্সিল এর সভা বসেছে। সোসাইটির সহ সভাপতি  রেভারেন্ড এইচ মিল সেদিনের সভাপতি।বোম্বাই (মুম্বাই ) থেকে চিঠি এসেছে ই.সি.আর্চবোল্ড এর।আর্চবোল্ড সাহেব বেঙ্গল লাইট ক্যাভেলরি এর লেফটেন্যান্ট। ৫ জুলাই এর সেই চিঠিতে তিনি লিখলেন :সোসাইটি এর জন্য একটি আকর্ষণীয় উপহার পাঠাচ্ছেন। একটি  মিশরী মমি। বেশ কষ্ট করে সেটি তিনি সংগ্রহ করেছেন মিশরের গুরব অঞ্চলের রাজাদের সমাধি থেকে।জাহাজের নাবিকেরা মোকা থেকে মমি সমেত আর্চবোল্ড কে নিয়ে আসছিল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন জানি না তারা বেঁকে বসলো। এই ভয়ঙ্কর মৃত শরীরটা আর বয়ে আনতে তারা নারাজ। আর্চবোল্ড সাহেব হালকা রণতরী কূট এর কাছে এক অফিসার কে অনুরোধ করলেন মুম্বাই পর্যন্ত মমিটিকে কোনো মতে পৌঁছে দিতে।
কিন্তু মমি সে যাত্রায় এলো না। সে বছর পয়লা অক্টোবর এশিয়াটিক সোসাইটি তে আর একটা মিটিং বসলো। সেদিন আলোচনার জন্য এলো লেফট্যান্যান্ট আর্চবোল্ড এর একখানা সংযোজনী।যুদ্ধ জাহাজ কূটের সেই অফিসার জানিয়েছেন-না পারা গেলো না। জাহাজের মুসলমান নাবিকদের সংস্কারে আঘাত লেগেছে।মৃত শরীরটা কে তারা জাহাজে তুলে কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না। যা অবস্থা তাতে মমিটি মোকা থেকে বাইরে আনার সমস্ত চেষ্টাই কার্যত ব্যর্থ।ওখানেই আবার কবর দিয়ে রাখতে হবে প্রাচীন মিশরবাসীর মৃত শরীরটাকে। 
কিন্তু তবুও মমি এসেছিলো কলকাতায় সুদূর মিশর এর গুরব থেকে। সে দেশের বাইরে ইউসুফ নদী র ধারে কায়ুম এর দক্ষিণ সীমান্তে গুরব।প্রাচীন রাজবংশের ও আগের আমল থেকে নতুন রাজবংশ পর্যন্ত কর্মচঞ্চল ছিল গুরব।ফারাও তৃতীয় থুতমোসিস এর প্রাসাদ ,মন্দির ছিল এখানে। আর ছিল তৃতীয় আমেনফিস এর রানী তিয়ের সৌধ ,অট্টালিকা।তুতেনখামেনের বাবা মার্ প্রিয় জায়গা গুরব।ইতিহাস বলে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস এ শহর ধ্বংস করেছিলেন। ভেঙে দিয়েছিলেন তুতেন ,তাঁর বাবা আর আখেনাটন এর মূর্তি। 
সে যাই হোক ,মমি একদিন পৌঁছেছিলো কলকাতায়। ঠিক কবে যে এলো তার সন তারিখ ঠিক মতো জানা না গেলেও একথা ঠিক যে ১৮৮২ এর আগেই কলকাতার মাটি ছুঁয়েছিল সে। কেননা ১৮৮৩ তে প্রকাশিত ভারতীয় জাদুঘরের দ্রষ্টব্যের বিবরণীতে তার উল্লেখ রয়েছে সবিস্তারে। মমি এর মানুষটি শুয়ে আছে কাঠের কফিনে। চিত্রবিচিত্র লিনেন এ জড়ানো তার শরীর।মুখের মাংস চামড়া খসে গিয়ে একেবারে হাড্ডিসার। একটা মুখোশ রাখা ঠিক বুকের উপর। একেবারে মুখের আদলে তৈরি। পাশে কফিনের ঢাকা। তাতেও আঁকা মানুষটির পূর্ণ অবয়ব। মমি এর দুপাশে ছোট দুটি কাঁচের বাটিতে গোলাপি রঙের মিহিদানার মতো রাসায়নিক "সিলিকা জেল"।শোকেসে এর বাতাস থেকে আদ্রতা শুষে নেয়।কেস এর মধ্যে ডিহাইড্রেশন এর পরিমান বুঝে  নেবার  জন্য একটি মিটার।এসব ই মমি কে অপটিমাম কন্ডিশন এ রাখবার চেষ্টায়।কিন্তু যাকে ঠিকঠাক রাখতে এতো চেষ্টা সেই মমি টা কার এ প্রশ্ন সবার সাথে এক কবির মনেও উদয় হয়েছিল।
"মমি" কবিতায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখলেন -                                                                                                          

 পাশ মোড়া দিয়া      ঢাকন ঠেলিয়া,
          জাগিয়া উঠিল মমি, 
      মিশরের যত     বুড়া জাদুকর 
          দাঁড়ালো তাহারে নমি' 
      গুঁড়া হয়ে পড়ে    পুঁথি বেশবাস,
         গুঁড়া হয়ে ঝরে চর্ম;
     যত চাহি তত   মনে বাড়ে ত্রাস  
          তত বহিরায় ঘর্ম!
      বাম হাতে তার কবিতার পুঁথি 
         হরিতালে মোড়া মুখ, 
     নয়ন কোটরে  অতল আঁধার;
          দুরু দুরু কাঁপে বুক! 
   অতি ক্ষীণ স্বরে   কহিল সে ধীরে,
      সোয়ানরিয়া 'রোমেসেস'-
     ''নীলনদ তীরে   ঘন শরবন,
       তীরে সে মিশর দেশ; 
  আমি সে দেশের  রাজার সভায় 
       ছিলাম প্রধান কবি; 
  আজি কেহ নাই বুঝিতে সে বাণী 
      বুঝিতে সে সব ছবি।''
 (সংগ্রহ "মমি রহস্য",লেখক শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী )