Cross-Column

Friday, July 28, 2017

Visnusharma and Panchatantra

বিষ্ণুশর্মা ও পঞ্চতন্ত্র  


ভারতীয় সাহিত্যে বিষ্ণুশর্মা ও পঞ্চতন্ত্রের নাম সর্বজনবিদিত।দক্ষিণ ভারতে মহিলারোপ্য নামে একটি নগর ছিল। সেখানে অমরশক্তি নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর তিন ছেলে বসুশক্তি,উগ্রশক্তি আর অনেকশক্তি। তিনটিই মহামূর্খ ; লেখাপড়া তাদের মাথায় একদম ঢোকে না। রাজা বড় চিন্তিত হয়ে পড়লেন ,মন্ত্রীকে ডেকে বললেন ,''এর একটা বিহিত তো না করলে নয় !''
মন্ত্রী তখনি রাজ্যের সমস্ত পন্ডিতদের ডেকে পাঠালেন। পন্ডিতরা সব শুনে বললেন,''আগে ১২ বছর ধরে ব্যাকরণ মুখস্থ করতে হবে ;তারপর মনু ,চাণক্য,বাৎস্যায়ন,ধর্মশাস্ত্র,অর্থশাস্ত্ৰ ,রাজনীতি প্রভৃতি শেষ করতে আরো বেশ কয়েকবছর লাগবে।''
কথাটা রাজার মনঃপুত হলো না। পন্ডিতদের মধ্যে একজন ছিলেন বিষ্ণু শর্মা। রাজা তাঁকে বললেন,-''আমার ছেলে ৩ টিকে অল্পদিনে সর্বশাস্ত্রে সুপন্ডিত করে দিন। আমি আপনাকে ১০০ টি গ্রাম প্রণামী দেব।''
বিষ্ণুশর্মার বয়স হয়েছে ৮০ বছর। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে ,গায়ের চামড়া হয়ে গেছে শিথিল। কিন্তু মনটি তাঁর তেমনি সতেজ। তিনি হেসে বললেন ,''আমার আশি বছর বয়েস,শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় ক্রমে ক্রমে শক্তি হারাচ্ছে। এখন আর অর্থে আমার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া আমি বিদ্যা বিক্রি করি না,-১০০ টি  গ্রাম দিলেও না। তবে আপনার ছেলে কটিকে আমার হাতে ছেড়ে দিন। আমি কথা দিচ্ছি,ছয় মাসের মধ্যে রাজপুত্রদের সর্বশাস্ত্রে পন্ডিত করে তুলবো। যদি না পারি,তবে নিজের নাম ত্যাগ করবো।''
বিষ্ণুশর্মা রাজপুত্রদের শেখাবার জন্য কতকগুলি গল্প রচনা করলেন আর সেই সব ছোট ছোট গল্পের ভিতর দিয়ে সমস্ত শাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্রের সার কথা ছয়মাসে রাজপুত্রদের পড়িয়ে দিলেন। এই গল্পগুলি হচ্ছে পঞ্চতন্ত্র। এই পঞ্চতন্ত্র বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সম্পদ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর যেকোনো একটি গল্প পড়লেই বিষ্ণুশর্মার অসাধারণ প্রতিভার কথা বোঝা যায়। 
পঞ্চতন্ত্রের  একটি গল্প : ধর্মবুদ্ধি-পাপবুদ্ধি-কথা 
দুই বন্ধু। গলায় গলায় ভাব। একজন খুব ধার্মিক ,আর একজন সর্বদাই দুষ্ট বুদ্ধি। ধার্মিককে লোকে বলতো ধর্মবুদ্ধি,আর দুষ্টের নাম দিয়েছিলো পাপবুদ্ধি। 
দুই বন্ধু বিদেশে গেলো ব্যবসা করতে। কিছুদিনের মধ্যে দুজনে মিলে অনেক ধনসম্পদ রোজগার করলো।তারপর সেসব ধন নিয়ে ফিরলো দেশে। 
একটি বন পার হয়েই তাদের গ্রাম। বনের মধ্যে এক গাছতলায় বসে পাপবুদ্ধি বললো ,''এতো টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা ঠিক হবে না ,বাড়িতে ডাকাত পড়বে,আত্মীয়রাও হিংসা করবে। কিছু টাকা সঙ্গে রাখি আর বাকিটা এই গাছতলায় পুঁতে রেখে যাই। যেমন যেমন দরকার হবে,এসে তুলে নেবো। ''
তাই করা হলো। 
দিন যায়। 
একদিন পাপবুদ্ধি এসে বললো "আমার টাকার দরকার। চল ,গাছতলা থেকে কিছু তুলে নিয়ে আসি।''
ধর্মবুদ্ধি বললো,''আমারও দরকার,চলো।''
দুই বন্ধু বনে এলো। গাছতলা খুঁড়লো ,কিন্তু টাকা তো নেই!অত টাকা কোথায় গেল?
পাপবুদ্ধি বললো ,''আমরা দুজন ছাড়া এই টাকার কথা তো কেউ জানে না !আমি যখন নিই নি ,তখন তুমিই নিয়েছ।''দুই বন্ধুতে ঝগড়া বেধে গেলো। শেষে দুজন গেলো বিচার-সভায়।বিচারকেরা বললেন ,''কোনো সাক্ষী আছে ?''পাপবুদ্ধি বললো,''বনদেবতাকে সাক্ষী মানতে পারি। তিনি তো সবই জানেন।''বেশ ,তা হলে বনদেবতারি সাক্ষ্য নেওয়া হোক। 
পাপবুদ্ধি বাড়ি এসে তার বাবাকে সব কথা বললো। আরোও বললো ''টাকাগুলি  সেই চুরি করেছে। ধর্মবুদ্ধিকে সে এক পয়সাও দেবে না। এখন তুমি এক কাজ করো-।''তার বাবাও তেমনি। বললেন কি কাজ ?
-''সেই শমিগাছটাই একটা কোটর আছে। সেই কোটরের মধ্যে তুমি লুকিয়ে থাকবে। বিচারকদের সঙ্গে আমরা গাছতলায় যাবো। গাছকে জিজ্ঞাসা করবো কে চোর? তুমি তখন বলবে -ধর্মবুদ্ধি চোর।''
পরদিন সকালে বিচারকেরা সদলবলে এলেন বনে। সঙ্গে ধর্মবুদ্ধি আর পাপবুদ্ধি। সবাই সেই শমীগাছের সামনে এসে দাড়ালেন।প্রশ্ন করা হলো ,''হে বনের অধিষ্ঠাত্রী-দেবতা ,আপনি বলুন ,কে এই টাকা চুরি করেছে।''
নিস্তব্ধ বন কাঁপিয়ে হটাৎ গাছের ভিতর থেকে সাড়া এলো -''চুরি করেছে ধর্মবুদ্ধি। ''
অকাট্য প্রমান। বিচারকেরা বললেন ,ধর্মবুদ্ধি এর সাজা হবে। কি সাজা দেওয়া যায় তাই নিয়ে তাঁরা আলোচনা শুরু করলেন। 
এই অবসরে ধর্মবুদ্ধি কতকগুলো কাঠকুটো কুড়িয়ে এনে সেই শমীগাছের গুঁড়িতে জড়ো করলো। তারপর দিলো তাতে আগুন ধরিয়ে। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। আর যায় কোথা!পরোক্ষনেই আর্তনাদ করতে করতে গাছের কোটর থেকে পাপবুদ্ধিয়ের বাবা বেড়িয়ে এলো। শরীরের অর্ধেকটা তার তখন ঝলসে গেছে,চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। পাপবুদ্ধিয়ের বাবা খুলে বললো সব কথা। ধর্মবুদ্ধিকে তারিফ করে বিচারকেরা পাপবুদ্ধির উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। 
এই গল্প থেকে বোঝা যায় যে ,কোনো ব্যাপারেই শেষ পর্যন্ত দুস্টু বুদ্ধি সফল হয় না। ধর্ম চিরকাল জয়ী হয়।(সংগৃহীত)   

No comments:

Post a Comment