কলকাতার জাদুঘরে রাখা মমিটি কার ?
কোনো লেখার যেমন কৃমি মাংস খুঁটে সমালোচকেরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তেমনি পৃথিবীর নানান মমিকে নিয়ে এই শতকের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মাতামাতি শুরু করে দিয়েছিলো। উদ্দেশ্য মমি মানুষগুলি কি রোগে আক্রান্ত হয়ে বা কেমন করে মারা গিয়েছিলো,ওদের খাদ্য কি ছিল -এই সব জানা।
আর এই মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ জানতেই কলকাতার জাদুঘরের মমিটির এক্স-রে করা হয় ১৯৮০ সালের ৯ অক্টোবর তারিখে।ভারতে মমির এক্স-রে সেই প্রথম। তারপর একে একে জয়পুর ,বরোদা,বেঙ্গালুরু,লাখনৌ ,হায়দ্রাবাদ শহরের মিউজিয়ামগুলোয় সংরক্ষিত মমিদের ও রঞ্জনরশ্মির সামনে দাঁড়াতে হয়। আর মমির এই রেডিওলজিক্যাল টেস্ট এর পুরোধা ছিলেন ডঃ সুভাষ বসু।
নির্দিষ্ট দিনে মমিকে তার কাচপাত্র থেকে একটুও না সরিয়ে পোর্টেবল এক্স -রে মেশিন এর নিচে রাখা হলো। দিন ২০ বাদে মমির এক্স -রে রিপোর্ট বেরুলো।ডঃ বসুর রিপোর্ট বলছে -'এই নরকঙ্কালটি এক পূর্ণবয়স্ক সুঠাম
পুরুষমানুষের। নৃতাত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে কঙ্কালটিতে নেগ্রোইড বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। মমির মানুষটির বয়স ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে। নিচের চোয়ালের মাড়ি অংশ কিছুটা বসে গিয়েছে।তবে দাঁত গুলি অক্ষত আছে। মাথার খুলি অবিকৃত কিন্তু বুক ,পিঠ,পাঁজর ও কন্ঠায় বেশ ক্ষতের চিহ্ন।
ফরেনসিক দিক থেকে দেখলে মনে হয় ওকে হত্যা করা হয়েছে পিটিয়ে। ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয় নি। মেরুদণ্ডের হাড়ে স্পন্ডিলাইটিস এর লক্ষণ ধরা পড়েছে। হাঁটুতে ছিল বাত। আর এই রোগটি তাকে পঙ্গু করে দিচ্ছিলো। রোগটি খুব সচরাচর দেখা যায় না। ভারতের মাত্র ৬ টি মমির মধ্যে মাত্র ১ টিতে অর্থাৎ কলকাতার জাদুঘরের মমির শরীরে ছিল সেই রোগ যার পোশাকি নাম ''আলকাপটনুরিয়া।''এরফলে মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধিতে ক্যালসিয়াম এর মাত্রা বেড়ে যায়। আর তাছাড়া শরীরের গ্যাটে গ্যাটে অস্টিওআর্থারিটিস্ট এর আগাম লক্ষণ গুলো ধরা পড়ে,
কলকাতার মমির এক্স-রে ভারতে সর্বপ্রথম ঘটনা হলেও সারাবিশ্বে এ ধরণের ব্যাপার ঘটেছিলো ১৮৯৬ সালে। থ্র্যাস্টন হল্যান্ড সে বছর লিভারপুল এ একটি মমি করা পাখীর রেডিওগ্রাফ করেন। ২৬১ টি প্লেট হয়েছিল পাখীটির। এর পরের বছর স্যার ফিল্ডার্স পেট্ট্রি প্রথম মানুষের মমির এক্স -রে করেন।
( শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী এর ''মমি রহস্য'' থেকে সংগৃহীত)
No comments:
Post a Comment