নানাদেশের মরুভূমি
দেশবিদেশের বহু জায়গায় আমরা বেড়াতে যাই। কিন্তু ক'জন শখ করে মুরুভুমিতে বেড়াতে যাই ?-তা বোধহয় গুনে বলা যাবে। বইয়ে লেখা মরুভূমির বৃত্তান্ত পড়ে আমরা রোমাঞ্চিত হই,মরুভূমির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি ,সেইসাথে অজানা বিপদের ভয়ে আতঙ্কিতও হই। তাই মরুভূমির কাছাকাছি গেলেও অধিকাংশ সময়ে তার ভিতরে কি আছে তা দেখার চেষ্টা আমরা করি না। অথচ এর ভিতরে লুকিয়ে আছে কত বিস্ময়। সেইসব বিষয় নিয়েই আজকের এই পোস্ট ''নানাদেশের মরুভূমি।''
মরুভূমি হলো বালির সমুদ্র। এই সমুদ্রে কোনো ঢেউ নেই। চারিদিকে শুধু বালি,বালি আর বালি।দিগন্ত বিস্তৃত এই বালির সমুদ্র দেখে মনে হয় যেন এর কোনো সীমানা নেই। যদিও তা ঠিক নয়। কোনোও মরুভূমি আকারহীন নয়।মরুভূমি যতই বিশাল হোক প্রত্যেক মরুভূমির একটা সীমারেখা আছে। যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো 'সাহারা' মরুভূমিও উত্তর ,পূর্ব ও পশ্চিমে সমুদ্র এবং দক্ষিণে তৃণভূমি দিয়ে সীমানা নির্দিষ্ট করা আছে। জলহীন এই সমুদ্রে ছিটেফোঁটাও বৃষ্টি হয় না। দিনেরবেলা সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপে শুধু ঝলসানো বালির দেখা পাওয়া যায়। এখানে দিনে যেমন প্রচন্ড গরম ,রাতে তেমনই ঠান্ডা। যখন শুরু হয় ''আঁধি''অর্থাৎ বালির ঝড় ,তখন নিস্তব্ধ মরুভূমির রূপটাই পাল্টে যায়।
পৃথিবীর যতগুলো মরুভূমি আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো হলো "সাহারা'' মরুভূমি। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে এর অবস্থান।সাড়ে ৩০০০ মাইল লম্বা এই মরুভূমির আয়তন প্রায় ৩৫00000 বর্গমাইল। অর্থাৎ ৫০ টি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সমান। বিস্তীর্ণ বালুকারাশির মধ্যে মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাথুরে পাহাড়। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির উচ্চতা ১১০০০ ফুট। এর একেবারে ওপরের অংশ তুষারে ঢাকা।
আফ্রিকার দক্ষিণ অংশএ আরোও একটি মরুভূমি আছে। এর নাম ''কালাহারি'' মরুভূমি। সাহারার তুলনায় খুবই ছোট। মাত্র আড়াই লক্ষ বর্গমাইল এর আয়তন।এই মরুভূমিকে ঘিরে আছে এক বিস্তীর্ণ তৃণভূমি।
দক্ষিণ আফ্রিকার 'কালাহারি' মরুভূমির পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে আছে 'নামিব' মরুভূমি। এই মরুভূমির চরিত্র সাহারা মরুভূমির মতো নয়। এই মরুভুমিটি প্রায় সারাবছরই ধুলো মেশানো কুয়াশায় ঢেকে থাকে। এই ধরণের আর একটি মরুভূমি দক্ষিণ আমেরিকায় আছে। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই মরুভূমিটির নাম ''আটাকামা।''বিশেষজ্ঞদের মতে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে শুকনো মরুভূমি। এখানে সারাবছর বৃষ্টির পরিমান আধ ইঞ্চি এর ও কম। এখানে যেসব গাছপালা বা প্রাণী দেখতে পাওয়া যায় তারা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জল এই কুয়াশা থেকে সংগ্রহ করে নেয়।
দক্ষিণ আমেরিকার আর একটি মরুভূমির নাম 'পাটাগোনিয়া।' প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গমাইল আয়তনের এই মরুভুমিটির অবস্থান আজেন্টিনায়।
রকি পর্বতমালার পূর্বদিকে একটি মরুভূমি আছে। এই মরুভূমিতে শুকনো বালি ,তৃণভূমি ,পাহাড়পর্বত ও গিরিখাত মিলেমিশে একসংগে আছে। প্রায় ৫০০০০০ বর্গমাইল বিস্তৃত এই মরুভুমিটি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এর অন্তর্গত।
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি আছে অস্ট্রেলিয়ায়। এর আয়তন প্রায় ১৩০০০০০ বর্গমাইল। অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশ এই মরুভূমি কবলিত অঞ্চল। এই মরুভূমি শুধু শুকনো বালিতে ভরা নয় ,মাঝে মাঝে আছে বিস্তীর্ণ তীর্ণভূমি। এইসব তৃণক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ ভেড়া ও গবাদি পশু বিচরণ করে।
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মরুভুমিটি আছে ইরানে। মাত্র দেড় লক্ষ বর্গমাইল এর আয়তন। কিন্তু মজার কথা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বালিয়াড়িটি এখানেই আছে। শুধু কি তাই এখানকার বালিয়াড়ির সংখ্যাও অনেক।
তুর্কিস্থানের পূর্বদিকে আছে দুটি মরুভূমি -'তাকনা মাকান ও গোবি সিংকিয়াং'।মঙ্গোলিয়ার প্রায় ৪০০০০০ বর্গমাইল এলাকা এই মরুভূমি গ্রাস করেছে। এই মরুভূমি দুটিতে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়না। গোবি মরুভূমি মালভূমি আকারের দেখতে। এখানকার বায়ুতে যে সামান্য পরিমানে জলীয়বাষ্প থাকে তার ছোঁয়ায় এই মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাস জন্মাতে দেখা যায়।
সাহারা মরুভূমির খুব কাছেই আছে আর একটা মরুভূমি। যদিও এই মরুভূমিটির অবস্থান আফ্রিকায় নয়। মরুভূমি দুটিকে পৃথক করেছে সুয়েজ -প্রণালী। এই সংকীর্ণ প্রণালীটি যদি না থাকতো তাহলে সাহারা ও আরবের মরুভূমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে সাহারা মরুভূমির মানচিত্রটাই পাল্টে যেত। এই দুটি মরুভূমি মিলে পৃথিবীর প্রায় ১১ শতাংশ জমি দখল করে আছে।
সবশেষে আসি 'থর' মরুভূমির কথায়। প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গমাইল বিস্তৃত এই মরুভূমির কিছু অংশ আমাদের দেশের রাজস্থানে রয়েছে। বাকি অংশ সিন্ধুপ্রদেশ ও বেলুচিস্তান এর ভিতর দিয়ে ইরাকের দিকে প্রসারিত।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment