Cross-Column

Tuesday, August 1, 2017

Hieun Tsang

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর জীবন ও ভারত ভ্রমণ (সংক্ষেপিত)
৬০৩ খ্রীষ্টাব্দে চীনের অন্তর্গত হোনান প্রদেশে চিনলিউ নগরে এই মনিষী পরিব্রাজক জন্মগ্রহন করেন।হিউয়েন সাঙ ছিলেন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী শেন হুই এর চতুর্থ পুত্র। কুড়ি বছর বয়েসএ আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধধৰ্ম গ্রহন করে ও গৃহত্যাগ করে তিনি পরিব্রাজকের জীবনযাপন করতে থাকেন।
 হিউয়েন সাঙ এর ভারত বিবরণ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ যদিও ঐতিহাসিকের উদ্দেশ্য নিয়ে তা রচিত হয় নি। তবু ধর্মোপাসক এই পরিব্রাজকের অন্তরে একজন ঐতিহাসিক বা একজন ভৌগোলিক বাস করতেন বলে তাঁর বিবরণ নেহাত 'কড়চা'জাতীয় ধর্মানুভব মাত্র হয়ে ওঠেনি বরং তৎকালীন বৌদ্ধ ভারতের একটা বিশ্বাসযোগ্য দলিল হয়ে উঠেছে। 

ফা হিয়েন এর মতো ভারতবর্ষে এসে  বৌদ্ধপুস্তকাদি সংগ্রহ ও বৌদ্ধ ধর্মের ঠিকঠাক ব্যাখ্যার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য সেকালের রীতি উপেক্ষা করে মাত্র ২ জন সঙ্গী নিয়ে চীন সম্রাটের বিনা অনুমতিতেই ভারতের দিকে রওনা হন এবং ৯ মাস ভ্রমণের পর বামিয়ান পৌঁছান। অবশেষে কপিশা ও না -কি -লো-হো-হয়ে তিনি ভারতের প্রাচীন রাজ্য গান্ধারে প্রবেশ করেন।শালাতুল তক্ষশীলা হয়ে তিনি কাশ্মীরে এসে দুবছর কাটান (৬৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দ)।পরে জলন্ধর,মথুরা,বালেশ্বর আসেন।কান্যকুব্জের সিংহাসনে তখন অধিষ্ঠিত রাজা হর্ষবর্ধন। তিনি ছিলেন বৌদ্ধমতের পৃষ্ঠপোষক।এখানে মাস কয়েক থেকে তিনি অযোধ্যা,প্রয়াগ,কৌশাম্বী,শ্রাবন্তী হয়ে কপিলাবাস্তুতে এসে বৌদ্ধ জন্মভূমি দর্শন করেন। সেখান থেকে এসে দেখেন মহাপরিনির্বাণ স্থান কুশীনগর। পরে বারাণসী ,সারনাথ থেকে গঙ্গার পথ ধরে গাজীপুরে আসেন।বৈশালী ,পাটনা ,হয়ে গয়ায় এসে দর্শন করেন পবিত্র বোধিবৃক্ষ। রাজগৃহ থেকে নালন্দায় এসে ২২ মাস ধরে নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরে চম্পা ,কজঙ্গল,পৌন্ডবর্ধন কামরূপ সমতট হয়ে পশ্চিমবঙ্গের তাম্রলিপ্ততে আসেন।মুর্শিদাবাদ এর কর্ণসুবর্ণ ছুঁয়ে তিনি আসেন উড়িষ্যা প্রদেশে। সেখানের গঞ্জাম হয়ে কলিঙ্গ কাঞ্চীপুর,কোঙ্কনপুর(মহারাষ্ট্র ),অজন্তা,ভরুকচ্ছ ,বলভী,সৌরাষ্ট্র  মুলতান প্রভৃতি ভ্রমণ করে হর্ষবর্ধনের আমন্ত্রণক্রমে পুনরায় কনৌজে আসেন। হর্ষবর্ধনের যত্নে কিছুকাল কাটিয়ে তাঁর প্রদত্ত প্রভূত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ ৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যভাগে হিউয়েন সাঙ স্বদেশের উদ্দেশ্যে গমন করেন। তাঁর এই প্রায় পঞ্চদশবর্ষব্যাপী পরিভ্রমণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় তিনি ছিলেন নালন্দায়। 
যাবার সময় তিনি বহু বৌদ্ধ পুঁথি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর নিয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধের দেহাবশেষ কণিকা,একটি হিরণ্যময় বৌদ্ধমূর্তি ,একটি চন্দনকাষ্ঠ-নির্মিত বুদ্ধমূর্তি ,একটি বুদ্ধের তথাগত মূর্তি ,সূত্র -ভাষণরত  রৌপ্যময় বুদ্ধমূর্তি ,নগ্রহার ত্যাগ সময়কালীন বুদ্ধমূর্তি এবং বৈশালীতে উপদেশক বুদ্ধমূর্তি।এইগুলি এবং প্রায় পোনে সাতশো পুঁথির বিশাল সম্ভার নিয়ে যেতে তাঁর ২০ টি ঘোড়ার অবশ্যক হয়েছিল। ভারত ভ্রমণকালে তিনি সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত করেন। দেশে ফিরে সংস্কৃত পুঁথিগুলির চীনা অনুবাদে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। এর মধ্যে ভ্রমণ বিবরণী সি-ইউ-কি রচনা করে তিনি ৬৪৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাটের কাছে পাঠিয়ে দেন। ৬৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়।

No comments:

Post a Comment