Cross-Column

Thursday, July 6, 2017

sir Isaac Newton

মহা বিজ্ঞানী নিউটন মানুষটি কেমন ছিলেন?
স্যার আইজ্যাক নিউটন।বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম।শুধু কি মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব ? নিউটন এর আবিষ্কৃত অঙ্কের নানা সূত্র,আলোক বিজ্ঞানের নানা রহস্য,আরো কত এটা-ওটা-সেটা খুঁটিনাটি আবিষ্কার তাকে সর্বযুগে  সর্বদেশের বিজ্ঞানীদের প্রথম সারির আসনে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে দেবে এমন সাধ্য কারোও নেই। নিউটন পৃথিবীতে এসেছিলেন আজ থেকে ৩০০ বছর আগে ,কিন্তু এই ৩০০ বছর পরেও তাঁর আসন সেখানে অটল হয় আছে। 

এ হেন নিউটন লোকটি কেমন ছিলেন জানার আগ্রহ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বড়ো পণ্ডিত যখন,তখন মনে হবে লোকটি ছিলেন সাদাসিদে ,ঢিলেঢালা স্বভাবের মানুষ ,সাজপোশাকে ,চালচলনে আড়ম্বরের ধার ধারতেন না নিশ্চয়। ঠিক তাই। শুধু সাদাসিদে ,অনাড়ম্বর বললে ভুল হবে -নিউটন ছিলেন একেবারে আত্মভোলা মানুষ। তুখোড় বুদ্ধি ,অঙ্কে অসাধারণ মাথা ,যে কোনো কঠিন অঙ্কের সমাধান মুহূর্তের মধ্যে করে দিতে পারতেন,কিন্তু সাংসারিক ব্যাপারে একেবারেই বেমানান। রাত দিন আপন মনে কি চিন্তা করে চলেছেন,সামনে কি ঘটছে না ঘটছে খেয়ালই নেই!
সেই ছেলেবেলা থেকেই এই। 
নিউটন এর বয়স যখন বছর ১৪ তখন তাঁর মা একবার তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে ক্ষেতখামার দেখাশোনার কাজে লাগিয়ে দেন,সংসার চালাবার জন্য এই ব্যবস্থার বিশেষ দরকার হয়ে পড়েছিল তখন। প্রতি শনিবারে গ্রান্টহাম শহরে হাট বসত। নিউটন এর উপর ভার ছিল এই হাটএ প্রতি শনিবার গিয়ে কেনাবেচা করতে হবে। অবশ্য সঙ্গে একজন কাজের লোক ও যাবে। নিউটন এর ছিল বই পড়ার প্রবল নেশা।হাটে গিয়ে কেনা-বেচা করার জন্য ভগবান তাঁকে পৃথিবীতে পাঠান নি। নিউটন করতেন কি হাটে না গিয়ে,পথে একটা পাহাড় পড়ত,-স্পিটল গেট পাহাড় -তারই তলায় একটা নিরিবিলি ঝোপের আড়ালে গিয়ে বই খুলে বসতেন। হাটের কেনাবেচা যা করার তা কাজের লোকটি করতো। ফিরবার সময় এ সে নিউটন কে ডেকে নিয়ে যেত। 
সে আমলে যানবাহন বলতে ঘোড়াকে ব্যবহার করা হতো বেশি।নিউটন  ও লম্বা পথ যেতে হলে ঘোড়া নিয়ে যেতেন। একবার নিউটন ঘোড়া নিয়ে সেই স্পিটলগেট পাহাড় পার হচ্ছিলেন।এবড়োখেবড়ো পাহাড়ী পথে ঘোড়ার পিঠে যেতে কষ্ট হচ্ছিলো,তাই নিউটন ঘোড়া থেকে নেমে ঘোড়ার লাগাম ধরে চলতে লাগলেন। ঘোড়াটা পিছন পিছন আসতে লাগলো। নিউটন লাগাম হাতে আগে আগে চললেন। একটা অঙ্ক নিয়ে ভাবতে ভাবতে চলেছেন তিনি,অন্য কোনো দিকে হুঁশ ছিল না। 
ক্রমে পাহাড় পার হয়ে সমতল রাস্তায় চলে এলেন নিউটন। তখন ভাবলেন এবার ঘোড়ায় চড়া যেতে পারে। কিন্তু চড়তে গিয়ে দেখেন ,কোথায় ঘোড়া !ঘোড়া কখন লাগাম খুলে বেরিয়ে পালিয়ে গেছে,তিনি শুধু লাগাম ধরেই এতখানি পথ চলে এসেছেন। 
এই অন্যমনস্কতা তাঁর পরিণত বয়েস এও কমে নি। আর একবার এর একটা ঘটনার কথা বলি। 
নিউটন তাঁর এক বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করেছেন ,তারপর সে কথা একদম ভুলে গেছেন। এদিকে নির্দিষ্ট সময় সেই বন্ধু এসে দেখেন-কোথায় নিউটন তাঁর কোনো পাত্তা নেই!বসে বসে শেষে ধর্য্যের বাধঁ ভেঙ্গে গেল তাঁর।কখন খাবার সময় হয়ে গেছে,খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। অগত্যা পা টিপে টিপে খাওয়ার ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। টেবিল এর উপর খাবার ঢাকা দেয়া রয়েছে। একা নিউটন এর মতো খাবার। বন্ধু আর অপেক্ষা না করে সেই খাবার খেয়ে নিলেন। তারপর তাঁর মাথায় এলো একটা দুস্টুবুদ্ধি-নিউটন কে জব্দ করতে হবে। তিনি ফেলে দেওয়া হাড়-কাঁটা গুলো খাবারের প্লেট এ সাজিয়ে ঢেকে রেখে দিলেন। 
খানিকপরেই নিউটন এসে হাজির। বন্ধুকে দেখে বললেন আরে তুমি যে !এমন অসময়এ! কি ব্যাপার?তাঁকে যে নিমন্তন্ন করা হয়েছিল তা তিনি একদম ভুলে গেছেন।
খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর নিউটন বললেন দাঁড়াও আমার খাওয়া হয় নি ,চট করে খেয়ে নি। তুমি বরঞ্চ ওই ঘরে এসে বস। 
বন্ধু মনে মনে হেসে নিয়ে নিউটন এর খাবার ঘরে ঢুকলেন।নিউটন আরাম করে বসে খেতে গিয়ে দেখেন কোথায় খাবার হাড় কখানা শুধু পড়ে আছে !তিনি লজ্জা পেয়ে বললেন দেখেছ আমার কি ভুলো মন। আগে এ খেয়ে গেছি কিন্তু সে কথা একদম মনে নেই। 
এ হেন লোকের জীবনযাত্রা এর পথে পদে পদে বাধা পড়বে তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে। আর ঠিক একারণেই বাধা পড়েছিল তার বিয়ের ব্যাপারেও।
নিউটন এর বয়েস তখন বছর তেইশ। বিয়ে করেন নি। কিন্তু তাঁর এক দূরসন্পর্কের আত্মীয়াকে বিয়ে করার ইচ্ছা হয়েছে। ওদেশে তো ছেলেমেয়েরা বিয়ের ব্যাপারে নিজেরাই পাত্রপাত্রী বেছে নেয়,এ ক্ষেত্রে তাই। কিন্তু বলি বলি করে প্রস্তাব টা আর করতে পারছেন না নিউটন।শেষে একদিন ঠিক করলেন মেয়ে টি এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব করবেনই করবেন। 
দুজনে একত্র বেড়াতে বেরোলেন। নিউটন তখন একটা জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন। মেয়ে টি কথাপ্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে বসলো ,গবেষণার কাজ কতটা এগিয়েছে ? ব্যাস আর নিউটন কে পায় কে ?তিনি তখনি শুরু করলেন বক্তৃতা।তাঁর জটিল গবেষণার কথা মেয়েটা কে বোঝাতে শুরু করলেন। স্বল্পভাষী নিউটন এর মুখ দিয়ে যেন কথা র খই ফুটছে। হবে না কেন ,তিনি যে তখন তাঁর নিজের মনের মতো বিষয় পেয়ে গেছেন। 
এদিকে মেয়েটি এর অবস্থা বোঝো। বিজ্ঞানের সে কোনো ধার ই ধার এ না। বিশেষ করে নিউটন এর জটিল অঙ্কের ব্যাপার বোঝা তার পক্ষে তো অসম্ভব। নেহাৎ ভদ্রতার খাতিরে সে কথাটা পেড়েছিল।কিন্তু তাতে যে এমন কান্ড ঘটবে সে কল্পনাও করতে পারে নি। 
মেয়েটি প্রতি মুহূর্তে ভাবছে ,নিউটন এইবার নিশ্চয় থামবে। থেমে এইবার তার কাছে বিয়ের প্রস্তাবটা করবে। কিন্তু নিউটন তখন নিজের ভাবরাজ্য এ ঘুরছেন।তিনি যে আজ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন সে কথা ততক্ষনে বেমালুম ভুলে গেছেন।
সেদিন আর প্রস্তাব টা তোলা হলো না নিউটন এর। তারপর দিন ও নয়। তারপর বলি বলি করে আর কোনো দিনই ফুরসৎ হলো না তার সে প্রস্তাব তুলবার।শেষে নিউটন আজীবন বিয়ে না করে কাটিয়ে দিলেন।
নিউটন নাকি হাসতেন খুব কম,অট্টহাসি তো নয়ই কিন্তু একবার তিনি সেই অট্টহাসি ই হেসেছিলেন। গল্পটা এই রকম : নিউটন তাঁর এক বন্ধুকে  একটা বই পড়তে দিলেন। বললেন ,পড়ে দেখো এমন চমৎকার বই তুমি আগে পড়ো নি। বন্ধু বই নিয়ে চলে গেলেন ,কিন্তু দিন দু বাদেই সেটা ফেরত নিয়ে এলেন। বাঃ এর মধ্যে পড়া হয়ে গেলো,তা কেমন লাগলো বইখানা ? -হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন নিউটন।
বন্ধু ঠোট আর নাক কুঁচকে জানালেন বই টি এর মধ্যে কোনো রস ই তিনি খুঁজে পান নি আসলে বই টি তার ভালো লাগে নি। 
ঘর কাঁপিয়ে  অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো নিউটন। বলো কি হে ইউক্লিড এর জ্যামিতি তোমার ভালো লাগে নি। এমন অবাক করা কথা তিনি জীবন এ শোনেন নি। 
জীবন এ নিউটন বোধ হয় ওই একদিন ই প্রাণ খুলে হেসেছিলেন।

No comments:

Post a Comment