Cross-Column

Monday, July 24, 2017

OLYMPIC GAMES

প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক সূত্রপাত ও পতন:
প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক খেলার সূচনা হয়েছিল যীশুখ্রিস্ট জন্মাবারও ৭৭৬ বছর আগে। সভ্যতার ঊষালোকই বলা যেতে পারে সেই যুগকে। গ্রীসের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে ছিল প্রাচীন অলিম্পিয়া নগরী।সেখানে ছিল দেবরাজ জিউস এর মন্দির। প্রতি ৪ বছর পর পর সেই দেবরাজের পুজো উপলক্ষে এখানে হতো বিরাট এক উৎসব। দেশ বিদেশ থেকে জ্ঞানী,গুণী,মনীষীদের সমাবেশ ঘটতো। আসত সৌম্যকান্তি,বলিষ্ঠদেহ খেলোয়াড় এর দল। সমস্ত অলিম্পিয়া নগরী পুষ্পপল্লবে সজ্জিত হয়ে এক নয়নাভিরাম রূপ নিতো। সুদূর গ্রাম থেকে,অন্যান্য শহর থেকে দলে দলে নরনারী এসে মন্দিরের সামনে জড়ো হতো। শহর জুড়ে উৎসবের বন্যা বয়ে যেত যেন !আর এই উৎসবের অঙ্গ হিসাবে হতো এক বিরাট ক্রীড়া প্রতিযোগিতা -যার নাম ছিল অলিম্পিক গেমস বা অলিম্পিক খেলা। 
অলিম্পিয়া নগরীর এই মহোৎসবকে  সে যুগের লোকেরা এতো পবিত্র মনে করতো যে উৎসবের কয়েকটি দিন কোনোও রণাঙ্গণে  কোনো সৈনিক অস্ত্রধারণ করতো না। সে সময়এ গ্রীস ছোট ছোট নগর রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এদের কারো সাথে কারো যুদ্ধ চলতে থাকবার সময়ে যদি অলিম্পিক উৎসব শুরু হতো তা হলে যতদিন  না উৎসব শেষ হয় এবং সৈন্যরা নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে পারে ততদিন দু পক্ষই  যুদ্ধ বন্ধ রাখত।অর্থাৎ ,অল্প সময়ের জন্য হলেও ,সমস্ত  যুদ্ধবিগ্রহ এর উপর শান্তির পবিত্র বারি বর্ষিত হতো দেবতার পুষ্পবৃষ্টির মতো।
অলিম্পিয়ার ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অধিকার সকলেরই ছিল। যে কোনো স্বাধীন গ্রীক ১০ মাসের ''ট্রেনিং'' নিয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন -অন্য কোনোও বাধা-নিষেধ ছিল না। তবে প্রত্যেক রাজ্যই চেষ্টা করতো তাদের নিজের দেশের লোক যাতে শ্রেষ্ঠ আসন পায়। এ জন্য ৭ বছর বয়েস হলেই গ্রীক বালকদের শরীরচর্চার দিকে ভীষণভাবে নজর দেওয়া হতো। সিসিলি থেকে আরম্ভ করে এশিয়া মাইনর অবধি যেখানে যত খেলোয়াড় ছিল সবাই এসে সমবেত হতেন অলিম্পিয়াতে -পেনথালন,প্যানক্রেসিয়া,কুস্তি ,ডিসকাস,জ্যাভেলিন,দৌড় এবং রথ-দৌড় এ  অংশগ্রহণ করতে। বিজয়ী বীরকে পরিয়ে দেওয়া হতো অলিভ পাতায় গাথাঁ উজ্জ্বল সবুজ রঙের অপূর্ব সুন্দর বনমুকুট।স্বদেশে ফিরে এলে দেশের রাজা দিতেন বহুমূল্য উপহার।যোগ্য সম্মানে ভূষিত করতেন দেশের বীর সন্তানকে। 
 প্যানক্রেসিয়া প্রতিযোগিতায় যিনি সাফল্য অর্জন করতেন তাঁর সম্মানের বুঝি তুলনা ছিল না। কুস্তি ,মুষ্টিযুদ্ধ,পদাঘাত এবং শ্বাসরোধ এর মাধ্যমে এই খেলায় জয়লাভ করতে হতো। খেলাটি অবশ্য ছিল নিদারুন।বিজয়ী এর হাতে বিজিতকে  প্রাণ দিতে হতো। মৃত্যু এর মধ্যে দিয়ে খেলাটির পরিসমাপ্তি ঘোষিত হতো।
 পেনথালন প্রতিযোগিতায় যিনি চ্যাম্পিয়ান তাঁকে জয়ী হতে হতো উচ্চ লমফ,দৌড়,ডিসকাস ও জ্যাভেলিন নিক্ষেপে এবং "স্ট্যান্ড-আপ'' কুস্তিতে। 
আজকাল মুষ্টিযোদ্ধাদের ৩ টি বিভাগে ভাগ করা হয়। লাইটওয়েইট,মিডলওয়েইট,এবং হেভিওয়েট। কিন্তু প্রাচীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় এমন কোনো শ্ৰেণীবিভাগ ছিল না। ফলে ওজনে যিনি সবচেয়ে ভারী হতেন মুষ্টিযুদ্ধ এর বিজয়মুকুট সাধারণত তাঁরই মাথায় শোভা পেত। 
অলিম্পিক উৎসবে কিন্তু শুধু খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতায় হত না। কবি,গায়ক ,শিল্পী -সকলের মধ্যেই প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ছিল। তাঁরাও দলে দলে এসে যোগ দিতেন এবং বিজয়ী হলে পাতার মুকুট মাথায় নিয়ে সগর্বে দেশে ফিরতেন।


৩৯৪ খৃষ্টাব্দে প্রাচীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার উপর যবনিকাপাত ঘটান রোমের সম্রাট প্রথম থিওডেসিয়াস।কোনো খেলাধুলাকেই তিনি ভালো চোখে দেখতেন না। শরীরচর্চাকে মনে করতেন নিছক পাগলামি। তাঁর মনের মধ্যে একটা দৃঢ় বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো যে সভ্য খ্রীষ্টান জগতে আদিম বর্বর যুগের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার কোনো স্থান ই থাকতে পারে না। শুধু অলিম্পিক প্রতিযোগীতা বন্ধ করে তিনি খুশি হন নি ,অলিম্পিক স্টেডিয়াম এবং অলিম্পিক মন্দির ধ্বংস করে ফেলার ও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।তাঁরই নির্দেশে প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম আশ্চর্য -হাতির দাঁত,সোনা এবং এবনীতে তৈরি -অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূর্ত প্রতীক গ্রীক দেবতা জিউসের বিরাট মূর্তি কনস্ট্যান্টিনোপল এ স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রাচীন ভাস্কর্যের অপূর্ব নিদর্শন এই জগৎবিখ্যাত মূর্তিটি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। 
৪২৬ খৃস্টাব্দে দ্বিতীয় থিওডসিয়াস আরো এককাঠি অগ্রসর হন। তাঁর নির্দেশে গ্রীক দেবদেবীদের সমস্ত মন্দির ধ্বংস করে ফেলা হয়, ধ্বংস করে ফেলা হয় অলিম্পিয়ায় অবস্থিত জিউসের বিরাট মন্দির। এবং তারপর ধ্বংসের যেটুকু বা বাকি ছিল,বন্যা ও ভূমিকম্পে তার ষোলোকলা পূর্ণ হয়। 
এই ভাবে শেষ হয় প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক। 

No comments:

Post a Comment