Cross-Column

Tuesday, July 4, 2017

NEPOLIAN BONAPART

                         নেপোলিয়ান লোকটি কেমন ছিলেন? 

ফ্রান্স এর সম্রাট মহাবীর নেপোলিয়ান এর কাহিনী ইতিহাসের পাতায় এখনো জ্বলজ্বল করে। তাঁর সময় এ সমস্ত ইউরোপ তাঁর নাম এ কাঁপতো। সাধারণ ঘরের ছেলে হয়েও তিনি নিজের প্রতিভায় ফ্রান্স এর সম্রাট তো হয়েছিলেন,এছাড়াও ইউরোপ এর বহু অঞ্চল ফরাসি সাম্রাজ্যের দখল এ এনেছিলেন। শেষে ওয়াটারলু যুদ্ধে তাঁর ভাগ্য  বিপর্যয়  ঘটলো। পরাজিত নেপোলিয়ন বন্দি হয়ে ফ্রান্স থেকে নির্বাসিত হলেন সুদূর সেন্ট হেলেনা দ্বীপে। ইংল্যান্ড এর একজন বড়ো কবি বায়রন ফ্রান্স থেকে নেপোলিয়ন এর চিরবিদায়ের একটি সুন্দর চিত্র এঁকেছেন। নেপোলিয়ান বলছেন,বিদায় ফ্রান্স,চিরকালের জন্য তোমার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।কিন্তু তোমার ইতিহাসের পাতা -তা সে গৌরব এ ঝলমলে ই হোক আর কলঙ্কের কালি তে মসিলিপ্ত ই হোক -আগাগোড়া আমার নাম দিয়ে ভরা থাকবে। 
দোর্দন্ডপ্রতাপ নেপোলিয়ান কে তাঁর সমসাময়িক বিদেশিরা অনেকেই ভালো চোখে দেখেন নি ,নানা ভাবে কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু পরবর্তী যুগ এ,যখন বিদ্বেষ এর হলকাটা কমে গেলে ইতিহাসকারেরা একটু সুস্থ হয় ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখবার অবসর পেলেন,তখন তাদের মনের ভাব টা কিছুটা বদলে গেল। নেপোলিয়ান এর বিরাট প্রতিভার কাছে মাথা নীচু করেছেন অনেকেই। 
নেপোলিয়ান জীবন এ অনেক বড়ো বড়ো কাজ করছেন ,অনেক বড়ো বড়ো যুদ্ধ অবিশ্বাস ও ভাবে জয় করেছেন। সে সব কাহিনী ইতিহাসের পাতায় থাকবে। কিন্তু মানুষ টি তিনি কেমন ছিলেন তা জানার জন্য কৌতূহল হওয়া স্বাভাবিক। তাই এখানে তার প্রতিদিন এর জীবনযাত্রার দু -একটা ছবি তুলে দেওয়া হলো।
খুব ভোরে ঘুম ভাঙতো নেপোলিয়ন এর,কিন্তু তখনি তিনি বিছানা থেকে উঠতেন না। ভৃত্য এসে ঘরের দরজা জানালা খুলে দিয়ে যেত,বিছানাতে শুয়ে শুয়ে তিনি কিছুক্ষন প্রকৃতির শোভা দেখতে ভালো বাসতেন। 
মুখ হাত ধুতে না ধুতে কোনো কর্মচারী নিয়ে আসত একগাদা চিঠি। বিছানাতে বসে দ্রুত সেগুলি তে  চোখ বুলিয়ে নিতেন নেপোলিয়ান।দরকারি মনে হলে পাশে রেখে দিতেন ,বাকি গুলো ঘরময় ছড়িয়ে দিতেন।
এরপর চা -পর্ব ও সেই সাথে খবরের কাগজ পাঠ। পারিবারিক চিকিৎসক ও ঘরে ঢুকতো এইসময় তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে,নামেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা,আসলে কিন্তু নেপোলিয়ান তাঁর সাথে খানিকক্ষণ রঙ্গ রসিকতা করতে ভালোবাসতেন। ওষুধ বিষুধ এর বড়ো একটা তোয়াক্কা করতেন না তিনি।
এরপর দাড়ি কামানো। তোমরা হয়তো ভাবছ সম্রাট যখন তখন নিশ্চয় তিনি আরামকেদারাতে গা এলিয়ে দিতেন আর নাপিত এসে দাড়ি কামিয়ে দিতো। মোটেই তা নয়। দাড়ি কামাতেন তিনি নিজের হাত এ। ঠাট্টা করে বলতেন "অপরের হাতে অমন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার সামনে নিশ্চিন্তে গাল গলা এগিয়ে দেব ,সে শর্মা আমি নই''। তবে নিজের হাত এ কামালেও তাতে বনেদীয়ানা ছিল যথেষ্ট। দুজন লোক তাকে সেসময় সাহায্য করতো। একজন সামনে ধরতো আয়না আর একজন সামনে ধরতো সাবান আর জলের পাত্র। ক্ষুর থাকতো নেপোলিয়ান এর হাত এ। স্থির হয়ে বসে দাড়ি কমাতে পারতেন না তিনি ,নড়েচড়ে সারা ঘরময় ঘুরে নানা কসরত করে চলতো তাঁর দাড়ি কামানো। 
দাড়ি কামানো এর পর স্নান। এই স্নান টা ছিল তাঁর যা একটু বিলাসিতা। কাজের তাড়া না থাকলে সময় সময় ১ ঘন্টা -দেড়ঘন্টা সময় ও তিনি স্নান এর টবে কাটিয়ে দিতেন। 
প্রাতরাশের  সময় বাঁধা ছিল সকাল সাড়ে ৯ টা,কিন্তু ১১ টা ১২ টা হয় এ গেলেও অবাক হবার কিছু ছিল না। খাওয়া এর ব্যাপারে একদম নিয়ম মেনে চলতেন না  নেপোলিয়ান। এই অনিয়ম এর জন্য তাঁকে অসুখ বিসুখ এ কম ভুগতে হয় নি। প্রাতরাশ বলতে কোনো রাজকীয় জাঁকজমক ছিল না তার মধ্যে। কয়েক টুকরো ফল ,একটু চিজ আর স্যুপ আর বড় জোর এক আধ টুকরো মাংসের রোস্ট। তবে খাবার পর এক কাপ গরম গরম কফি চাই ই চাই।
তারপর শুরু হতো তার কাজ। কি কাজ ই না পারতেন তিনি। প্রথমে যেতেন লাইব্রেরি তে। চিঠিপত্র লেখা ,আদেশপত্রে সই,খসড়া করা সবই চলতো এই সময় এ ,৫/৬ জন প্রাইভেট সেক্রেটারি একসংগে বসত পাশাপাশি। নেপোলিয়ান একসাথে ৫/৬ জনকে বিভিন্ন বিষয় এ বক্তব্য বলে যেতেন নোট করে নেবার জন্য ,একটু ও ভুল হতো না কারুর সাথে কারুর গোলমাল হয়ে যেত না -এমন ই আশ্চর্য স্মরনশক্তি ছিল তার। 
লাইব্রেরী থেকে দরবার গৃহ। এইখানেই সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন তিনি। সন্ধ্যা ৬ টা য় ডিনার খাবার কথা,কিন্তু কাজে এমন ব্যস্ত থাকতেন যে রাত্রি ১০-১১ টা র আগে ডিনার খাওয়ার ফুরসৎ হতো না তার। 
ও দেশে মদ্যপান টা তেমন দোষের নয়। ঠান্ডার দেশ সকলেই খায়। আর বিশেষ করে ফরাসি মদের এমনিতেই খুব নামডাক। নেপোলিয়ান এর কিন্তু মদের উপর একদম ঝোঁক ছিল না -তাঁর প্রিয় পানীয় ছিল কফি। 
ঘুমোতে তাঁর অনেক রাত হতো। সময় সময় সারা রাত এ একবার ও বিছানায় যেতেন না ,আর গেলেও ২/১ ঘণ্টা র বেশি ঘুমাতেন না। অনেক সময় এক ঘুম দিয়ে দুপুর রাত এ লেখাপড়ার কাজ শুরু করে দিতেন। ঘুমাবার জন্য কোমল বিছানার ধার ধারতেন না। শোনা যায় অনেকবার যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঘোড়ার পিঠে আধঘন্টাটাক ঘুমিয়ে নিয়েছেন তিনি।
সারা জীবন ধরে যুদ্ধবিগ্রহ,রাজ্য শাসন এবং নানা রাজকার্য করে কাটালেও জ্ঞানবিজ্ঞান এর প্রতি নেপোলিয়ান এর ছিল অসম্ভব টান। অসাধারণ পান্ডিত্য ছিল তাঁর।সাহিত্য,দর্শন,ইতিহাস ,ভূগোল ,ললিতকলা -সব এরই চর্চা করেছেন তিনি। যা পড়তেন তাই খাতায় টুকে রাখতেন। ছেলেবেলা থেকে এই অভ্যাস আর স্মৃতিশক্তি এর তো কথা ই নেই। শোনা যায় তাঁর ছেলেবেলার একখানা নোটবুক এ একেবারে শেষ পাতায় লেখা ছিল -"সেন্ট হেলেনা ,আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে একটি রুক্ষ ,পার্বত্য দ্বীপ"।কে জানতো ওই  পার্বত্য দ্বীপটিতেই তাঁর জীবন এর শেষ কটা দিন অমন নিষ্ঠুর ভাবে শেষ হবে ?

No comments:

Post a Comment