Cross-Column

Sunday, July 2, 2017

                           
                        টাকার জন্মকথা 
টাকা ছাড়া জীবন যেন অনেকটাই অচল। তুমি একটা পেন্সিল কিনতে চাও,তোমার একটা আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে অথবা বাইরে কোথাও বেড়াতে যাবার কথা ভাবছো -যাই করতে যাও না কেন তার জন্য টাকার দরকার। তো এই টাকা কোথা থেকে এলো,কেমন করে এলো তা নিশ্চয় তোমাদের ভাবায়।চলো জানার চেষ্টা করি টাকার জন্মকথা। 

একটা সময় ছিল যখন টাকা ছিল না। তখন কিন্তু মানুষের বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হতো। তাহলে তখন তারা কি ভাবে তাদের ওই চাহিদা মেটাতেন?মুদ্রা প্রচলন এর আগে যে পদ্ধতিতে মানুষ তার প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতো ,তার নাম বিনিময় প্রথা। ধরা যাক ,নদী থেকে জেলে মাছ ধরেছে,কিন্তু এতো মাছের দরকার নেই। তার দরকার একটু দুধ। তো সে দুধ বিক্রেতা কে মাছ দিয়ে দুধ নিয়ে নিলো। কিন্তু ধরা যাক ওই দুধ বিক্রেতা র মাছের দরকার নেই। তাহলে তো জেলে দুধ কিনতে পারবে না। অন্যদিকে দুধওয়ালার দরকার একটা তীরধনুক। কিন্তু তীরধনুক বিক্রেতার আবার মাছ বা দুধ কোনোটাই দরকার নেই। তাহলে তো কোনো বিনিময় হবে না। কেউ তার দরকারের জিনিস টা পাবে না। এমন সমস্যার সমাধান করতে মানুষ একটা উপায় খুঁজে বার করলো, বিনিময়ের একটি মাধ্যম ঠিক করলো তারা। আর তার একটি মান ও বেঁধে দেয়া হলো। সবাই এটা মেনে নিলো। সবাই মেনে না নিলে কিন্তু মুদ্রার কোনো দাম থাকে না। বিনিময়ের ওই মাধ্যম হলো টাকার ''পূর্বপুরুষ''।

মুদ্রা বা টাকা আবিষ্কারের আগে বিভিন্ন দেশে নানা ধরণের বস্তু কে বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন ভারতে কড়িকে বিনিময় মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হতো। ফিজি দ্বীপে টাকার কাজ চলতো তিমি মাছের দাঁত দিয়ে।সামোস দ্বীপে মাদুর কে বিনিময় মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হতো। কোথাও গরু ,ছাগল ,ভেড়া কোথাও আবার মাছ ব্যবহার করা হতো টাকা হিসাবে। প্রাচীন যুগে লবন কে টাকা হিসাবে গণ্য করা হতো কোথাও কোথাও।নিউ গিনি তে টাকার কাজ চলতো কুড়ালে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ইয়াপ এ বিনিময় মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা হতো চকমকি চাকতিকে।নাইজেরিয়া তে টাকার মর্যাদা পেয়েছিলো হাতে পড়ার বালা।দেশ ভেদে এমন অনেক বিচিত্র জিনিস এ টাকার কাজ চলতো। 
কড়ি,মাছের দাঁত,পালক ,মাদুর -এসব লেনদেন আগের চেয়ে সহজ হলো ঠিকই,কিন্তু পুরো সাচ্ছন্দ্য এলো না। এর পিছনে ছিল অনেক কারণ।কড়ি,মাছের দাঁত,পালক ইত্যাদি বহন করা সহজ নয়। আবার একেক দেশে একেক রকম রীতিনীতি বলে এক এলাকার মাধ্যম অন্য এলাকায় অচল। এমন অবস্থায় মানুষ নতুন করে ভাবতে শুরু করলো। আর সেখান থেকে তাদের মাথায় এলো তামা রুপা ও সোনা র মুদ্রার।তামা রুপা ও সোনা মূল্যবান ধাতু। এগুলোতে সহজেই ছাপ দেওয়া যায়। আবার রোদ ,বৃষ্টি ,জলে এইগুলি নষ্ট হয় না। এইগুলি বহন করা সহজ। সংরক্ষণ করা কঠিন নয়। এই কারণ এ শুরু হলো তামার মুদ্রা ,রুপার মুদ্রা ও স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন। একসময় ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবী জুড়ে।
টাকা একটি মুদ্রার নাম।মুদ্রায় আসলে বিনিময়ের মাধ্যম।একেক দেশের মুদ্রার একেক রকম নাম। টাকা ,ডলার,রুপি,দিনার,ইয়েন,রিঙ্গিত ,ইউরো -সবই হচ্ছে মুদ্রা। ঠিক কবে কোন দেশে ধাতব মুদ্রার প্রচলন শুরু হয় তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে জোরালো দুটি মত আছে।এদের এক পক্ষের মতে চীন দেশে প্রথম ধাতব মুদ্রার প্রচলন হয়। 
অনেকে মনে করেন তুরস্কের লিডিয়া দ্বীপে প্রথম চালু হয় মুদ্রা। সেটি খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১০০০ বছর আগে। তার মানে প্রায় ৩০০০ বছর আগে ধাতব মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। ভারতে প্রথম তামার মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। মনে করা হয় ২৪০০ বছর আগে সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের আমলে এই মুদ্রার প্রচলন হয়। ধাতু গলিয়ে পাতলা পাত তৈরি করে সেটি কেটে মুদ্রা তৈরি করা হতো। মুদ্রার পিঠে থাকতো নানান ধরণের ছাপ।ধাতু গলিয়ে সবাই মুদ্রা তৈরি করলে কেউ কারওটা গ্রহণ করবে না। এই কারণে ছাপ দেওয়া সরকারি মুদ্রা তৈরি করা হতো। যাতে নকল করা না যায়। এরপর ভারতে বিভিন্ন রাজবংশ শাসন করেছে। বিদেশিরা দখলে নিয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ডিজাইনের ধাতব মুদ্রা চালু করেছে। তবে এতে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে ব্রিটিশ আমলে।

No comments:

Post a Comment