শহীদ মিনার
কলকাতা এসেছে অথচ শহীদ মিনার দেখেনি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু ১৫৭ ফুট (৪৮ মিটার)উচ্চতার এই মিনারটি দেখলে কি বোঝা যায়,১৮২৮ সাল থেকে কত ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে এই মিশরীয় স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত স্তম্ভটি আকাশের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে। এই মিনারে যেমন মিশে আছে ব্রিটিশ ভারতের কাহিনী ,তেমনি মিশে স্বাধীনোত্তর ভারতের ইতিহাস। ব্রিটিশরা ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কামান্ডার মেজর জেনারেল স্যার ডেভিড অক্টোরলোনির স্মৃতিতে এই সৌধটি নির্মাণ করেন।
১৮০৪ সালে দিল্লীতে মারাঠাদের বিরুদ্ধে তাঁর সফল আত্মরক্ষা এবং ইঙ্গ নেপাল যুদ্ধে গোর্খাদের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানীর বাহিনীর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এই সৌধটি নির্মিত হয়েছিল,নাম হয় অক্টারলোনি মনুমেন্ট। সৌধটির নকশা প্রস্তুত করেন জে.পি.পার্কার।সরকারী কোষাগারের অর্থসাহায্যে এই সৌধটি নির্মিত হয়। সৌধটি নির্মাণ কালে ব্যয় হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা।
১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার এই স্মৃতি সৌধ টিকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।সেইসময় এই সৌধের নতুন নামকরণ করা হয় শহীদ মিনার। খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে শহীদ মিনারের উপর দিকের সাথে সিরিয়ার স্থাপত্যের মিল রয়েছে। আর চূড়াটিতো তুরস্কের ডোমের মতো। শহীদ মিনারের মাথায় ২ টি ব্যালকোনিও আছে। ২১৮ টি সিঁড়ি বেয়ে সেই ব্যালকোনিগুলোয় ওঠাও যায়। তবে আজকাল আর চাইলেও ঢোকা যায় না, তার আগে কলকাতা পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। এই সৌধের শীর্ষ ভাগে সর্বশেষ উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ও তার পরিবার।
শহীদ মিনারকে সাধারণত 'মনুমেন্ট' নাম এ উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এটি মধ্য কলকাতার এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে ময়দানের উত্তর পূর্ব কোন এ অবস্থিত।বার্ন এন্ড কোম্পানী এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছিলেন।
১৯৯৭ সালে একজন পর্যটক এই সৌধের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।তারপর থেকে শহীদ মিনারের উপরে উঠতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। লালবাজার পুলিশ সদর দফতরে ঠিকানা ও ফটো আইডির অনুলিপি জমা দিতে হয়। বহিরাগত পর্যটকদের হোটেলের নথি জমা রাখতে হয় এবং বিদেশিদের পাসপোর্টের অনুলিপি জমা রাখতে হয়।
লন্ডন আই এর মতো শহীদ মিনারের উপর থেকে কলকাতার দৃশ্য দেখা যায়। ২০১১ সালে শহীদ মিনারের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। এই সংস্কারটি ২ ভাগে শেষ হয়। প্রথম ভাগের সংস্কার শেষ হয়ে গিয়েছে ২০১২ সালের ১৫ জুন। সংস্কারে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। মিনারের ভিতরে ও বাইরে আলোকিত ও রং করাও হয়েছে।সংস্কারের দ্বিতীয় পর্যায়ে মিনারের পাদদেশে একটি অস্থায়ী মঞ্চের ব্যবস্থা হবে। সংস্কার শেষ হয়ে গেলে পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এই মিনারের উপরে ওঠার সুযোগ পাবে,মিনার পর্যন্ত যাওয়ার পথটি ফুল গাছ দিয়ে সাজানো হবে।
Such a great post..
ReplyDeleteশহীদ মিনার