Cross-Column

Thursday, November 16, 2017

চার্লি চ্যাপলিন

সিনেমা জগতের একটি সাড়া জাগানো নাম চার্লি চ্যাপলিন!

সিনেমার কথা এলে সবার আগে যার কথা মনে পড়ে তার নাম চ্যাপলিন-"চার্লি চ্যাপলিন",তিনি ছিলেন একাধারে নায়ক ও পরিচালক। এতো বড়ো শিল্পীর অভিনয় দেখা জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। চ্যাপলিন জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে।জীবিত অবস্থাতেই পেয়েছেন কিংবদন্তী নায়কের মতো খ্যাতি।নির্বাক যুগ থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত একটানা অভিনয় করে গেছেন এই আশ্চর্য অভিনেতা। ২৫ বছর বয়স থেকে যে বিপুল যশগৌরবের অধিকারী হয়েছিলেন,পৃথিবীতে এত কম বয়সে এত সম্মান বোধ হয় কখনো জোটে নি। ছোট্ট খাটো সেই লোকটি ,আগোছালো সেই মানুষটি -ভাগ্য আর মানুষের কাছে বার বার যিনি অপমানিত হয়েছেন,ছবির পর্দায় যখন ভেসে ওঠে তার চেহারা তখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। 
ছেলেবেলায় চার্লি ছিলেন খুবই গরিব। রাস্তায় গান গেয়ে আর নেচে পয়সা রোজগার করতে হতো তাদের। কিন্তু চলচ্চিত্রের গোড়ার দিকে তিনি চলে আসেন আমেরিকায়। এই আমেরিকা হচ্ছে চলচ্চিত্রের পীঠস্থান। আগে যেটা ছিল নিউইয়র্কে পরে উদ্যোক্তারা আস্তে আস্তে চলে আসেন হলিউডে।
চিত্র নির্মাতা কর্নেল সেলিগ।১৯০৮ সালে হলিউড এ এসে তাঁবু ফেললেন। ১৯০৯ সালে এলেন বিলি আন্ডারসন।১৯১০ সালে এলেন গ্রিফিথ। যাই হোক চার্লি প্রথম এ যে ফ্লিম এ অভিনয় করেন তার নাম মেকিং  এ লিভিং।ছবিটি ছিল এক রিলের। প্রদর্শনের মেয়াদ ১০ মিনিট। চার্লি কে দেওয়া হয়েছিল এক জোচ্চোরের পার্ট। নিন্দা,প্রশংসা সব জুটেছিল তার। তারপর নানা ইতিহাস ,নানা চমক ,নানান ঘটনা। 
যে চমক উপন্যাসের থেকে আকর্ষণীয়। চার্লি নিজে পরিচালক হলেন ,অভিনেতা হলেন,ও অভিনেতা তৈরী ও করলেন। এক এক করে চার্লি তুললেন দি ফ্লোর ওয়ার্কার ,দি ভ্যাগাবন্ড ,দি ফায়ারম্যান,দি কিড , দি কাউন্ট ,তুললেন  দি  পনশপ ,বিহাইন্ড দি স্ক্রিন ,দি ইমিগ্রেশন ,তুললেন দি কিওর,দি এডভেঞ্চার।
চার্লির প্রথম মহৎ ছবি বলে যেটি পরিচিত ,সেটির নাম 'এ ডগস লাইফ ',এরমধ্যে মান সম্মান অর্থ প্রতিপত্তি সবই এসেছে চার্লির। তারপর কত ছবিই না তুললেন তিনি -গোল্ড রাশ ,সিটিলাইট,মর্ডান টাইমস ,মসিয়ে ভার্দু। হিটলারকে বিদ্রুপ করে তার ছবি -ডি গ্রেট ডিক্টেটর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই তৈরি হয়েছিল। আশ্চর্য    নকল করেছিলেন তিনি হিটলার কে এই ছবিতে আর আশ্চর্য তার ধারণার মতো এই ভাবেই হিটলারের পতন ঘটলো।লাইম লাইট চার্লির শেষ দিকের তোলা ছবি। এটিতে তিনি অন্য  চেহারায় নেমেছেন।অভিনয় এ চার্লি আমাদের হাসিয়েছে যেমন কাঁদিয়েছে ও তেমনি। তার অভিনয় দেখতে হাসতে হাসতে ভাবতে হয় আর ভাবতে ভাবতে হাসতে হয়। চার্লি কে দেখে অনেকেই পুরো মাপের হাসি এর ছবি তুলতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু এমনটা সফল হতে পারেনি। অবশ্য লয়েড আর বাস্টার কীটন লরেল হার্ডি জুটি অনেকটা সাফল্য লাভ করতে পেরেছিলেন।আর একজন উল্লেখযোগ্য কৌতুক অভিনেতার নাম না বললেই নয়। ইনি হলেন ম্যাক সেনেট।
৮০ বছর বয়েস  এ চার্লি ছিলেন সমান কর্মক্ষম। জন্মেছিলেন চলচ্চিত্রের শিল্পের জন্মকালে ই। ছায়াছবি এর সাথে তার যোগ ছিল নাড়ির।তাই চলচ্চিত্রের কথা এলেই চার্লি চ্যাপলিন এর কথা সবার আগে মনে আসে। তিনি শুধু অভিনেতা ,পরিচালক ছিলেন না ,লেখক হিসেবে তার খ্যাতি আছে ,নকশার ও স্রষ্ঠা তিনি,অপূর্ব সব নাটক লিখেছেন। সুরোস্রষ্ঠা হিসেবে অসামান্য তিনি। 
শিল্পী হিসেবে চার্লি চ্যাপলিন নোয়েল কাওয়ার্ড কি আইভোর নভেল এর চেয়ে অনেক বড়ো। চার্লি এর সমসাময়িক যে কয়জন প্রতিভাবান শিল্পী কে আমরা চলচ্চিত্রের সাহায্য নিতে দেখেছি তাদের  সকলের চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বড় তিনি। যে ভবঘুরে চরিত্রটির তিনি স্রষ্ঠা,তার মৃত্যু হবে না কোনোদিন। বছরের পর বছর কেটে যাবে ,যুগ এর পর যুগ কিন্তু অক্ষয় অমর হয়ে থাকবে সেই বিরাট বুট জোড়া ,সেই গোল টুপি আর সেই বাঁকানো ছড়ি। চার্লি চ্যাপলিন অমর হয়ে আছেন এই ৩ টি  প্রতীক চিহ্নের মধ্যে।   

Sunday, September 10, 2017

Fairy Tale

রূপকথা কি ,রূপকথার জনক ও রূপকথার একটি গল্প 
রূপকথা বা উপকথা সারা পৃথিবীর সম্পদ। মানুষ যখন ছিল বুনো,অসভ্য,তখন ও সারা দিনের শেষে গুহায় বসে মশালের আলোয় দলপতি শুনিয়েছে গল্প। তার কৌতূহলী শ্রোতাদের চোখের জিজ্ঞাসা কখনো ও ফুরোয় না। তাই আরো ও কত যুগ বাদে সন্ধ্যেবেলা মা ঠাকুমা দিদিমার কাছে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনেছে ছেলে মেয়েরা।সাধারণত দেখা যায় এই সব রূপকথার কোনো ও নির্দিষ্ট লেখক নেই। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে এই সব গল্প কথা।আর দেখা যায় আমাদের সুপরিচিত এক একটি রূপকথার সাথে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রূপকথার আশ্চর্য মিল। 
রূপকথা মুখে মুখে তৈরি হলেও কখনো  কখনো একজন বিশেষ রচয়িতা তাকে সারা দেশের সম্পদ করে তুলতে পারেন। এই রকমই হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন আর ডেনমার্ক এক হয়ে গেছে।ডেনমার্কের ওডেন্স নগরে ১৮০৫ সালে জন্মেছিলেন হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন।উপন্যাস,নাটক অনেক লিখেছিলেন তিনি ,কিন্তু তাঁকে অমর করে রাখলো তার রূপকথাগুলি। রাজা রানী ,পশুপাখি ,গাছপালা ,পুতুল -এমনকি সামান্য সূচ নিয়েও তার গল্প। তাঁর বিখ্যাত গল্প ''তুষাররানী'' পড়ে ডিউক আর ওল্ডেনবার্গ তাকে নিজের হাতের হীরের আংটি খুলে দিয়েছিলেন। জার্মানী এর রাজা তাকে উপাধি দিয়েছিলেন যার ইংরেজি হলো 'অর্ডার অব ডি রেড ঈগল', পৃথিবীর নানা ভাষায় এন্ডারসন এর গল্প গুলি অনুবাদ হয়েছে।রূপকথা লেখার জন্য তাকে ''রূপকথার জাদুকর''নাম এ অবিহিত করা হয়। এন্ডারসনের রূপকথা, যার সংখ্যা ৩৩৮১ এর কম নয়, ১২৫ টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত রূপকথাসমূহ হল "দি এমপেরর্স নিউ ক্লদস", "দ্য লিটল মারমেইড", "দ্য নাইটিংগেল", "দ্য স্নো কুইন", "দি অাগলি ডাকলিং", "থাম্বেলিনা",তারই একটি গল্প আজ শোনাবো।

টিনের সেপাই
একজন মিস্ত্রি একটি টিনের পাত কেটে তৈরি করলো ২৫ টি টিনের সেপাই।তাদের গায়ে লাল নীল পোশাক হলো। কাঁধে বন্দুক। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেপাইরা। কিন্তু একটু মুশকিল হলো। সব শেষে টিন কম পড়ে গেলো,তাই মিস্তিরির শেষ পুতুলটিকে করতে হলো খোঁড়া। বাকি ২৪ জনের পাশে এক পায়ে সে রইলো দাঁড়িয়ে। সবগুলো পুতুল একটা বাক্সে ভরে মিস্ত্রি দিলো বাজারে পাঠিয়ে বিক্রির জণ্য।
সেই বাক্স শুদ্ধ কিনে নিলেন একজন লোক একটি ছোট্ট ছেলের জন্মদিন এ উপহার দেবেন বলে। 
ছেলেটি তো ভারী খুশি। তার ছিল এক মস্ত টেবিল। সেখানে সে সেপাই গুলোকে সাজিয়ে রাখলো। আরো অনেক খেলনা তার। একটা পিচবোর্ড এর সাজানো গোছানো বাড়ি,বাড়ির সামনে গাছ,পুকুর ,হাঁস।আর বাড়ির ফটকের সামনে রেশমি পোশাক পরা একটি মেয়ে এক পা তুলে নাচছে।হটাৎ মনে হয় তার ও এক পা বুঝি খোঁড়া। খোঁড়া সেপাই তাকে দেখে ভাবলো বেশ তো !মেয়েটিও খোঁড়া ,আমিও খোঁড়া। ওকেই আমি বিয়ে করবো। খোঁড়ার বৌ ও খোঁড়াই হবে। কিন্তু মেয়েটি বড়ো লোক। কি করে ওর সাথে আলাপ করি ?
অনেক রাতে যখন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন পুতুলদের জাগার সময়। ওরা তখন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে ,নাচগান করে। আর ঠিক ভোর হবার আগেই চলে যায় যে যার জায়গায়।
একপাওয়ালা সেপাই ভাবছে মেয়ে টি যখন নাচবে তখনি ওর সাথে আলাপ করবে। এই ভেবে যেই সে এগিয়েছে অমনি পেতলের বামুন পুতুলটা তাকে তেড়ে এলো। 
খবরদার!ওর সাথে ভাব করবে না। 
খোঁড়া সেপাই চুপ করে গেলো। 
বড়োলোকের মেয়ে এর সাথে তার আর আলাপ করা হলো না। অন্য পুতুলরা ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু সেপাই জেগে জেগে পাহারা দিলো সমস্ত রাত। 
সকালবেলা খেলতে খেলতে একটি ছেলে সেপাই টিকে বসিয়ে দিলো জানালার ধারে।একটু বাদে এক ঝলক হাওয়া এসে ওকে এক ধাক্কায় ফেলে দিলো একেবারে রাস্তায়। বাড়ির সবাই তাকে কত খুঁজলো,কিন্তু পেলো না। 
নিজে সেপাই হয়ে কি করে ই  বা চিৎকার করে ডাকে ?তাই খোঁড়া পায়ে কাধে বন্দুক নিয়ে সোজা হয়েই দাঁড়িয়ে রইলো সে। ফুটপাথের পাথরের ফাকে এই ভাবে সে আটকে রইলো। 
তারপর নামলো তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি থামতেই পথের দুধারে জল দাঁড়িয়ে গেলো। পথ দিয়ে যেতে যেতে দুটি ছেলে তাকে দেখতে পেলো। কি আশ্চর্য !একটা টিনের সেপাই !
তারা একটা কাগজের নৌকো তৈরি করে তাতে সেপাই কে বসিয়ে তাকে জলে ভাসিয়ে দিলো। জলের টানে ভেসে চললো নৌকো। একটু পরে সে এসে ঢুকলো নালার ওপর এক খিলানের নিচে। সেখানে দারুন অন্ধকার। কিন্তু সেপাই বন্দুক তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একটা ইঁদুর এসে তার পথ আটকাতে চাইলো।সেপাই এর কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে ইঁদুরটা কটাস করে কামড়ে দিলো তাকে। 
জলের টানে নৌকো আবার এগিয়ে চললো। ড্রেনের কাছে ঘুরে ঘুরে জল চলেছে। এবার নৌকা গেলো ডুবে। নৌকার কাগজ খুলে কোথায় তলিয়ে গেলো। খোঁড়া সেপাই সটান গিয়ে পড়লো নদীর জলে। সেখানে আর এক কান্ড !একটা প্রকান্ড মাছ তাকে গপ করে গিলে ফেললো। মাছের পেটে ভয়ানক অন্ধকার। কিন্তু টিনের সেপাই সেখানেও বন্দুক উঁচিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে রইলো। 
পরদিন ছেলেরা মাছটি ধরে নিয়ে এলো বাজারে। সেই মাছ কিনে নিয়ে গেলো একটি ছোট ছেলের বাবা। বাড়ির ঝি যেই মাছ টি কেটেছে অমনি তার পেটের ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো একটা খোঁড়া টিনের সেপাই পুতুল। 
ছেলেটি দৌড়ে এলো -'ও মা আমার সেই খোঁড়া টিনের সেপাইটা!-সেই  যে জানালা দিয়ে পড়ে গিয়ে ছিল। 
খোঁড়া সেপাই আবার ফিরে গেলো টেবিলের উপর ২৪ জন সৈনিক এর পাশে।
একদিন শীতকালে ঘরে আগুন জ্বলছিল। ছোট ছেলেটি হটাৎ কি খেয়ালে সেপাই কে ফেলে দিলো আগুনে। নষ্ট হয়ে গেলো তার নীল লাল পোশাক। তবুও সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হটাৎ একটা দমকা হাওয়াই সেই রেশমি পোশাক পরা কাগজের মেয়েটি এসে পড়লো আগুনে -ঠিক খোঁড়া সেপাই তার পাশে।কাগজ পুড়ে ছাই হলো আর টিন গেলো গলে। 
বাড়ির ঝি পরদিন এসে সেই কাগজের ছাই আর টিনের টুকরো ফেলে দিলো আবর্জনার মধ্যে।

Tuesday, August 15, 2017

Mummy of Kolkata

কলকাতার জাদুঘরে রাখা মমিটি কার ?

কোনো লেখার যেমন কৃমি মাংস খুঁটে সমালোচকেরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তেমনি পৃথিবীর নানান মমিকে নিয়ে এই শতকের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মাতামাতি শুরু করে দিয়েছিলো। উদ্দেশ্য মমি মানুষগুলি কি রোগে আক্রান্ত হয়ে বা কেমন করে মারা গিয়েছিলো,ওদের খাদ্য কি ছিল -এই সব জানা। 
আর এই মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ জানতেই কলকাতার জাদুঘরের মমিটির এক্স-রে করা হয় ১৯৮০ সালের ৯ অক্টোবর তারিখে।ভারতে মমির এক্স-রে সেই প্রথম। তারপর একে একে জয়পুর ,বরোদা,বেঙ্গালুরু,লাখনৌ ,হায়দ্রাবাদ শহরের মিউজিয়ামগুলোয় সংরক্ষিত মমিদের ও রঞ্জনরশ্মির সামনে দাঁড়াতে হয়। আর মমির এই  রেডিওলজিক্যাল টেস্ট এর পুরোধা ছিলেন ডঃ সুভাষ বসু।
নির্দিষ্ট দিনে মমিকে তার কাচপাত্র থেকে একটুও না সরিয়ে পোর্টেবল এক্স -রে মেশিন এর নিচে রাখা হলো। দিন ২০ বাদে মমির এক্স -রে রিপোর্ট বেরুলো।ডঃ বসুর রিপোর্ট বলছে -'এই নরকঙ্কালটি এক পূর্ণবয়স্ক সুঠাম 
পুরুষমানুষের। নৃতাত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে কঙ্কালটিতে নেগ্রোইড বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। মমির মানুষটির বয়স ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে। নিচের চোয়ালের মাড়ি অংশ কিছুটা বসে গিয়েছে।তবে দাঁত গুলি অক্ষত আছে। মাথার খুলি অবিকৃত কিন্তু বুক ,পিঠ,পাঁজর ও কন্ঠায় বেশ ক্ষতের চিহ্ন। 
ফরেনসিক দিক থেকে দেখলে মনে হয় ওকে হত্যা করা হয়েছে পিটিয়ে। ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয় নি। মেরুদণ্ডের হাড়ে স্পন্ডিলাইটিস এর লক্ষণ ধরা পড়েছে। হাঁটুতে ছিল বাত। আর এই রোগটি তাকে পঙ্গু করে দিচ্ছিলো। রোগটি খুব সচরাচর দেখা যায় না। ভারতের মাত্র ৬ টি মমির মধ্যে মাত্র ১ টিতে অর্থাৎ কলকাতার জাদুঘরের মমির শরীরে ছিল সেই রোগ যার পোশাকি নাম ''আলকাপটনুরিয়া।''এরফলে মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধিতে ক্যালসিয়াম এর মাত্রা বেড়ে যায়। আর তাছাড়া শরীরের গ্যাটে  গ্যাটে অস্টিওআর্থারিটিস্ট এর আগাম লক্ষণ গুলো ধরা পড়ে,
কলকাতার মমির এক্স-রে ভারতে সর্বপ্রথম ঘটনা হলেও সারাবিশ্বে এ ধরণের ব্যাপার ঘটেছিলো ১৮৯৬ সালে। থ্র্যাস্টন হল্যান্ড সে বছর লিভারপুল এ একটি মমি করা পাখীর রেডিওগ্রাফ করেন। ২৬১ টি প্লেট হয়েছিল পাখীটির। এর পরের বছর স্যার ফিল্ডার্স পেট্ট্রি প্রথম মানুষের মমির এক্স -রে করেন।
( শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী এর ''মমি রহস্য'' থেকে সংগৃহীত)

Thursday, August 10, 2017

Lac De Gafsa

লেক ডি গাফসা: মরুভূমির বুকে হঠাৎ জন্ম নেয়া জলাশয়


আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা। সেই মরুভূমির পঁয়তাল্লিশ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে আফ্রিকার উত্তরের একটি দেশ তিউনিসিয়া। সাহারা মরুভূমির শুষ্ক আবহাওয়ার প্রকোপ রয়েছে দেশটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে। তিউনিসিয়ার একটি খুব পরিচিত শহর গাফসা। উত্তর আফ্রিকার রাসায়নিক রপ্তানিকারক হিসেবে দেশটির বেশ খ্যাতি রয়েছে। এই শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির ধূসর প্রান্তরে ঘটে গেছে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। কেউ বলে অলৌকিক, কেউ বলে অতিপ্রাকৃতিক, কারও মতে ভূগোলের রকমফের। যে যা-ই বলুক না কেন, এর উৎপত্তি কিন্তু আজও অজানা।
মরুভূমির মাঝেই গড়ে উঠেছে কিছু বিচ্ছিন্ন গ্রাম। গ্রীষ্মের দিনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে গরম অনুভূত হয় সেসব এলাকায়। গরমে আর বিশুদ্ধ পানির হাহাকারে খুব কষ্টে এখানকার মানুষের দিন কাটে। তাপের ভয়াবহতায় এক ফোঁটা পানিও যেন এনে দেয় অনেক প্রশান্তি।
গ্রামে তেমন চাষবাস নেই বললেই চলে। ঘরে ঘরে হয় মেষ বা ভেড়ার চাষ। ২০১৪ সালের জুলাই মাসের দিককার ঘটনা, একদিন দুপুরবেলা কয়েকজন মেষপালক বের হয় কিছু মেষ শাবক নিয়ে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু দলের একজন হঠাৎ চিৎকার করে ওঠাতে সকলের ভাবোদয় ঘটল। কী ব্যাপার দেখতে গিয়ে বাকি ক’জনেরও চক্ষু চড়কগাছ। এ কী দেখছে! নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তারা। ঠিক আগের দিনও একই সময় তারা এই স্থানে অনেকটা সময় পার করে গেছে। এমন কিছু তো চোখে পড়েনি! অনেক বছর ধরে তারা এই অঞ্চলে বসবাস করছে। এমন কিছুতো কখনো ছিল না এখানে। তারা সকলেই অবাক হয়ে নিজেদের মাঝে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। কারণ ধূসর মরুভূমির এক নির্দিষ্ট প্রান্তর জুড়ে রাতারাতি গজিয়ে গেছে পানিতে পরিপূ্র্ণ একটি লেক! যে লেকের অস্তিত্ব তারা আগের দিন পর্যন্ত জানতো না। যে জায়গায় তারা লেক দেখছে সেখানে ছিল উঁচু উঁচু পাহাড়ের বেষ্টনী। এমন অবাক কাণ্ড দেখে কার না চোখ কপালে ওঠে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে চারিদিকে খবর পৌঁছে গেল। পানির নাম শুনেই যেন সকলেই তড়িঘড়ি করে ছুটে দেখতে আসে সেই লেকটি। আর আসবেই না বা কেন? এমন অলৌকিক ঘটনা নিজের চোখে না দেখে তো আর বিশ্বাস করা যায় না। সকলের চোখেই বিস্ময়ের অভিব্যক্তি। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সকলে উপস্থিত। সকলের খুব পরিচিত এই জায়গা। রাতারাতি গজিয়ে ওঠা এই লেককে অনেকে ভৌতিক কর্মকাণ্ড ভেবে দূরে সরে যায়। আবার কারো মতে এ তো সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। এমন ধূসর মরুভূমিতে গ্রামের লোকের কষ্টের কথা ভেবেই না এই লেকের সৃষ্টি। অনেকেই তাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে মনের আনন্দে ঝাপিয়ে পড়তে থাকে থৈ থৈ পানির মধ্যে। মনের সব সন্দেহ দূরে ঠেলে দিয়ে যেন অপার আনন্দে ভেসে যেতে থাকে চারিদিক। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
লেকের চারপাশ ঘিরে রয়েছে অসংখ্য পাথরের পাহাড়। অনেকেই তাই লেকের গভীরতা আন্দাজ করে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিচ্ছে স্কুবা ডাইভ। গ্রামবাসীরা যেন হঠাৎ ঈদের চাঁদ হাতে পাওয়ার আনন্দে মেতে উঠে। হাজারও মুখে তখন আনন্দের প্রতিধ্বনি। পরবর্তীতে এটি ‘লেক ডি গাফসা’ অথবা ‘গাফসা বিচ’ নামে পরিচিতি পায়।
খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে দ্রুত বেগে। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে লোক আসে এবং স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নেয়। তেমনি এক কর্মরত তিউনিসিয়ান সাংবাদিক লাখদার সৌদ ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে জানান, স্থানীয়দের অনেকেই একে অলৌকিক বলে থাকলেও কেউ কেউ একে অভিশাপ রূপেই দেখছে। প্রথম কিছুদিন পানি পরিষ্কার থাকলেও ধীরে ধীরে এতে শ্যাওলা জন্মে পানি ময়লা হয়ে যাচ্ছে, যা আপাতদৃষ্টিতে অপরিবর্তনীয়। এর ফলে কিছুটা ভয়েরও সৃষ্টি হয়েছে।
মেহদী বিলাল নামে স্থানীয় আরেকজনের সাক্ষাৎকারে জানা যায় যে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি বাড়ি ফিরে আসছিলেন। অনেকটা সময় বিরতিহীন হাঁটার ফলে মরুভূমির বুকে বিশাল লেক দেখে তার মনে হয়েছিল, তিনি বুঝি মরীচিকা দেখছেন। প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি তিনি, কেননা বিয়েতে যাওয়ার দিনও তিনি একই রাস্তা দিয়ে গেছেন। তখন এমন কিছু তার চোখে পড়েনি। তার ধারণা, এটি বিজ্ঞানের বাইরে অলৌকিক কিছু।
খবর শুনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে তদন্তে আসে। ঘটনাস্থলের চারপাশ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও তেমন কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না তারা। তবে তারা সন্দেহ পোষণ করে যে, এই পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয়তা থাকতে পারে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই স্থানীয়দের সেই পানিতে গোসল না করার জন্য বার বার সতর্ক করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় আঠারো মিটার গভীর এবং এক হেক্টর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এই লেকের অবস্থান। স্থানীয় ভূতত্ত্ববিদদের মতে, ভূকম্পনের ফলে পাহাড়ের পাথর সরে গিয়ে এমন পানির প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। আবার অনেকের মতে, গভীর খাদে বৃষ্টির পানি জমেও এই হ্রদের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কারো মতবাদের পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ নেই। সবই অনুমান নির্ভর যুক্তি।
১৮৮৬ সালে তিউনিসিয়ার দক্ষিণাংশে ফসফেট (ফসফরাসজনিত অম্লীয় লবণ বিশেষ) আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে গাফসা দেশটির খনিজ ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তিউনিসিয়া বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ফসফেট রপ্তানিকারী দেশ। স্থানীয় এক পত্রিকা এই তথ্যের সূত্র ধরে উল্লেখ করে যে, স্থানীয় এই অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ফসফেটের খনি। বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে লেকের পানি। তাই এই পানি মোটেই নিরাপদ নয়।
প্রথম কিছুদিন পানি বেশ পরিষ্কার থাকলেও খুব দ্রুত তাতে শ্যাওলা জন্মে পানির রং ধূসর সবুজ বর্ণের করে ফেলে। তাই এই পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে আবার প্রশ্ন জাগে। লেক উদঘাটিত হওয়ার দু’সপ্তাহ পরে গাফসার ‘অফিসিয়াল ফর পাবলিক সেফটি’ জনগণকে লেকের পানিতে গোসল না করার জন্য সতর্ক করে দেয়। তাদের মতে, এই লেকে গোসল করা বেশ বিপদজনক। কিন্তু খুব কম সংখ্যক লোকই এই সতর্কতার কথা কানে তোলে। অসংখ্য মানুষ আজও এই লেকে আসে এবং গোসল করে। দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ ভিড় করে প্রকৃতির এই অপার বিস্ময় দেখার জন্য, যার উৎসের কিনারা আজও সকলের অজানা। এখনও পর্যন্ত এই লেকের পানি প্রসঙ্গে তেমন কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। এমনই এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার অবতারণা করতে গিয়েই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ কবিতায় উচ্চারণ করেছিলেন,
মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে॥
তুমি আছ, বিশ্বনাথ, অসীম রহস্যমাঝে
নীরবে একাকী আপন মহিমানিলয়ে॥

Wednesday, August 9, 2017

The Desert

নানাদেশের মরুভূমি 


দেশবিদেশের বহু জায়গায় আমরা বেড়াতে যাই। কিন্তু ক'জন শখ করে মুরুভুমিতে বেড়াতে যাই ?-তা বোধহয় গুনে বলা যাবে। বইয়ে লেখা মরুভূমির বৃত্তান্ত পড়ে আমরা রোমাঞ্চিত হই,মরুভূমির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি ,সেইসাথে অজানা বিপদের ভয়ে আতঙ্কিতও হই। তাই মরুভূমির কাছাকাছি গেলেও অধিকাংশ সময়ে তার ভিতরে কি আছে তা দেখার চেষ্টা আমরা করি না। অথচ এর ভিতরে লুকিয়ে আছে কত বিস্ময়। সেইসব বিষয় নিয়েই আজকের এই পোস্ট ''নানাদেশের মরুভূমি।''
মরুভূমি হলো বালির সমুদ্র। এই সমুদ্রে কোনো ঢেউ নেই। চারিদিকে শুধু বালি,বালি আর বালি।দিগন্ত বিস্তৃত এই বালির সমুদ্র দেখে মনে হয় যেন এর কোনো সীমানা নেই। যদিও তা ঠিক নয়। কোনোও মরুভূমি আকারহীন নয়।মরুভূমি যতই বিশাল হোক প্রত্যেক মরুভূমির একটা সীমারেখা আছে। যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো 'সাহারা' মরুভূমিও উত্তর ,পূর্ব ও পশ্চিমে সমুদ্র এবং দক্ষিণে তৃণভূমি দিয়ে সীমানা নির্দিষ্ট করা আছে। জলহীন এই সমুদ্রে ছিটেফোঁটাও বৃষ্টি হয় না। দিনেরবেলা সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপে শুধু ঝলসানো বালির দেখা পাওয়া যায়। এখানে দিনে যেমন প্রচন্ড গরম ,রাতে তেমনই ঠান্ডা। যখন শুরু হয় ''আঁধি''অর্থাৎ বালির ঝড় ,তখন নিস্তব্ধ মরুভূমির রূপটাই পাল্টে যায়।
পৃথিবীর যতগুলো মরুভূমি আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো হলো "সাহারা'' মরুভূমি। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে এর অবস্থান।সাড়ে ৩০০০ মাইল লম্বা এই মরুভূমির আয়তন প্রায় ৩৫00000 বর্গমাইল। অর্থাৎ ৫০ টি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সমান। বিস্তীর্ণ বালুকারাশির মধ্যে মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাথুরে পাহাড়। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির উচ্চতা ১১০০০ ফুট। এর একেবারে ওপরের অংশ তুষারে ঢাকা। 
আফ্রিকার দক্ষিণ অংশএ আরোও একটি মরুভূমি আছে। এর নাম ''কালাহারি'' মরুভূমি। সাহারার তুলনায় খুবই ছোট। মাত্র আড়াই লক্ষ বর্গমাইল এর আয়তন।এই মরুভূমিকে ঘিরে আছে এক বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। 
দক্ষিণ আফ্রিকার 'কালাহারি' মরুভূমির পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে আছে 'নামিব' মরুভূমি। এই মরুভূমির চরিত্র সাহারা মরুভূমির মতো নয়। এই মরুভুমিটি প্রায় সারাবছরই ধুলো মেশানো কুয়াশায় ঢেকে থাকে। এই ধরণের আর একটি মরুভূমি দক্ষিণ আমেরিকায় আছে। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই মরুভূমিটির নাম ''আটাকামা।''বিশেষজ্ঞদের মতে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে শুকনো মরুভূমি। এখানে সারাবছর বৃষ্টির পরিমান আধ ইঞ্চি এর ও  কম। এখানে যেসব গাছপালা বা প্রাণী  দেখতে পাওয়া যায় তারা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জল এই কুয়াশা থেকে সংগ্রহ করে নেয়।
দক্ষিণ আমেরিকার আর একটি মরুভূমির নাম 'পাটাগোনিয়া।' প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গমাইল আয়তনের এই মরুভুমিটির অবস্থান আজেন্টিনায়।
রকি পর্বতমালার পূর্বদিকে একটি মরুভূমি আছে। এই মরুভূমিতে শুকনো বালি ,তৃণভূমি ,পাহাড়পর্বত  ও গিরিখাত মিলেমিশে একসংগে আছে। প্রায় ৫০০০০০ বর্গমাইল বিস্তৃত এই মরুভুমিটি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এর অন্তর্গত।
 পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি আছে অস্ট্রেলিয়ায়। এর আয়তন প্রায় ১৩০০০০০ বর্গমাইল। অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশ এই মরুভূমি কবলিত অঞ্চল। এই মরুভূমি শুধু শুকনো বালিতে ভরা নয় ,মাঝে মাঝে আছে বিস্তীর্ণ তীর্ণভূমি। এইসব তৃণক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ ভেড়া ও গবাদি  পশু বিচরণ করে।
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মরুভুমিটি আছে ইরানে। মাত্র দেড় লক্ষ বর্গমাইল এর আয়তন। কিন্তু মজার কথা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু  বালিয়াড়িটি এখানেই আছে। শুধু কি তাই এখানকার বালিয়াড়ির সংখ্যাও অনেক। 
তুর্কিস্থানের পূর্বদিকে আছে দুটি মরুভূমি -'তাকনা মাকান ও গোবি সিংকিয়াং'।মঙ্গোলিয়ার প্রায় ৪০০০০০ বর্গমাইল এলাকা এই মরুভূমি গ্রাস করেছে। এই মরুভূমি দুটিতে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়না। গোবি মরুভূমি মালভূমি আকারের দেখতে। এখানকার বায়ুতে যে সামান্য পরিমানে জলীয়বাষ্প থাকে তার ছোঁয়ায় এই মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাস জন্মাতে দেখা যায়। 
সাহারা মরুভূমির খুব কাছেই আছে আর একটা মরুভূমি। যদিও এই মরুভূমিটির অবস্থান আফ্রিকায় নয়। মরুভূমি দুটিকে পৃথক করেছে সুয়েজ -প্রণালী। এই সংকীর্ণ প্রণালীটি যদি না থাকতো তাহলে সাহারা ও আরবের মরুভূমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে সাহারা মরুভূমির মানচিত্রটাই পাল্টে যেত। এই দুটি মরুভূমি মিলে পৃথিবীর প্রায় ১১ শতাংশ জমি দখল করে আছে। 
সবশেষে আসি 'থর' মরুভূমির কথায়। প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গমাইল বিস্তৃত এই মরুভূমির কিছু অংশ আমাদের দেশের রাজস্থানে রয়েছে। বাকি অংশ সিন্ধুপ্রদেশ ও বেলুচিস্তান এর ভিতর দিয়ে ইরাকের দিকে প্রসারিত। 
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

Tuesday, August 1, 2017

Hieun Tsang

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর জীবন ও ভারত ভ্রমণ (সংক্ষেপিত)
৬০৩ খ্রীষ্টাব্দে চীনের অন্তর্গত হোনান প্রদেশে চিনলিউ নগরে এই মনিষী পরিব্রাজক জন্মগ্রহন করেন।হিউয়েন সাঙ ছিলেন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী শেন হুই এর চতুর্থ পুত্র। কুড়ি বছর বয়েসএ আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধধৰ্ম গ্রহন করে ও গৃহত্যাগ করে তিনি পরিব্রাজকের জীবনযাপন করতে থাকেন।
 হিউয়েন সাঙ এর ভারত বিবরণ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ যদিও ঐতিহাসিকের উদ্দেশ্য নিয়ে তা রচিত হয় নি। তবু ধর্মোপাসক এই পরিব্রাজকের অন্তরে একজন ঐতিহাসিক বা একজন ভৌগোলিক বাস করতেন বলে তাঁর বিবরণ নেহাত 'কড়চা'জাতীয় ধর্মানুভব মাত্র হয়ে ওঠেনি বরং তৎকালীন বৌদ্ধ ভারতের একটা বিশ্বাসযোগ্য দলিল হয়ে উঠেছে। 

ফা হিয়েন এর মতো ভারতবর্ষে এসে  বৌদ্ধপুস্তকাদি সংগ্রহ ও বৌদ্ধ ধর্মের ঠিকঠাক ব্যাখ্যার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য সেকালের রীতি উপেক্ষা করে মাত্র ২ জন সঙ্গী নিয়ে চীন সম্রাটের বিনা অনুমতিতেই ভারতের দিকে রওনা হন এবং ৯ মাস ভ্রমণের পর বামিয়ান পৌঁছান। অবশেষে কপিশা ও না -কি -লো-হো-হয়ে তিনি ভারতের প্রাচীন রাজ্য গান্ধারে প্রবেশ করেন।শালাতুল তক্ষশীলা হয়ে তিনি কাশ্মীরে এসে দুবছর কাটান (৬৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দ)।পরে জলন্ধর,মথুরা,বালেশ্বর আসেন।কান্যকুব্জের সিংহাসনে তখন অধিষ্ঠিত রাজা হর্ষবর্ধন। তিনি ছিলেন বৌদ্ধমতের পৃষ্ঠপোষক।এখানে মাস কয়েক থেকে তিনি অযোধ্যা,প্রয়াগ,কৌশাম্বী,শ্রাবন্তী হয়ে কপিলাবাস্তুতে এসে বৌদ্ধ জন্মভূমি দর্শন করেন। সেখান থেকে এসে দেখেন মহাপরিনির্বাণ স্থান কুশীনগর। পরে বারাণসী ,সারনাথ থেকে গঙ্গার পথ ধরে গাজীপুরে আসেন।বৈশালী ,পাটনা ,হয়ে গয়ায় এসে দর্শন করেন পবিত্র বোধিবৃক্ষ। রাজগৃহ থেকে নালন্দায় এসে ২২ মাস ধরে নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরে চম্পা ,কজঙ্গল,পৌন্ডবর্ধন কামরূপ সমতট হয়ে পশ্চিমবঙ্গের তাম্রলিপ্ততে আসেন।মুর্শিদাবাদ এর কর্ণসুবর্ণ ছুঁয়ে তিনি আসেন উড়িষ্যা প্রদেশে। সেখানের গঞ্জাম হয়ে কলিঙ্গ কাঞ্চীপুর,কোঙ্কনপুর(মহারাষ্ট্র ),অজন্তা,ভরুকচ্ছ ,বলভী,সৌরাষ্ট্র  মুলতান প্রভৃতি ভ্রমণ করে হর্ষবর্ধনের আমন্ত্রণক্রমে পুনরায় কনৌজে আসেন। হর্ষবর্ধনের যত্নে কিছুকাল কাটিয়ে তাঁর প্রদত্ত প্রভূত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ ৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যভাগে হিউয়েন সাঙ স্বদেশের উদ্দেশ্যে গমন করেন। তাঁর এই প্রায় পঞ্চদশবর্ষব্যাপী পরিভ্রমণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় তিনি ছিলেন নালন্দায়। 
যাবার সময় তিনি বহু বৌদ্ধ পুঁথি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর নিয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধের দেহাবশেষ কণিকা,একটি হিরণ্যময় বৌদ্ধমূর্তি ,একটি চন্দনকাষ্ঠ-নির্মিত বুদ্ধমূর্তি ,একটি বুদ্ধের তথাগত মূর্তি ,সূত্র -ভাষণরত  রৌপ্যময় বুদ্ধমূর্তি ,নগ্রহার ত্যাগ সময়কালীন বুদ্ধমূর্তি এবং বৈশালীতে উপদেশক বুদ্ধমূর্তি।এইগুলি এবং প্রায় পোনে সাতশো পুঁথির বিশাল সম্ভার নিয়ে যেতে তাঁর ২০ টি ঘোড়ার অবশ্যক হয়েছিল। ভারত ভ্রমণকালে তিনি সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত করেন। দেশে ফিরে সংস্কৃত পুঁথিগুলির চীনা অনুবাদে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। এর মধ্যে ভ্রমণ বিবরণী সি-ইউ-কি রচনা করে তিনি ৬৪৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাটের কাছে পাঠিয়ে দেন। ৬৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়।

Friday, July 28, 2017

Visnusharma and Panchatantra

বিষ্ণুশর্মা ও পঞ্চতন্ত্র  


ভারতীয় সাহিত্যে বিষ্ণুশর্মা ও পঞ্চতন্ত্রের নাম সর্বজনবিদিত।দক্ষিণ ভারতে মহিলারোপ্য নামে একটি নগর ছিল। সেখানে অমরশক্তি নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর তিন ছেলে বসুশক্তি,উগ্রশক্তি আর অনেকশক্তি। তিনটিই মহামূর্খ ; লেখাপড়া তাদের মাথায় একদম ঢোকে না। রাজা বড় চিন্তিত হয়ে পড়লেন ,মন্ত্রীকে ডেকে বললেন ,''এর একটা বিহিত তো না করলে নয় !''
মন্ত্রী তখনি রাজ্যের সমস্ত পন্ডিতদের ডেকে পাঠালেন। পন্ডিতরা সব শুনে বললেন,''আগে ১২ বছর ধরে ব্যাকরণ মুখস্থ করতে হবে ;তারপর মনু ,চাণক্য,বাৎস্যায়ন,ধর্মশাস্ত্র,অর্থশাস্ত্ৰ ,রাজনীতি প্রভৃতি শেষ করতে আরো বেশ কয়েকবছর লাগবে।''
কথাটা রাজার মনঃপুত হলো না। পন্ডিতদের মধ্যে একজন ছিলেন বিষ্ণু শর্মা। রাজা তাঁকে বললেন,-''আমার ছেলে ৩ টিকে অল্পদিনে সর্বশাস্ত্রে সুপন্ডিত করে দিন। আমি আপনাকে ১০০ টি গ্রাম প্রণামী দেব।''
বিষ্ণুশর্মার বয়স হয়েছে ৮০ বছর। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে ,গায়ের চামড়া হয়ে গেছে শিথিল। কিন্তু মনটি তাঁর তেমনি সতেজ। তিনি হেসে বললেন ,''আমার আশি বছর বয়েস,শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় ক্রমে ক্রমে শক্তি হারাচ্ছে। এখন আর অর্থে আমার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া আমি বিদ্যা বিক্রি করি না,-১০০ টি  গ্রাম দিলেও না। তবে আপনার ছেলে কটিকে আমার হাতে ছেড়ে দিন। আমি কথা দিচ্ছি,ছয় মাসের মধ্যে রাজপুত্রদের সর্বশাস্ত্রে পন্ডিত করে তুলবো। যদি না পারি,তবে নিজের নাম ত্যাগ করবো।''
বিষ্ণুশর্মা রাজপুত্রদের শেখাবার জন্য কতকগুলি গল্প রচনা করলেন আর সেই সব ছোট ছোট গল্পের ভিতর দিয়ে সমস্ত শাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্রের সার কথা ছয়মাসে রাজপুত্রদের পড়িয়ে দিলেন। এই গল্পগুলি হচ্ছে পঞ্চতন্ত্র। এই পঞ্চতন্ত্র বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সম্পদ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর যেকোনো একটি গল্প পড়লেই বিষ্ণুশর্মার অসাধারণ প্রতিভার কথা বোঝা যায়। 
পঞ্চতন্ত্রের  একটি গল্প : ধর্মবুদ্ধি-পাপবুদ্ধি-কথা 
দুই বন্ধু। গলায় গলায় ভাব। একজন খুব ধার্মিক ,আর একজন সর্বদাই দুষ্ট বুদ্ধি। ধার্মিককে লোকে বলতো ধর্মবুদ্ধি,আর দুষ্টের নাম দিয়েছিলো পাপবুদ্ধি। 
দুই বন্ধু বিদেশে গেলো ব্যবসা করতে। কিছুদিনের মধ্যে দুজনে মিলে অনেক ধনসম্পদ রোজগার করলো।তারপর সেসব ধন নিয়ে ফিরলো দেশে। 
একটি বন পার হয়েই তাদের গ্রাম। বনের মধ্যে এক গাছতলায় বসে পাপবুদ্ধি বললো ,''এতো টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা ঠিক হবে না ,বাড়িতে ডাকাত পড়বে,আত্মীয়রাও হিংসা করবে। কিছু টাকা সঙ্গে রাখি আর বাকিটা এই গাছতলায় পুঁতে রেখে যাই। যেমন যেমন দরকার হবে,এসে তুলে নেবো। ''
তাই করা হলো। 
দিন যায়। 
একদিন পাপবুদ্ধি এসে বললো "আমার টাকার দরকার। চল ,গাছতলা থেকে কিছু তুলে নিয়ে আসি।''
ধর্মবুদ্ধি বললো,''আমারও দরকার,চলো।''
দুই বন্ধু বনে এলো। গাছতলা খুঁড়লো ,কিন্তু টাকা তো নেই!অত টাকা কোথায় গেল?
পাপবুদ্ধি বললো ,''আমরা দুজন ছাড়া এই টাকার কথা তো কেউ জানে না !আমি যখন নিই নি ,তখন তুমিই নিয়েছ।''দুই বন্ধুতে ঝগড়া বেধে গেলো। শেষে দুজন গেলো বিচার-সভায়।বিচারকেরা বললেন ,''কোনো সাক্ষী আছে ?''পাপবুদ্ধি বললো,''বনদেবতাকে সাক্ষী মানতে পারি। তিনি তো সবই জানেন।''বেশ ,তা হলে বনদেবতারি সাক্ষ্য নেওয়া হোক। 
পাপবুদ্ধি বাড়ি এসে তার বাবাকে সব কথা বললো। আরোও বললো ''টাকাগুলি  সেই চুরি করেছে। ধর্মবুদ্ধিকে সে এক পয়সাও দেবে না। এখন তুমি এক কাজ করো-।''তার বাবাও তেমনি। বললেন কি কাজ ?
-''সেই শমিগাছটাই একটা কোটর আছে। সেই কোটরের মধ্যে তুমি লুকিয়ে থাকবে। বিচারকদের সঙ্গে আমরা গাছতলায় যাবো। গাছকে জিজ্ঞাসা করবো কে চোর? তুমি তখন বলবে -ধর্মবুদ্ধি চোর।''
পরদিন সকালে বিচারকেরা সদলবলে এলেন বনে। সঙ্গে ধর্মবুদ্ধি আর পাপবুদ্ধি। সবাই সেই শমীগাছের সামনে এসে দাড়ালেন।প্রশ্ন করা হলো ,''হে বনের অধিষ্ঠাত্রী-দেবতা ,আপনি বলুন ,কে এই টাকা চুরি করেছে।''
নিস্তব্ধ বন কাঁপিয়ে হটাৎ গাছের ভিতর থেকে সাড়া এলো -''চুরি করেছে ধর্মবুদ্ধি। ''
অকাট্য প্রমান। বিচারকেরা বললেন ,ধর্মবুদ্ধি এর সাজা হবে। কি সাজা দেওয়া যায় তাই নিয়ে তাঁরা আলোচনা শুরু করলেন। 
এই অবসরে ধর্মবুদ্ধি কতকগুলো কাঠকুটো কুড়িয়ে এনে সেই শমীগাছের গুঁড়িতে জড়ো করলো। তারপর দিলো তাতে আগুন ধরিয়ে। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। আর যায় কোথা!পরোক্ষনেই আর্তনাদ করতে করতে গাছের কোটর থেকে পাপবুদ্ধিয়ের বাবা বেড়িয়ে এলো। শরীরের অর্ধেকটা তার তখন ঝলসে গেছে,চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। পাপবুদ্ধিয়ের বাবা খুলে বললো সব কথা। ধর্মবুদ্ধিকে তারিফ করে বিচারকেরা পাপবুদ্ধির উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। 
এই গল্প থেকে বোঝা যায় যে ,কোনো ব্যাপারেই শেষ পর্যন্ত দুস্টু বুদ্ধি সফল হয় না। ধর্ম চিরকাল জয়ী হয়।(সংগৃহীত)