অ্যাকোয়ারিয়াম
ল্যাটিন ভাষার অ্যাকোয়া (অর্থ জল) এবং আরিয়াম (অর্থ সম্পর্কযুক্ত একটি জায়গা) মিলে অ্যাকোয়ারিয়াম হয়েছে।
অ্যাকোয়ারিয়াম (ইংরেজি: Aquarium) জলচর প্রাণী তথা মাছ সংরক্ষণ করার বিশেষ ধরণের জায়গা হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও, যে-সকল প্রাণী জলে বসবাস করে সেগুলোও এ জায়গায় সৌখিন মানুষ কর্তৃক শখের বশবর্তী হয়ে সংরক্ষিত হয়ে থাকে। বাড়ী, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি স্থানের এক পার্শ্বে অ্যাকোয়ারিয়াম রাখা বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় শখে পরিণত হয়েছে। যিনি অ্যাকোয়ারিয়াম রক্ষণাবেক্ষন করেন, তিনি অ্যাকোয়ারিস্ট নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। তিনি অত্যন্ত যত্নসহকারে পাত্রে সংরক্ষিত মাছগুলোকে প্রাকৃতিক জীবনপ্রণালীর ন্যায় অভিযোজন উপযোগী একই ধরণের পরিবেশে রাখতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হন। একই ধরণের পরিবেশ বলতে পানির গুণগতমান, প্রয়োজনীয় আলোক সরবরাহ ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত খাদ্যের সংস্থান এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বৈশিষ্ট্যাবলী:
সাধারণতঃ এর আবরণ কাচের হয়। কিংবা খুবই শক্ত ও মজবুত আকৃতির এক্রিলেট পলিমার দিয়ে তৈরী। ঘণকাকৃতি অ্যাকোয়ারিয়াকে ফিস ট্যাঙ্ক বা ট্যাঙ্ক বলে। গোলাকৃতি বোলের তৈরী অ্যাকোয়ারিয়াম ফিস বোলস নামে পরিচিত। কমপক্ষে এর এক পার্শ্বে স্বচ্ছ আবরণ থাকে। একটি অ্যাকোয়ারিয়াম ছোট্ট পানির ট্যাঙ্ক থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ভবন কিংবা বৃহৎ ধরণের ট্যাংক আকৃতির হতে পারে। অ্যাকোয়ারিস্ট এর মালিকানাস্বত্ত্ব হওয়ায় নির্দিষ্ট স্থান থেকে জীবিত মাছ ক্রয় কিংবা সংগ্রহ করে এতে সংরক্ষণ করেন। বিশেষ ধরণের পানির উপযুক্ততা ও গুণগতমান এবং অন্যান্য বৈশিষ্টপূর্ণ উপাদান বাড়ি উপযোগী অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য প্রয়োজন পড়ে।তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে অ্যাকোয়ারিয়ামের শ্রেণীবিন্যাস করার প্রয়োজন পড়ে। অনেক অ্যাকোয়ারিস্টের প্রথম পছন্দ হিসেবে রয়েছে গ্রীষ্মকালীন অ্যাকোয়ারিয়াম বা ট্রপিক্যাল অ্যাকোয়ারিয়াম। কেননা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রাপ্ত মাছের রঙ বৈচিত্র্যপূর্ণ ও মনোমুগ্ধকর। অন্যদিকে কোল্ডওয়াটার অ্যাকোয়ারিয়ামের জনপ্রিয়তা থাকলেও এর জন্য শুধুমাত্র গোল্ডফিসের জন্য সীমাবদ্ধ।লবণাক্তের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে অ্যাকোয়ারিয়ামকে শ্রেণীবিন্যাস করা যায়। স্বাদুপানির অ্যাকোয়ারিয়া বা ফ্রেসওয়াটার অ্যাকোয়ারিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয়; কেননা এতে খরচের পরিমাণ খুবই সামান্য। জটিল উপাদানসহ নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ এবং রক্ষণাবেক্ষনহেতু সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়া বা ম্যারিন অ্যাকোয়ারিয়া বেশ ব্যয়বহুল। মেরুদণ্ডহীন প্রাণী ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, সামুদ্রিক এবং স্বাদু পানি - উভয়ের সংমিশ্রণে ব্র্যাকিশ ওয়াটার অ্যাকোয়ারিয়ায় মৎস্য সংরক্ষণ করা হয়।
নির্মাণ উপকরণ:
অধিকাংশ অ্যাকোয়ারিয়াম কাচের পাত ও সিলিকন সহযোগে তৈরী করা হয়। উপর ও নীচের অংশকে যুক্ত করতে প্লাস্টিকের ফ্রেম ব্যবহৃত হয়। আদর্শ আকারের অ্যাকোয়ারিয়াম ১০০০ লিটার বা ২৬০ ইউএস গ্যালনের হতে পারে। সাধারণতঃ কাচের পদার্থ ভেঙ্গে যাবার পূর্বে ফাটল ধরে। তবে সচরাচর নীচের অংশটুকু প্রথমে ভেঙ্গে পড়ে।
উদ্দেশ্যাবলী:
পর্যটন শিল্পের প্রসারে ও পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য বৃহদাকৃতি, জনসাধারণের উপযোগী অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরী করা হয়ে থাকে। সেখানে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন রং-বেরংয়ের মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী (যেমন: হাঙ্গর, ডলফিন, কচ্ছপ, শামুক, ঝিনুক, চিংড়ি ইত্যাদি) বৃহৎ জলাধারে রাখা হয়। এছাড়াও, বিপণ্ন ও প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ, উদ্ভিদ, জলজ প্রাণীকে রক্ষার লক্ষ্যে অ্যাকোয়ারিয়াম নির্মাণ করা হয়। এ ধরণের অ্যাকোয়ারিয়াম রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনী অ্যাকোয়ারিয়ামে।
পাবলিক অ্যাকোয়ারিয়াম মূলতঃ সাধারণ জনগণের কাছে প্রদর্শনের জন্য তৈরী করা হয়। এতে বৃহৎ আকারের প্রজাতি কিংবা পরিবেশে প্রাপ্ত বৃহত্তম প্রাণী থাকতে পারে যা বাড়ীর অ্যাকোয়ারিয়ামে সংরক্ষণ করা মোটেই সম্ভবপর নয়। জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়াম বিশ্বের বৃহত্তম তলদেশ উপযোগী সুড়ঙ্গ অ্যাকোয়ারিয়াম হিসেবে স্বীকৃত। একমাত্র এখানেই রয়েছে ৬,৩০০,০০০ ইউএস গ্যালন বা ২৪,০০০ কিউবিক মিটার পানি।
No comments:
Post a Comment