Cross-Column

Thursday, November 16, 2017

চার্লি চ্যাপলিন

সিনেমা জগতের একটি সাড়া জাগানো নাম চার্লি চ্যাপলিন!

সিনেমার কথা এলে সবার আগে যার কথা মনে পড়ে তার নাম চ্যাপলিন-"চার্লি চ্যাপলিন",তিনি ছিলেন একাধারে নায়ক ও পরিচালক। এতো বড়ো শিল্পীর অভিনয় দেখা জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। চ্যাপলিন জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে।জীবিত অবস্থাতেই পেয়েছেন কিংবদন্তী নায়কের মতো খ্যাতি।নির্বাক যুগ থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত একটানা অভিনয় করে গেছেন এই আশ্চর্য অভিনেতা। ২৫ বছর বয়স থেকে যে বিপুল যশগৌরবের অধিকারী হয়েছিলেন,পৃথিবীতে এত কম বয়সে এত সম্মান বোধ হয় কখনো জোটে নি। ছোট্ট খাটো সেই লোকটি ,আগোছালো সেই মানুষটি -ভাগ্য আর মানুষের কাছে বার বার যিনি অপমানিত হয়েছেন,ছবির পর্দায় যখন ভেসে ওঠে তার চেহারা তখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। 
ছেলেবেলায় চার্লি ছিলেন খুবই গরিব। রাস্তায় গান গেয়ে আর নেচে পয়সা রোজগার করতে হতো তাদের। কিন্তু চলচ্চিত্রের গোড়ার দিকে তিনি চলে আসেন আমেরিকায়। এই আমেরিকা হচ্ছে চলচ্চিত্রের পীঠস্থান। আগে যেটা ছিল নিউইয়র্কে পরে উদ্যোক্তারা আস্তে আস্তে চলে আসেন হলিউডে।
চিত্র নির্মাতা কর্নেল সেলিগ।১৯০৮ সালে হলিউড এ এসে তাঁবু ফেললেন। ১৯০৯ সালে এলেন বিলি আন্ডারসন।১৯১০ সালে এলেন গ্রিফিথ। যাই হোক চার্লি প্রথম এ যে ফ্লিম এ অভিনয় করেন তার নাম মেকিং  এ লিভিং।ছবিটি ছিল এক রিলের। প্রদর্শনের মেয়াদ ১০ মিনিট। চার্লি কে দেওয়া হয়েছিল এক জোচ্চোরের পার্ট। নিন্দা,প্রশংসা সব জুটেছিল তার। তারপর নানা ইতিহাস ,নানা চমক ,নানান ঘটনা। 
যে চমক উপন্যাসের থেকে আকর্ষণীয়। চার্লি নিজে পরিচালক হলেন ,অভিনেতা হলেন,ও অভিনেতা তৈরী ও করলেন। এক এক করে চার্লি তুললেন দি ফ্লোর ওয়ার্কার ,দি ভ্যাগাবন্ড ,দি ফায়ারম্যান,দি কিড , দি কাউন্ট ,তুললেন  দি  পনশপ ,বিহাইন্ড দি স্ক্রিন ,দি ইমিগ্রেশন ,তুললেন দি কিওর,দি এডভেঞ্চার।
চার্লির প্রথম মহৎ ছবি বলে যেটি পরিচিত ,সেটির নাম 'এ ডগস লাইফ ',এরমধ্যে মান সম্মান অর্থ প্রতিপত্তি সবই এসেছে চার্লির। তারপর কত ছবিই না তুললেন তিনি -গোল্ড রাশ ,সিটিলাইট,মর্ডান টাইমস ,মসিয়ে ভার্দু। হিটলারকে বিদ্রুপ করে তার ছবি -ডি গ্রেট ডিক্টেটর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই তৈরি হয়েছিল। আশ্চর্য    নকল করেছিলেন তিনি হিটলার কে এই ছবিতে আর আশ্চর্য তার ধারণার মতো এই ভাবেই হিটলারের পতন ঘটলো।লাইম লাইট চার্লির শেষ দিকের তোলা ছবি। এটিতে তিনি অন্য  চেহারায় নেমেছেন।অভিনয় এ চার্লি আমাদের হাসিয়েছে যেমন কাঁদিয়েছে ও তেমনি। তার অভিনয় দেখতে হাসতে হাসতে ভাবতে হয় আর ভাবতে ভাবতে হাসতে হয়। চার্লি কে দেখে অনেকেই পুরো মাপের হাসি এর ছবি তুলতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু এমনটা সফল হতে পারেনি। অবশ্য লয়েড আর বাস্টার কীটন লরেল হার্ডি জুটি অনেকটা সাফল্য লাভ করতে পেরেছিলেন।আর একজন উল্লেখযোগ্য কৌতুক অভিনেতার নাম না বললেই নয়। ইনি হলেন ম্যাক সেনেট।
৮০ বছর বয়েস  এ চার্লি ছিলেন সমান কর্মক্ষম। জন্মেছিলেন চলচ্চিত্রের শিল্পের জন্মকালে ই। ছায়াছবি এর সাথে তার যোগ ছিল নাড়ির।তাই চলচ্চিত্রের কথা এলেই চার্লি চ্যাপলিন এর কথা সবার আগে মনে আসে। তিনি শুধু অভিনেতা ,পরিচালক ছিলেন না ,লেখক হিসেবে তার খ্যাতি আছে ,নকশার ও স্রষ্ঠা তিনি,অপূর্ব সব নাটক লিখেছেন। সুরোস্রষ্ঠা হিসেবে অসামান্য তিনি। 
শিল্পী হিসেবে চার্লি চ্যাপলিন নোয়েল কাওয়ার্ড কি আইভোর নভেল এর চেয়ে অনেক বড়ো। চার্লি এর সমসাময়িক যে কয়জন প্রতিভাবান শিল্পী কে আমরা চলচ্চিত্রের সাহায্য নিতে দেখেছি তাদের  সকলের চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বড় তিনি। যে ভবঘুরে চরিত্রটির তিনি স্রষ্ঠা,তার মৃত্যু হবে না কোনোদিন। বছরের পর বছর কেটে যাবে ,যুগ এর পর যুগ কিন্তু অক্ষয় অমর হয়ে থাকবে সেই বিরাট বুট জোড়া ,সেই গোল টুপি আর সেই বাঁকানো ছড়ি। চার্লি চ্যাপলিন অমর হয়ে আছেন এই ৩ টি  প্রতীক চিহ্নের মধ্যে।